বিএনপির গণঅবস্থান, চার জেলায় হামলা-গুলি

সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দাবি আদায়ে গতকাল শনিবার দেশজুড়ে গণঅবস্থান পালন করেছে বিএনপি। কর্মসূচি পালনকালে নাটোর, রাজশাহী, খুলনা ও পিরোজপুরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং আওয়ামী লীগের লোকেরা হামলা ও গুলি করেছে। এতে গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৫৬ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আর রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদসহ কমপক্ষে ৩৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এদিকে জামালপুরে নেতাকর্মী আটকের পর কর্মসূচি বাতিল, কিশোরগঞ্জে মিছিল ঠেকাতে পুলিশের গুলিবর্ষণ ও সিলেটে বাধার কারণে ভিন্ন স্থানে কর্মসূচি হয়েছে।

বিএনপির গণঅবস্থান, চার জেলায় হামলা-গুলি
নাটোরে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের হামলা-ছবি সংগৃহীত

প্রথম নিউজ ডেস্ক: সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দাবি আদায়ে গতকাল শনিবার দেশজুড়ে গণঅবস্থান পালন করেছে বিএনপি। কর্মসূচি পালনকালে নাটোর, রাজশাহী, খুলনা ও পিরোজপুরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং আওয়ামী লীগের লোকেরা হামলা ও গুলি করেছে। এতে গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৫৬ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আর রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদসহ কমপক্ষে ৩৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এদিকে জামালপুরে নেতাকর্মী আটকের পর কর্মসূচি বাতিল, কিশোরগঞ্জে মিছিল ঠেকাতে পুলিশের গুলিবর্ষণ ও সিলেটে বাধার কারণে ভিন্ন স্থানে কর্মসূচি হয়েছে।

নাটোর শহরের আলাইপুরের দলীয় কার্যালয়ের সামনে দুপুরে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস দুলু বক্তব্য দেওয়ার সময় কর্মসূচিতে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী হামলা চালায়। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দও শোনা যায়। সংঘর্ষে যুবদলের শরিফুল ইসলাম শরিফ, শৈবাল ও রনি ব্যাপারী গুলিবিদ্ধ হন। আর জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চুসহ অন্তত ৩০ জন আহত হন। গুরুতর অবস্থায় শরিফকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতা উজ্জল হোসেন সায়েম ও যুবলীগ নেতা রুহুল আমিন বিপ্লবসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে দাবি দলটির।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরে পৌর আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয় থেকে মিছিল নিয়ে শহরের মুসলিম ইনস্টিটিউট পেরিয়ে জেলা বিএনপি কার্যালয়ের দিকে যায়। জেলা বিএনপির কার্যালয়ের অদূরে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম শাহীনের নেতৃত্বে একটি মিছিল পুলিশি বাধা অতিক্রম করে বিএনপি কার্যালয়ের দিকে যায় এবং কার্যালয় লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ে মারে। বিএনপি কার্যালয়ের ছাদ থেকে পাল্টা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এ সময় দু’পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে। এক পর্যায়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজানসহ সিনিয়র কয়েক নেতা ঘটনাস্থলে গিয়ে উত্তেজিত নেতাকর্মীকে ফিরিয়ে আনেন। পরে তাঁরা শান্তি সমাবেশ করেন।
 বিএনপি নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর অভিযোগ, ‘আওয়ামী লীগ নেতা রমজানের নেতৃত্বে পুলিশের উপস্থিতিতে হামলা হয়। এতে গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হন।’ নাটোরের পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান জানান, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যকার সংঘর্ষ চলাকালে দুই রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা গেছে। পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো গুলিবর্ষণ করা হয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাজশাহীতে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশের লাঠিচার্জে অন্তত ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এ সময় রাজশাহী জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সাঈদ চাঁদসহ সাত নেতাকে আটক করে পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেলে মহানগরীর সাগরপাড়া মোড় এলাকায় জেলা বিএনপি বিক্ষোভ করতে গেলে পুলিশ বাধা দেয় ও ব্যানার কেড়ে নিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে রানীবাজারে বিএনপির যুগ্ম সচিব হারুন-অর রশিদের উপস্থিতিতে সমাবেশ চলাকালে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মী চড়াও হলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। হারুন-অর রশীদ বলেন, ‘পুলিশ অন্যায়ভাবে শান্তিপূর্ণ অবস্থানে লাঠিচার্জ করেছে।’

