প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করতে এসে পুলিশের রোষানলে রুবেলের মেয়ে রাদিয়া
এ ঘটনায় উপস্থিত সাংবাদিকেরা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং তারা এঘটনার পর পুলিশ সুপারের সাথে সাক্ষাৎ করে প্রেসক্লাবের হলরুমে ঢুকে তাদের ক্ষোভের কথা জানান।
প্রথম নিউজ, ফরিদপুর প্রতিনিধি: দুই হাজার কোটি টাকার মামলার আসামি ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক ভোরের প্রত্যাশা পত্রিকার সম্পাদক ইমতিয়াজ হাসান রুবেলের মেয়ে ফরিদপুর প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলন করতে এসে পুলিশের রোষানলে পড়েন। এসময় সাংবাদিকদের সাথে পুলিশের বাকবিতন্ডা হয় এবং দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য সাংবাদিকদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন। এ ঘটনায় উপস্থিত সাংবাদিকেরা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং তারা এঘটনার পর পুলিশ সুপারের সাথে সাক্ষাৎ করে প্রেসক্লাবের হলরুমে ঢুকে তাদের ক্ষোভের কথা জানান।
জানা গেছে, ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ইমতিয়াজ হাসান রুবেলের মেয়ে জাওয়াদা আফনান রাদিয়া শনিবার সকাল ১১টায় ফরিদপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আহ্বান করেন। আগেরদিন বিকেলে সংবাদ সম্মেলনের নোটিশ করে সদস্যদের উপস্থিত থাকতে অনুরোধ জানানো হয়। তবে সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগে সকাল ১০টার পরে আরেকটি নোটিশে এই সংবাদ সম্মেলন বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়ে দেয়া হয় সদস্যদের। একইসাথে রাদিয়াকেও মোবাইলে বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হয়। তবে সংবাদ সম্মেলন বাতিল হলেও সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ ভ্যান এসে পৌঁছে প্রেসক্লাবের সামনে। একজন পুলিশ অফিসার ভ্যান থেকে নেমে ক্লাবের হলরুমে প্রবেশ করে খোঁজখবর নেন।
এর কিছুক্ষণের মধ্যে রাদিয়া তার চাচাতো বোনকে সাথে নিয়ে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের হলরুমে প্রবেশ করেন। তার সাথে এসআই দেলোয়ারও হলরুমে এসে কারো সাথে কথা না বলে রাদিয়াকে বলেন, 'তোমরা এখান থেকে চলে যেতে যাও'। এসময় সেখানে প্রায় কুড়ি জনের মতো সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। তারা রাদিয়ার সাথে পুলিশ কর্মকর্তার এহেন আচরণের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, সংবাদ সম্মেলনতো বাতিল করা হয়েছে। ওরা কেবলই এলো। একটু বিশ্রাম নিক, তারপরে যাক। কিন্তু এসআই দেলোয়ার তাদের তখনই চলে যেতে বললে সাংবাদিকদের সাথে বাদানুবাদ হয়। একপর্যায়ে সাংবাদিকদের আপত্তির মুখে পুলিশ হলরুমের বাইরে বেরিয়ে যায়। এরপর একাধিকবার এসআই দেলোয়ার একজন কনস্টেবল নিয়ে হলরুমে এসে রাদিয়াকে চলে যেতে বলে।
এসময় রাদিয়া কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমার বাবা ফরিদপুর প্রেসক্লাবের একজন সভাপতি ছিলেন। আমাকে আজকে প্রেসক্লাবে আসতে দেয়া হয়না। আমার কি কোন অধিকার নেই এখানে একটি প্রেস কনফারেন্স করার? আমার বাবা ও চাচাকে আজ তিনটি বছর মিথ্যা মামলায় আটকে রাখা হয়েছে। আমার বাবা কি চোর না ডাকাত? তিনি বলেন, আমার মা একজন গৃহিনী। তিনি বাইরের কিচ্ছু জানেননা। তার নামেও মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। আমাদেরকে ফরিদপুরে ঢুকতে দেওয়া হয়না। আমাদের বাসায়ও কাউকে যেতে দেয়া হয়না। মেয়ে হিসেবে কি আমার কোন অধিকার নেই বাবার জন্য আইনি লড়াই করার?"
এদিকে প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করতে না পেরে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ক্লাবের চত্বর থেকেই এসআই দেলোয়ার তাদের আটকানোর চেষ্টা করে। এসময় সাংবাদিকেরা নারী পুলিশ ব্যতিতই এভাবে তাকে আটকানোর তীব্র প্রতিবাদ করলে সাংবাদিকদের সাথে আবারো বাদানুবাদ হয়। খবর পেয়ে প্রেসক্লাবের আরো সাংবাদিকেরা সেখানে উপস্থিত হন।
এদিকে প্রেসক্লাবের হলরুমে প্রবেশ করে সাংবাদিকদের উপস্থিতিতেই পুলিশের এহেন আচরণে ক্ষুব্ধ সাংবাদিকেরা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে যেয়ে পুলিশ সুপার মো. শাহজাহানকে বিষয়টি অবহিত করেন। এসময় পুলিশ সুপার বলেন, প্রেসক্লাবতো সাংবাদিকদের বাড়ির মতো। সেখানে পুলিশ কেনো তাদের বাধা দিবে? তিনি এর নিন্দা জানান এবং কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুল জলিলকে টেলিফোনে যোগাযোগ করে এসআই দেলোয়ারকে পুলিশ লাইনে ফিরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেন।
এদিকে এ ঘটনার পর এক লিখিত বক্তব্যে যাওয়াতা আফনান রাদিয়া বলেন, ইতোপূর্বে গণমাধ্যমে আমাদের নিয়ে প্রকাশিত খবরে আমাদের কোন বক্তব্য না থাকায় সবকিছু একতরফাভাবে প্রকাশিত হওয়ায় আমরা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। তিনি বলেন, গত ১৬ ই মার্চ ২০২১ ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে আমার বাবা ও কাকার সম্পদ বিবরণী তুলে ধরে ২০০০ কোটি টাকার মামলা কে রুপকথার গল্পের সঙ্গে তুলনা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট ন্যায় বিচার প্রার্থনা করেছিলাম। পুনঃতদন্তের আদেশে আমার দাবী সত্য প্রমাণিত হয়েছে। আমরা এর ন্যায়বিচার কামনায় আবারো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট আকুল আবেদন জানাচ্ছি।
প্রসঙ্গত, ফরিদপুর সদর আসনের এমপি সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের আস্থাভাজন দুই সহোদর শহর আওয়ামী লীগের বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও তার ভাই ইমতিয়াজ হাসান রুবেল ২০২০ সালের ৭ জুন গ্রেফতার হন। তাদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ উপার্জন ও অস্ত্র আইনের মামলা সহ একাধিক মামলা রুজু করা হয়।