মৃত বাবার চাকরির টাকা ফেরত পেতে প্রতিবন্ধী সন্তান হাইকোর্টে
রিটের শুনানি নিয়ে মৃত ব্যাংকার সরদার আব্দুর রাজ্জাকের বেতন ও ভাতাসহ সমুদয় পাওনা অর্থ দেওয়ার বিষয়ে তার সন্তানদের করা আবেদন নিষ্পত্তি করতে রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: রূপালী ব্যাংক খুলনার গড়ইখালী হাট শাখার সাবেক সিনিয়র অফিসার (ব্যবস্থাপক) সরদার আব্দুর রাজ্জাকের (মৃত) যাবতীয় পাওনার (পেনশন, গ্রাচুয়িটি, প্রভিডেন্ড ফান্ড) বিষয়ে গত বছরের ৬ নভেম্বর ব্যাংকটির চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেন তার সন্তানরা। ওই আবেদনের পরও কোনও ধরনের পদক্ষেপ নেয়নি রূপালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। সে কারণে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন আব্দুর রাজ্জাকের শারীরিক প্রতিবন্ধী ছেলে সরদার আসাদুজ্জামান।
রিটের শুনানি নিয়ে মৃত ব্যাংকার সরদার আব্দুর রাজ্জাকের বেতন ও ভাতাসহ সমুদয় পাওনা অর্থ দেওয়ার বিষয়ে তার সন্তানদের করা আবেদন নিষ্পত্তি করতে রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তার বকেয়া ও পাওনা অর্থ কেন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে। সোমবার (২২ মে) বিচারপতি মাহমুদুল হক ও বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদারের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মো. কাজল রশিদ বিশ্বাস। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল কে এম মাসুদ রুমী। এ ব্যাপারে আইনজীবী কাজল রশিদ বিশ্বাস জানান, একটি অভিযোগে রূপালী ব্যাংক খুলনা গড়ইখালী হাট শাখার সাবেক সিনিয়র অফিসার (ব্যবস্থাপক) সরদার আব্দুর রাজ্জাককে ২০০৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। আব্দুর রাজ্জাক স্থানীয় বড়দল শাখায় (বর্তমান বুধহাটা শাখা) কর্মরত থাকা অবস্থায় একটি অনিয়মের অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত হন।
অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আব্দুর রাজ্জাককে সাময়িক বরখাস্ত করেন রূপালী ব্যাংক ঢাকার উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিসিপ্লিন বিভাগ)। সেই অনিয়মের অভিযোগে আব্দুর রাজ্জাকসহ তিন জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এরপর ২০১০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর আব্দুর রাজ্জাককে মামলায় নির্দোষ ঘোষণা করে রায় দেন খুলনা বিভাগীয় স্পেশাল জজ। এরপর সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার ও চাকরিতে পুনর্বহাল এবং বকেয়া পাওনাদি চেয়ে রূপালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন আব্দুর রাজ্জাক। এভাবে বহুবার আবেদন করা সত্ত্বেও তা বিবেচনা করেনি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট দীর্ঘদিন রোগ ভোগের পর আব্দুর রাজ্জাক মারা যান।
এরপর রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান বরাবর বাবার যাবতীয় (পেনশন, গ্রাচুয়িটি, প্রভিডেন্ট ফান্ড) পাওনা পরিশোধের জন্য আবেদন করেন আব্দুর রাজ্জাকের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছেলে সরদার আসাদুজ্জামান (৩২)। ২০২২ সালের ৬ নভেম্বর রূপালী ব্যাংক চেয়ারম্যান বরাবর করা ওই আবেদনে আব্দুর রাজ্জাকের বকেয়া বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য পাওনা চাওয়া হয়। এই আবেদনের পর রূপালী ব্যাংক খুলনার জোনাল ম্যানেজার (উপ-মহাব্যবস্থাপক) বরাবর একটি চিঠি লেখেন গড়ইখালী শাখার ব্যবস্থাপক। এসব বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন আব্দুর রাজ্জাকের তিন সন্তান।
আজ (সোমবার) শুনানি শেষে রূপালী ব্যাংক চেয়ারম্যান বরাবর আব্দুর রাজ্জাকের তিন সন্তানের করা আবেদন এবং খুলনার জোনাল ম্যানেজারের (উপ মহাব্যবস্থাপক) কাছে গড়ইখালী শাখা ব্যবস্থাপকের করা চিঠি অবিলম্বে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আব্দুর রাজ্জাকের তৃতীয় সন্তান সরদার আসাদুজ্জামান। তার বড় দুই বোন রয়েছে। বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে। সরদার আসাদুজ্জামান শারীরিক প্রতিবন্ধী। তিনি অনেক কষ্টে সংসার পরিচালনা করছেন।