ফলন ও দামে খুশি কৃষক ঠাকুরগাঁওয়ে ১৬৩ কোটি টাকার মরিচ উৎপাদন
চলতি মৌসুমে ঠাকুরগাঁওয়ে মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে
প্রথম নিউজ, ঠাকুরগাঁও : চলতি মৌসুমে ঠাকুরগাঁওয়ে মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলার হাট-বাজারগুলোতে উঠতে শুরু করেছে কাঁচা ও পাকা মরিচ। এছাড়া মরিচের ভালো দাম পেয়ে কৃষকের মুখেও ফুটছে হাসি।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) সকালে ঠাকুরগাঁওয়ের রুহিয়া রেলস্টেশন এলাকায় দেখা যায়, লাল মরিচের সমারোহ। রেললাইনের শুকনা মাটিতে পাটির উপরে শুকাতে দেওয়া হয়েছে লাল মরিচ। এ রেলগেট এলাকাতেই প্রতিদিন আশপাশের কয়েকটি এলাকার চাষিরা মরিচ শুকাতে আসেন। এছাড়া এখান থেকেও পাইকারি দরে মরিচ কিনে নেন ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয় ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতিদিন এ স্টেশন এলাকা থেকে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার শুকনা মরিচ কেনাবেচা হয়।
লিয়াকত আলী লাবু নামে এক কৃষক এক বিঘা জমিতে বিন্দু ও বাঁশগাড়া জাতের মরিচ আবাদ করেছেন। ঢাকা পোস্টকে তিনি জানান, নিড়ানি, সেচ ও পরিচর্যা পর্যন্ত তার ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আর ওই জমিতে মরিচ উৎপাদন হয়েছে কমপক্ষে ১০ মণ। এবার প্রতি মণ মরিচ ১৫ হাজার টাকা দরে বিক্রি করে বিঘাপ্রতি প্রায় দেড় লাখ টাকা পাওয়া যাবে বলে তিনি জানান।
একই এলাকার কৃষক শাহীন আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এবার আবহাওয়া ভালো থাকায় মরিচের ফলন আশানুরূপ হয়েছে। দামও পাওয়া যাচ্ছে ভালো। এই রেলগেট এলাকার প্রায় ৭০ ভাগ কৃষকই মরিচ চাষের সঙ্গে যুক্ত। আমি দুই বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছি, এতে এক লাখ টাকা খরচ হলেও লাভ থাকবে প্রায় ৩ লাখ টাকা।
সামেদুল নামে আরেক কৃষক ঢাকা পোস্টকে বলেন, পৌষ মাসে মরিচের চারা রোপণ করার পর থেকে মরিচ পাকা পর্যন্ত প্রায় ছয় মাস সময়ের প্রয়োজন হয়। বিন্দু, সেকা, মাশকারা, মল্লিকাসহ বিভিন্ন জাতের মরিচ চাষ হয় এই এলাকায়।
স্বামীর সঙ্গে মরিচ শুকাতে আসা পাশের এলাকার সাবিনা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ১৫ কাঠা জমিতে মরিচ চাষ করেছি। মরিচের চারা রোপণ, সার-বিষ, রোদে শুকানোসহ সব কাজ নিজেরাই করি। গতবারের তুলনায় এবার অনেক ভালো মরিচ উৎপাদন হয়েছে। এবার মরিচ নষ্ট হয়নি, এছাড়া মরিচের দামও বেশ ভালো। আমরা সবাই এবার অনেক খুশি।
এদিকে, জমি থেকে মরিচ তোলার কাজে শিশু-কিশোরের পাশাপাশি বয়স্ক সদস্যরাও যোগ দিচ্ছেন। তারা প্রতিটি মরিচের ঝুড়ি ভর্তি হলে ২৫ থেকে ৩০ টাকা হিসেবে দিনে আয় করছেন কমপক্ষে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক আলমগীর হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মরিচের ফলন ভালো হয়েছে। কৃষকরাও বেশ লাভবান হচ্ছেন। চলতি মৌসুমে জেলায় দুই হাজার ২২৩ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ হয়েছে। উৎপাদিত মরিচের মূল্য প্রায় ১৬৩ কোটি টাকা।