বোয়ালিয়া থানার ওসি সোহরাওয়ার্দী হোসেন জানান, সমাবেশ করতে নিষেধ করলে দলটির নেতাকর্মী চড়াও হয়। পরে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

খুলনায় গতকাল দুপুরে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীর দফায় দফায় সংঘর্ষে ১২ জন আহত হয়েছেন। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে বিএনপির পাঁচ নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ। পুলিশের লাঠিচার্জের সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরীসহ দুই শতাধিক নেতাকর্মী কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় অবস্থান নেন। পরে দলীয় কার্যালয়ে ব্রিফিংয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল বলেন, বিনা উস্কানিতে পুলিশ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা করেছে।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (সাউথ) তাজুল ইসলাম জানান, বিএনপির নেতাকর্মী পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।

পুলিশি বাধার কারণে নির্ধারিত স্থানে কর্মসূচি করতে পারেনি সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি। পরে নগর বিএনপি দরগাহ গেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ প্রাঙ্গণ এবং জেলার নেতারা দক্ষিণ সুরমার চণ্ডীপুলে শুভেচ্ছা কমিউনিটি সেন্টারে কর্মসূচি করে। রংপুর নগরীর গ্র্যান্ড হোটেল মোড়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে কর্মসূচি করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। পরে কার্যালয়ের গলিতে অবস্থান করেন দলটির নেতাকর্মী।

জামালপুরে নাশকতা পরিকল্পনার অভিযোগে শুক্রবার রাত থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত বিএনপির ২১ নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ওয়ারেছ আলী মামুন বলেন, নেতাকর্মী গ্রেপ্তার ও দলীয় কার্যালয় ঘিরে রাখায় অবস্থান কর্মসূচি বাতিল করা হয়।

কিশোরগঞ্জে বিএনপির একটি মিছিল ঠেকাতে গিয়ে পুলিশ দুই রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাক সরকার। পিরোজপুর জেলা বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিতে আসার সময় শহরের পোস্ট অফিস সড়কে ভাণ্ডারিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সোহেল মঞ্জুর সুমনের ওপর হামলা করে ক্ষমতাসীনরা। এ সময় তাঁর গাড়ি ভাঙচুর করা হয় বলে দাবি বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিনের।  

একই দাবিতে ঢাকা জেলা বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। চট্টগ্রাম নগরের কাজির দেউড়ির দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবন মাঠে নগর বিএনপির কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু। গাজীপুরে জেলা বিএনপির অবস্থান কর্মসুচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইসচেয়ারম্যান এডভোকেট আহমদ আজম খান। মহানগর বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা।  ময়মনসিংহ নগরীর হরিকিশোর রায় রোডে দলীয় কার্যালয় সংলগ্ন সড়কে অবস্থান কর্মসূচি করে ময়মনসিংহ উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগর বিএনপি। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স।

মানিকগঞ্জ কোর্ট চত্বরে জেলা বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড়ে দক্ষিণ জেলা ও মহানগর বিএনপির কর্মসূচিতে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ভুঁইগড়ে জেলা বিএনপির অবস্থানে যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মহানগর বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ। বরিশাল নগরীর সদর রোডের দলীয় কার্যালয়ের সামনে যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন।

এ ছাড়া মাগুরা, গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, বগুড়া, মুন্সীগঞ্জ, নওগাঁর রানীনগর, সুনামগঞ্জ, ঝিনাইদহ, লক্ষ্মীপুরসহ বিভিন্ন জেলায় শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান কর্মসূচি করেছে বিএনপি।