পুলিশ কর্মকর্তাদের শঙ্কা, এভাবে চললে মৃত্যু ঘটবে জুলাই বিপ্লবের,স্থানীয়দের পাশাপাশি মুক্তি পাচ্ছেন বড় নেতারাও

পুলিশ কর্মকর্তাদের শঙ্কা, এভাবে চললে মৃত্যু ঘটবে জুলাই বিপ্লবের,স্থানীয়দের পাশাপাশি মুক্তি পাচ্ছেন বড় নেতারাও

প্রথম নিউজ, অনলাইন:   ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রায় নেন শেখ হাসিনা। ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিরুদ্ধে রাজধানীর ৫০টি থানায় অসংখ্য মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ২২৫টিকে বিশেষ মামলা হিসাবে বিবেচনায় নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এসব মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলটির শীর্ষপর্যায়ের নেতা, সাবেক-বর্তমান আমলা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎকালীন পদস্থ কর্মকর্তা, বিতর্কিত ব্যবসায়ীসহ ভিআইপিদের আসামি করা হয়েছে। হেভিওয়েটদের পাশাপাশি প্রতিটি মামলায় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের স্থানীয় নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে। আসামিদের অনেকেই গ্রেফতার হয়েছেন। কিন্তু আদালত থেকে জামিন পেয়ে যাচ্ছেন তারা। 

বিশেষ মামলাগুলোর মধ্য থেকে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত জামিনে মুক্তি পেয়েছেন ৫৭২ জন। এসব মামলাসংক্রান্ত এক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে পাওয়া গেছে এসব তথ্য। এ প্রতিবেদনটি সরকারের উচ্চপর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। 

পুলিশের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বিশেষ মামলাগুলোয় শেখ হাসিনা সরকারের স্থানীয় নেতাকর্মীরা নিয়মিতভাবে জামিন পাচ্ছেন। এ ধারা অব্যাহত থাকলে একপর্যায়ে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতাও জামিন পেয়ে যাবেন। এতে মৃত্যু ঘটবে জুলাই-আগস্ট বিপ্লব আদর্শের। ইতোমধ্যে এর নমুনা শুরু হয়েছে। স্থানীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি মুক্তি পেতে শুরু করেছেন বড় নেতারাও। ছোটদের রেফারেন্সের জেরে যেসব বড় নেতা এবং স্পর্শকাতর মামলার আসামি গত কয়েক মাসে ছাড়া পেয়েছেন, 

তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন-সাবেক হুইপ আ স ম ফিরোজ, সুপ্রিমকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর, সচিবালয় ঘেরাওয়ে অংশ নেওয়া অন্তত ১০ আনসার সদস্য, সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী, যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও প্রেসিডিয়াম সদস্য আনোয়ারুল ইসলাম, সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ইসমাইল হোসেন (এনডিসি), ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার আগারওয়ালা, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, আওয়ামী লীগ নেতা জামাল মোস্তাফা ও তার স্ত্রী রোকেয়া জামাল, যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য মজিবুর রহমান, সাবেক এমপি গোলাম কিবরিয়া টিপু, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বান্ধবী ও সাবেক এমপি জোবেদা খাতুন পারুল, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রাদিউজ্জামান রাতুল প্রমুখ।

জানতে চাইলে পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক ফারুকী যুগান্তরকে বলেন, প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আমরা প্রতিটি মামলার আসামিদের জামিনের শতভাগ বিরোধিতা করছি। আমার অবস্থান জিরো টলারেন্স (শূন্যসহিষ্ণুতা)। ফ্যাসিস্ট সরকারের কোনো সহযোগী জামিন পেতে পারে না। তবে বিষয়টি নির্ভর করে জজদের ওপর। তারপরও বলেছি, কেউ জামিন চাইলে যেন আমার কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। 

ফারুকী বলেন, জামিনের ক্ষেত্রে বয়স, নারী, তদন্ত কর্মকর্তার (আইও) রিপোর্ট, তদবির, অসুস্থতা, দলীয় পরিচয় প্রভৃতি বিবেচনা করা হয়। অনেক সময় তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে আসামিদের সমঝোতা হয়ে যায়। তখন তদন্ত কর্মকর্তা সাদামাটা প্রতিবেদন জমা দেন। এতে আসামির জামিন লাভ সহজ হয়। অনেক সময় আইনজীবীরা কাগজ বানিয়ে নিয়ে আসে যে, আসামি জামায়াত-বিএনপির লোক। কখনো এডিট করা ছবি আদালতে হাজির করে বলা হয়, আসামি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে মাঠে ছিলেন। এসব বিষয়ে আমি প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে জোরালোভাবে সব সময় বলে আসছি। বিভিন্ন মিটিংয়েও জজদের সামনে তুলে ধরেছি। গত শনিবারের মিটিংয়েও বলেছি। অনেক সময় জজ সাহেবরা প্রশ্ন করেন, ‘আপনারা কি ফ্যাসিস্ট সরকারের ১৫ বছরের মতো সবাইকে আটকিয়ে রাখবেন?’ 

এক প্রশ্নের জবাবে ফারুকী বলেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে তদবিরের কারণেও আসামিরা জামিন পাচ্ছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমরা শ্যোন অ্যারেস্টও করাচ্ছি। বিষয়টি নিয়ে কী যে বিপদে আছি, বলতে পারছি না। আরও বলেন, জামিন চাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সময় আসামির দলীয় পদ-পদবি উল্লেখ করা হয় না। কেবল নাম-ঠিকানা উল্লেখ করা হয়। এক্ষেত্রে আসামি সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা কঠিন হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, মাঠ পর্যায়ে ফ্যাসিস্টের যেসব সহযোগী অপকর্ম করেছে, তাদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট মামলা হচ্ছে না। অপরদিকে গ্রেফতার ব্যক্তিরা জামিন পেয়ে যাচ্ছেন। যে কারণে সারা দেশে তারা জেগে উঠছেন। জামিনের সময় কেউ বলছেন, ক্যানসারের রোগী, কেউ বলছেন ফুসফুসে সমস্যা, আবার কেউ বলছেন বয়সের ভারে তারা আক্রান্ত। কিন্তু বাস্তব অবস্থা এমন না। অন্দোলনকারীদের বিপক্ষে তারা ঠিকই মাঠে ছিলেন।