মাদারীপুরের ২৫০ শয্যার হাসপাতালে নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার মেশিন
নির্মাণের ২ বছরেও চালু হয়নি ভবন
প্রথম নিউজ, মাদারীপুর: মাদারীপুর সদর হাসপাতাল ২৫০ শয্যায় উন্নতিকরণে নির্মাণ করা হয়েছে সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দন ভবন। সেই সঙ্গে কেনা হয়েছে কোটি টাকার যন্ত্রপাতি। তবে দীর্ঘদিন পড়ে থেকে যন্ত্রপাতি নষ্ট হলেও হাসপাতাল চালুর কোনো উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ভেঙে যাচ্ছে নব নির্মিত ভবনের দরজা ও জানালার অংশ।
এদিকে, দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালটি চালুর ব্যাপারে মাদারীপুরের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো আন্দোলন করলেও কোনো লাভ হচ্ছে না। এতে সচেতনমহল, রোগী-স্বজনসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তবে মাদারীপুর স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, জনবল সংকটের কারণে থেমে রয়েছে নতুন ভবনের কার্যক্রম।
মাদারীপুর স্বাস্থ্য বিভাগ সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, রোগীর সেবায় সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ২০১৯ সালে ৩০ কোটি টাকা ব্যয় করে নির্মাণ করা হয় নতুন ভবন। ভবন নির্মাণ শেষে কোটি টাকার যন্ত্রপাতিও কেনা হয়। এর মধ্যে প্রায় তিন কোটি টাকায় কেনা হয় সিটিস্ক্যান মেশিন। এছাড়াও ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন, আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন, আধুনিক জেনারেটরসহ কয়েক কোটি টাকার যন্ত্রপাতি রয়েছে নতুন ভবনে। তবে ব্যবহার না করায় অধিকাংশ যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে। এছাড়া হাসপাতালের দরজা, জানালার কিছু অংশও ভেঙে গেছে। তবুও চালু হয়নি হাসপাতালের নতুন ভবন।
রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সামান্য কিছুতেই যন্ত্রপাতি ও ডাক্তার সঙ্কটের অযুহাত দেখিয়ে রোগীদের ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এতে গরীব রোগীরা বিপদে পড়েন। অথচ হাসপাতালটি চালু হলে এ ধরনের সমস্যা হতো না। মাদারীপুরে কয়েকজন সচেতন ব্যক্তি নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, হাসপাতালটি চালু না হওয়ার পেছনে অদৃশ্য কারণ আছে। তা হলো ক্লিনিক ব্যবসা। মাদারীপুরের কয়েকজন প্রভাবশালীর ক্লিনিক ব্যবসা রয়েছে। তারাই পেছন থেকে প্রভাব খাটিয়ে হাসপাতালটি চালু হতে দিচ্ছে না।
মাদারীপুর শহরের ২নং শকুনি এলাকার নারী নেত্রী সুইটি আক্তার বলেন, হাসপাতালটি চালু হলে মাদারীপুরের সাধারণ মানুষের অনেক উপকার হতো। ২৫০ শয্যা হাসপাতালটি দ্রুত চালুর দাবি জানাই। মাদারীপুর সরকারি কলেজের কলেজছাত্র ও স্বেচ্ছাসেবক কে এম জুবায়ের জাহিদ বলেন, নতুন ভবন চালু না করায় যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে। অপরদিকে, রোগীদের ফরিদপুরে যেতে হচ্ছে। অথচ হাসপাতালটি চালু হলে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চাপও কমবে।
‘নিরাপদ চিকিৎসা চাই’ এর মাদারীপুর জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট মশিউর রহমান পারভেজ বলেন, সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে হাসপাতালটি চালু করা জরুরি। মাদারীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মুনীর আহমদ খান বলেন, বর্ধিত ২৫০ শয্যা হাসপাতালের জন্য দরকার ২৬৬ কর্মকর্তা-কর্মচারি। আছে ১৩৩ জন। তাই জনবল সংকটের কারণে নতুন ভবনে কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না। তবে খুব শিগগিরই আংশিকভাবে ৫০ বেডের কার্যক্রম চালু করা হবে। পরে পর্যায়ক্রমে কার্যক্রম বাড়ানো হবে।
যন্ত্রপাতি নষ্টের বিষয়ে সিভিল সার্জন বলেন, যন্ত্রপাতি পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। বড় ধরনের কোনো সমস্যা হয়নি। মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, সদর হাসপাতালটি ২৫০ শয্যায় বর্ধিত করা হয়েছে। আশা করছি এটি দ্রুত চালু করা সম্ভব হবে।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews