পটুয়াখালী মুক্ত দিবস আজ, মুক্তিযোদ্ধাদের ভয়ে পালিয়ে যায় হানাদাররা
১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর পটুয়াখালী শহরকে হানাদার মুক্ত করে লাল সবুজের পতাকা ওড়ান পটুয়াখালীর বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
প্রথম নিউজ, পটুয়াখালী : পটুয়াখালী মুক্ত দিবস আজ। ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর পটুয়াখালী শহরকে হানাদার মুক্ত করে লাল সবুজের পতাকা ওড়ান পটুয়াখালীর বীর মুক্তিযোদ্ধারা। সেই দিন পটুয়াখালী শহরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রথম এবং পরবর্তীতে শহীদ আলাউদ্দিন শিশু পার্কে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। তবে স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫০ বছরেও জেলার মুক্তিযুদ্ধের এলাকাভিত্তিক ইতিহাসের মতো সংরক্ষণ হয়নি যুদ্ধের স্মৃতিবিজরিত স্থান ও সংস্কার হয়নি গণকবর।
জানা যায়, একাত্তরের ২৬ এপ্রিল শহরে গণহত্যা চালিয়ে পটুয়াখালী জেলা সদরকে দখল করে নেয় পাক-হানাদার বাহিনী। পাক সেনারা শহরের কালিকাপুর মাদবার বাড়িতে ১৯ জনকে হত্যা করে। সে সময়ে কয়েক শত নিরীহ মানুষকে হত্যা করে পটুয়াখালী জেলা কারাগারের অভ্যন্তরে মাটিচাপা দেওয়া হয়। পাক সেনাদের প্রতিরোধ করতে গিয়ে জেলা প্রশাসকের বাসভবনের দক্ষিণ দিকের সরকারি কোয়াটারের সামনে নিহত হন সাত আনসার সদস্য।
দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বলে আস্তে আস্তে পাক হানাদার বাহিনী জেলা শহর ছেড়ে চলে যেতে থাকেন। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর মুক্তি সেনারা পটুয়াখালী শহরের চারদিক অবস্থান নিয়ে চূড়ান্ত হামলার প্রস্তুতি নেন। পরের দিন ৭ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের শহর দখলের খবর টের পেয়ে পাক বাহিনী আচমকা শহরে কারফিউ জারি করে একটি দোতলা লঞ্চ ও একটা একতলা লঞ্চযোগে পটুয়াখালী শহর ছেড়ে পালিয়ে যান। ৮ ডিসেম্বর ভোরে শত্রুমুক্ত হয় পটুয়াখালী।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, পটুয়াখালী জেলায় মোট ২৩৯ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। এর মধ্যে পটুয়াখালী সদরে ১৮ জন, দুমকীতে ৮৬ জন, বাউফলে ৬১ জন, দশমিনায় ৬ জন, গলাচিপায় ১৩ জন, কলাপাড়ায় ৩৪ জন, মির্জাগঞ্জে ১৮ জন ও রাঙ্গাবালীতে ৩ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজুর রহমান বলেন, পটুয়াখালী মুক্ত হয়েছে ৮ ডিসেম্বর। সেদিন আমাদের প্রস্তুতি দেখেই পাকহানাদার বাহিনী পটুয়াখালী ছেড়ে পালিয়ে যান। সেদিন রাতে আমাদের এত বড় প্রস্তুতি ছিল সেটা জেনেই এই ভয়ে ওরা পালিয়ে যায়। পটুয়াখালীতে যারা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন তাদের গণকবর রয়েছে সেগুলো সুন্দর করে সংরক্ষণ করা হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার দাবি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের যাদের ঘরবাড়ি নেই তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হোক।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মানস কান্তি দত্ত বলেন, স্বাধীনতার ৫১ বছর পর এসেও দেখতে হচ্ছে এখনো মুক্তিযোদ্ধা তৈরি হচ্ছে, লিস্ট বানানো হচ্ছে। যারা আদৌ মুক্তিযুদ্ধ করেনি তারা সরকারি কোষাগারের অর্থ নিচ্ছেন, তাদের সন্তানদের চাকরি হচ্ছে, অনেক রকম সুবিধা নিচ্ছেন। আমরা তো কোনো সুবিধা নেওয়ার জন্য যুদ্ধে অংশগ্রহণ করিনি। কবরের কাফনের কাপড় মাথায় নিয়ে যুদ্ধ করেছি। আমরা কোনো কিছু পাওয়ার জন্য যুদ্ধ করি নাই। বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান খান বলেন, ১৯৬৮ সাল থেকে আমরা যুদ্ধ শুরু করেছি, ৭১ সালে কিছু বন্ধু ও আমরা তিন ভাই প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য ভারতে চলে যাই। এরপর দেশে এসে যুদ্ধ করি। যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে থেকেই পটুয়াখালীতে অনেক মানুষকে হত্যা করে গণকবর দেওয়া হয়েছে। এই গণকবরের স্থানগুলো সংরক্ষণ করে নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরার অনুরোধ জানাই।
এ বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমান বলেন, নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে যুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহ সংরক্ষণ ও দ্রুত সময়ের মধ্যে অরক্ষিত গণকবর সংস্কার করা হবে।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews