প্রধানমন্ত্রীর সফর কর্মসূচি সত্ত্বেও থামছে না কোন্দল
ওই সভায় রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও পুঠিয়া-দুর্গাপুর আসনের সাবেক এমপি আব্দুল ওয়াদুদ দারাকে প্রধান অতিথি করা হয়। প্রধান বক্তা করা হয় রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের বর্তমান সংসদ-সদস্য ডা. মনসুর রহমানকে।
প্রথম নিউজ, রাজশাহী: রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রীর সফর কর্মসূচি থাকলেও থামছে না আওয়ামী লীগের কোন্দল। বরং সফরকে কেন্দ্র করে এক সংসদ-সদস্যের সঙ্গে আরেকজনের, এমপিদের সঙ্গে উপজেলা নেতার, জেলা নেতাদের সঙ্গে উপজেলা বা মাঠের নেতাদের কোন্দল প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। এসব নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে পালটাপালটি পোস্ট দিয়ে পরস্পরকে আক্রমণ করতে দেখা যাচ্ছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষ্যে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা প্রস্তুতি কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের নেতৃত্বে রাজশাহীতে চলছে বিশাল প্রস্তুতি। ২৯ জানুয়ারি দিনভর প্রধানমন্ত্রীর রাজশাহী সফরের কর্মসূচি রয়েছে। এ উপলক্ষ্যে মহানগরীর সর্বত্র জোর প্রচার চলছে। হচ্ছে প্রচার মিছিল ও সভা-সমাবেশ।
জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর রাজশাহী সফর উপলক্ষ্যে মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টির লক্ষে জেলার দুর্গাপুর উপজেলার সিঙ্গা এনসিডিপি মার্কেটে উপজেলা যুবলীগের আয়োজনে প্রস্তুতি সভার আয়োজন করা হয়। ওই সভায় রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও পুঠিয়া-দুর্গাপুর আসনের সাবেক এমপি আব্দুল ওয়াদুদ দারাকে প্রধান অতিথি করা হয়। প্রধান বক্তা করা হয় রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের বর্তমান সংসদ-সদস্য ডা. মনসুর রহমানকে।
প্রস্তুতি সভা শুরু হলে অতিথিরা মঞ্চে বসেন। এ সময় ডা. মনসুর এমপির সমর্থকরা হট্টগোল শুরু করেন। ডা. মনসুর এমপিকে কেন প্রস্তুতি সভায় প্রধান অতিথি করা হয়নি-এই দাবি তুলে তারা হট্টগোল শুরু করলে দারা সমর্থকদের সঙ্গে হাতাহাতি ও ধাওয়া-পালটাধাওয়া হয়। এ কারণে সভাটি ভন্ডুল হয়ে যায়। সভা ভন্ডুলের জন্য জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা পক্ষের নেতাকর্মীরা প্রতিপক্ষ ডা. মনসুর রহমান এমপির অনুসারীদের দায়ী করেছেন। এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে দুপক্ষই পরস্পরকে দায়ী করে পালটাপালটি পোস্ট করে চলেছেন।
রাজশাহী জেলা যুবলীগের সভাপতি আবু সালেহ জানান, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষ্যে প্রস্তুতি সভা ডেকেছিলেন দুর্গাপুর উপজেলা যুবলীগ। সামান্য ভুল বোঝাবুঝির কারণে সভাটি শেষ পর্যন্ত হয়নি। তবে সভা না হলেও আমরা একটি প্রচার মিছিল করেছি। এ সম্পর্কে ডা. মনসুর রহমান বলেন, খুব ছোট একটি বিষয়। দুর্গাপুর-পুঠিয়ার সর্বস্তরের বিপুলসংখ্যক দলীয় নেতাকর্মী রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে প্রধানমন্ত্রীর নির্ধারিত জনসভায় উপস্থিত হওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন।
এছাড়া রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ-সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর সঙ্গে তার নির্বাচনি এলাকার নেতাকর্মীদের একাংশের বিরোধ দীর্ঘদিনের। প্রধানমন্ত্রীর রজশাহী সফরের প্রস্তুতি উপলক্ষ্যে আগের কোন্দল এখন প্রকাশ্যে এসেছে। ১২ জানুয়ারি তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি গোলার রাব্বানী ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষ্যে স্থানীয় পৌরসভা চত্বরে প্রস্তুতি সভা করেন। প্রকৃত আওয়ামী লীগের ব্যানারে প্রস্তুতি সভাটি হয়।
সামাজিক মাধ্যমে এটা দেখে মালয়েশিয়ায় অবস্থানকারী রাজশাহী-১ আসনের সংসদ-সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী ১৩ জানুয়ারি রাব্বানী-মামুনকে লক্ষ্য করে তার ফেসবুক পেজে তীব্র কটাক্ষ ও হুমকিমূলক পোস্ট দেন। ফারুক চৌধুরী লেখেন, ‘দেশে না থাকলে মেছোবাঘের গর্জন শোনা যায়। দেশে ঝোপঝাড় এমনিতেই কমে গেছে। সুতরাং মেছোবাঘ লুকানোর পরিবেশ খুব একটা নেই। আর যাদের ঝোপে মেছোবাঘ পাওয়া যাবে তারাও বিপদে পড়তে পারেন।’ এমপি ফারুকের এই পোস্টটি দ্রুত ভাইরাল হয়। একই দিনে তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি গোলাম রাব্বানী এমপি ফারুককে লক্ষ্য করে পালটা পোস্ট দেন।
গোলাম রাব্বানী ডাঁশ বোলতার একটি চাক দিয়ে পালটা পোস্টে লেখেন, ‘মেছোবাঘ তো দূরের কথা। অনেক ক্ষেত্রে ছোট ছোট এই প্রাণী বড় বড় জীবজন্তুকেও ঘায়েল করে ফেলে। কথাটা মনে রাখা দরকার। চরম দাম্ভিকতা পতনের মূল।’ রাব্বানীর এই পোস্টের কমেন্ট বক্সে মন্তব্য লিখে শতাধিক নেতাকর্মী তার প্রতি সমর্থন জানান। তানোরে গোলাম রাব্বানী ও মামুনের সঙ্গে এমপি ফারুকের দা-কুমড়া সম্পর্ক বহুদিনের। রাব্বানী-মামুন অনুসারীরাই তানোরে রাজনীতির মাঠ দখলে রেখে বিভিন্ন জাতীয় দিবস ছাড়াও দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে থাকেন।
রাব্বানী-মামুন অনুসারীদের অভিযোগ, ফারুক চৌধুরী এমপি হওয়ার পর থেকে তানোর-গোদাগাড়ীতে দলের প্রকৃত নেতাকর্মীদের দূরে ঠেলে দিয়ে জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীদের দলে ভিড়িয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আমরা জামায়াত-বিএনপি তোষণের রাজনীতির প্রতিবাদ করছি মাত্র। এতে এমপি ফারুক ক্ষিপ্ত হয়ে নানাভাবে আমাদের হেনস্তা করার চেষ্টা করে চলেছেন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা সফল করতে বাঘা-চারঘাটের আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিভক্ত নেতাকর্মীরা যে যার মতো প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মোহনপুর-পবাতেও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন গ্রুপ ঐক্যবদ্ধভাবে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা সফল করতে প্রস্তুতি সভা করতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রীর জনসভার আর মাত্র ৮ দিন হাতে থাকলেও রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ প্রস্তুতি নিতে পারছেন না দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।
জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা বলেন, ছোটখাটো কিছু সমস্যা থাকলেও জেলার সব উপজেলা, পৌরসভা ও গ্রাম থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় যোগ দেবেন বলে আশা করছি। আমি জেলার সব উপজেলায় গিয়ে প্রস্তুতি সভা করছি। প্রধানমন্ত্রীর জনসভা স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সমাবেশ হবে বলে আশা করছি। স্থানীয়ভাবে দলের ভেতরে কিছু সমস্যা থাকলেও সেগুলো আমলে নেওয়ার মতো নয়।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: