ভোট গ্রামে, প্রার্থীদের ভিড় ঢাকায়
মনোনয়ন নিশ্চিত করার তদবিরে ঢাকার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ঘুরে বেড়াচ্ছেন প্রার্থীরা

প্রথম নিউজ, ঢাকা: স্থানীয় সরকারের অধীনে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী অধিকাংশ প্রার্থীই এখন ঢাকায়। ভোট গ্রামে হলেও নেতাকর্মীদের ভিড় বেড়েছে ঢাকায়। মনোনয়ন নিশ্চিত করার তদবিরে ঢাকার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ঘুরে বেড়াচ্ছেন প্রার্থীরা। সবার উদ্দেশ্য একটাই নৌকা প্রতীক নেওয়া। আর এই উদ্দেশ্যে কখনও নেতার বাসায়, কখনও আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নেতাদের ব্যক্তিগত কার্যালয় হন্যে হয়ে ঘুরেই চলেছেন তারা। লক্ষ্য একটাই কেনোভাবেই যেন ফসকে না যায় নৌকার টিকিট।
আজ বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) আওয়ামী লীগ স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের সভা। তিনদিনব্যাপী এই সভায় মনোনয়ন সংগ্রহ করা প্রার্থীদের যাচাই-বাছাই হবে। তারপর দক্ষ ও যোগ্য প্রার্থী বেছে নেবে আওয়ামী লীগ। বোর্ড সভায় সভাপতি শেখ হাসিনার সামনে যাতে বোর্ড সদস্যরা প্রার্থীকে নিয়ে কথা বলেন— এই নিশ্চয়তা পেতে চান মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। বুধবার (৬ অক্টোবর) মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য অন্তত চার জন নেতার বাসার নিচে দেখা গেছে কয়েকশ লোকের ভিড়।
আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের ধানমণ্ডির ৯/এ রোডের বাসায় সকাল সাড়ে ১০টায় গিয়ে দেখা যায়, বাসার সামনে অন্তত একশ লোক দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে জড়ো হয়েছেন। সবার হাতে সাদা অথবা বাদামি রঙের খামে ভরা নিজের জীবনবৃত্তান্ত। সেখানে উপস্থিত সবাই আওয়ামী লীগের এই নেতার সঙ্গে দেখা করার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন।
পটুয়াখালী দশমিনা সদর ইউনিয়ন থেকে গৌতম দে নামে একজন মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে জাহাঙ্গীর কবির নানকের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। গৌতম দে বলেন, আমি দশমিনা থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। নৌকার মনোনয়ন নিশ্চিত করতে চাই, তাই এখানে কথা বলতে এসেছি। গতবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাই। এলাকায় কিছু নেতার বিরোধিতায় জয়ী হতে পারিনি।
এবার তার নাম ২ নম্বরে নাম এসেছে। নিজের রাজনৈতিক ত্যাগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এখানে আসার মূল লক্ষ্য নেতাকে সালাম করা, অনুরোধ করা। আমার মনোনয়ন যেন নিশ্চিত হয় সেটা নিশ্চিত করা।
একই চিত্র দেখা গেছে আওয়ামী লীগের অপর সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও মনোনয়ন বোর্ড সদস্য আব্দুর রহমানের পরীবাগের বাসায়। শতাধিক লোকের অপেক্ষা দেখা যায়। সবার উদ্দেশ্য একটাই, দেখা করা, সালাম করা ও মনোনয়ন নিশ্চিত করে দেওয়ার অনুরোধ করা। বগুড়ার সুঘাটা ইউনিয়ন থেকে এসেছেন মনিরুজ্জামান। সুঘাটা ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান জানান, নৌকার মনোনয়ন তারই প্রাপ্য। মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা কী মনোনয়ন দিতে পারে এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মনিরুজ্জামান বলেন, ‘এলাকায় খবর পেয়েছি- ওনারা চাইলে দিতে পারেন। ’
শেরপুর জেলার একটি ইউনিয়নের মনোনয়ন প্রত্যাশী নূর আলম, গতবারের আগেরবার চেয়ারম্যান ছিলেনও। তিনি বলেন, গতবার স্থানীয় সংসদ সদস্য আতিকুর রহমান আতিক আমাকে বসিয়ে দিয়ে তার ভাইকে মনোনয়ন দিয়ে চেয়ারম্যান করেছেন। আমাকে এবার মনোনয়ন দেবেন জানালেও বাদ দিয়েছেন। তবুও মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছি। সংসদ সদস্য আতিক অন্যায়ভাবে আমার বিরোধিতা করছেন। এটা বোর্ড সদস্যদের অবহিত করতে চাই। আমি এলাকায় জনপ্রিয়। মনোনয়ন পেলে আমি নিশ্চিতভাবে জয়ী হবো।
স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যদের বাসা বাড়ি ও অফিসে ভিড় একটু বেশী হলেও কেন্দ্রীয় অন্য নেতাদের বাসা-অফিসেও ভিড় দেখা যায়। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, এলাকা থেকে নেতাকর্মী ঢাকায় আসেন, তারা তাদের নানান অভাব-অভিযোগের বিষয়ে জানান, আমরা শুনি। এখন স্থানীয় সরকার নির্বাচন হওয়া নেতাকর্মীরা ঢাকামুখী বেশি।
জানতে চাইলে অপর সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ঢাকায় আসেন, আমরাও সাক্ষাৎ করি। তবে মনোনয়ন নিশ্চিত করা আমাদের কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। যার রাজনৈতিক ত্যাগ-যোগ্যতা ও দক্ষতা রয়েছে তিনি নিশ্চয়ই মনোনয়ন পাবেন।
এদিকে বিভিন্ন নেতাদের বাসা ও ব্যক্তিগত অফিস ঘুরে দেখা গেছে, মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য থাকা নেতাদের ব্যক্তিগত সহকারীদের কদর এখন বেশি। নেতাদের সঙ্গে সহজে যোগাযোগ না হওয়া ব্যক্তিগত সহকারীদের দ্বারস্থ হয়ে সাক্ষাৎ ও কথা বলার সুযোগ মিলছে।
নেতাদের সাক্ষাৎ না পেলে ব্যক্তিগত সহকারীদের সঙ্গে হলেও সাক্ষাৎ করে নিজের বায়োডাটা তুলে দিতে পারলেও তৃপ্ত মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। তাই রাজনৈতিক ত্যাগের বৃত্তান্ত লিখে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, সুযোগ পেলেই তুলে দিচ্ছেন নেতাদের হাতে।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews