ব্যাংকখেকোরা শাস্তি না পেলে দেশ আর ঠিক হবে না: সালমা ইসলাম

বুধবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এসব কথা বলেন।

ব্যাংকখেকোরা শাস্তি না পেলে দেশ আর ঠিক হবে না: সালমা ইসলাম

প্রথম নিউজ, অনলাইন: ব্যাংক লুটেরা, ঋণখেলাপি ও টাকা পাচারকারীদের সামাজিকভাবে বয়কট করার আহ্বান জানিয়েছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি। তিনি বলেছেন, সময় এসেছে-ওদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। জাতীয় সংসদে এমন আইন পাশ করতে হবে যাতে তারা বিমানে উঠতে না পারে, ট্রেনের টিকিট না পায়। কোনো দামি গাড়িতে চড়া তো দূরের কথা-যেন কোনো রিকশাওয়ালা তাদের নিতে ঘৃণা প্রকাশ করে। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিশেষ অনুরোধ করব, রাঘববোয়াল ঋণখেলাপি এবং অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হোক। একই সঙ্গে ওদের বাসাবাড়ির সব ধরনের সার্ভিস বন্ধ করে দেওয়া হোক। বিশেষ করে ব্যাংকখেকোদের যদি আমরা আগে শাস্তি দিতে না পারি, তাহলে দেশ আর ঠিক হবে না।

বুধবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ সময় সভাপতিত্ব করেন। আলোচনায় অংশ নিয়ে অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক সংকট, সরকারের উন্নয়ন ও অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি চলমান ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়েও কথা বলেন। এ সময় তিনি আরও বলেন, করোনাকালীন কঠিন সংকট আমাদের প্রধানমন্ত্রী সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারলেও এখন তাকে বেশি হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর জন্য দায়ী একশ্রেণির দুর্নীতিগ্রস্ত ও অর্থ পাচারকারী ব্যাংক লুটেরা। যারা বিভিন্ন সেক্টরে দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে দেশটাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। যদিও সরকার এখন এসব রাঘববোয়ালকে শক্ত হাতে ধরা শুরু করেছে। এজন্য আমি প্রধানমন্ত্রীকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই। 

অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম বলেন, ঋণখেলাপি এবং নানাভাবে ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎকারীদের বিরুদ্ধে এই মহান সংসদে এ যাবৎ কম কথা হয়নি। বলতে বলতে সবাই এখন ক্লান্ত। কিন্তু খেলাপিরা ক্লান্ত হয়নি। মাঝেমধ্যে চুনোপুঁটিদের শাস্তি হলেও প্রভাবশালী খেলাপিরা আছেন বহাল তবিয়তে। বিশেষ করে প্রভাবশালীরা প্রভাব খাটিয়ে দফায় দফায় ঋণ পুনর্গঠন করে নেন। ফলে খেলাপির খাতায় তাদের নাম আর ওঠে না। এছাড়া নামে-বেনামে কারা মোটা অঙ্কের ঋণ নিয়ে কীভাবে কোন পদ্ধতিতে বিদেশে অর্থ পাচার করেছেন, তা অনেকেই না জানলেও কিছু লোক তো জানেন। কয়েকটি ব্যাংকের একশ্রেণির পরিচালকরা কীভাবে এসব ঋণের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন-সেটিও তদন্তের দাবি রাখে। এজন্য ব্যাংকখেকোদের যদি আমরা আগে শাস্তি দিতে না পারি, তাহলে দেশ আর ঠিক হবে না।

তিনি বলেন, কারা ঋণখেলাপি ও অর্থ পাচারকারী, তা সরকারের ভালো করে জানা আছে। আওয়ামী লীগ সরকার খুবই চৌকশ। তারা দুর্নীতিবাজ, ঋণখেলাপি ও অর্থ পাচারকারীদের চেনে না-এ কথা কেউ বিশ্বাস করবে না। এছাড়া সমাজে যত ধরনের সিন্ডিকেটসহ বাজিকরদের জন্ম হয়েছে, তাদের হাঁকডাক ও দম্ভ চিরতরে বন্ধ করে দিতে হবে। আর সরকার চাইলে সব পারে। এক রাতেই এসব ডাকাতকে লকআপে ঢুকাতে পারে। আমরা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার এমন সাহসী উদ্যোগ ও সিদ্ধান্ত দেখার অপেক্ষায় রইলাম। এ কঠিন কাজটা তিনি ছাড়া আর কেউ করতে পারবে না।

ব্যবসা-বাণিজ্যের নানা প্রতিকূলতার চিত্র তুলে ধরে জাতীয় পার্টির এই সংসদ-সদস্য বলেন, আমাদের ফ্যাক্টরি বা শিল্পপ্রতিষ্ঠান চালাতে প্রায় সবকিছু আমদানি করতে হয়। বেশির ভাগ শিল্পের কাঁচামাল বিদেশ থেকে আনতে হয়। সেখানে ডলারের দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় এখন শিল্পের উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। কিন্তু এখন যদি সরকার আয় বাড়াতে সব চাপ দেয় শিল্পের ওপর, তাহলে তা হবে চরম জুলুম। বরং আমি মনে করি, রপ্তানিমুখী শিল্পে ভ্যাট-ট্যাক্স আরও কমাতে হবে। বিশেষ করে যেসব দেশীয় শিল্প ভালো পারফর্ম করছে, তাদের নানাভাবে সাপোর্ট দিতে হবে। প্রয়োজনে ওইসব বিদেশি পণ্য আমদানি বন্ধ করে দিতে হবে। আমাদের পার্শ্ববর্তী বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারত কিন্তু দীর্ঘদিন বিদেশি পণ্য বর্জন করেছে। নিজেরা নিজেদের পণ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। আমরা এ ধরনের বৈপ্লবিক পলিসি নিয়ে দেশকে নতুন এক উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারি।