নেই সড়ক, পানি মাড়িয়ে স্কুলে যাচ্ছে শিশুরা

সড়ক না থাকায় দূষিত পানি মাড়িয়ে স্কুলে যেতে হচ্ছে টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার উড়িয়াবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। সেইসঙ্গে বিদ্যালয়ে কোনো মাঠ না থাকায় খেলাধুলার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে তারা।

নেই সড়ক, পানি মাড়িয়ে স্কুলে যাচ্ছে শিশুরা

প্রথম নিউজ, টাঙ্গাইল: সড়ক না থাকায় দূষিত পানি মাড়িয়ে স্কুলে যেতে হচ্ছে টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার উড়িয়াবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। সেইসঙ্গে বিদ্যালয়ে কোনো মাঠ না থাকায় খেলাধুলার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৮৭ সালে উপজেলার হেমনগর ইউনিয়নে নলিন বাজার থেকে বাংলাবাজার সড়কের উড়িয়াবাড়ী গ্রামে স্থাপিত হয় বিদ্যালয়টি। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ফসলি জমির আইল পাড়ি দিয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে কোমলমতি শিশুদের। বিদ্যালয়ে যাতায়াতের জন্য ব্যবহৃত জমির আইল সামান্য বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায়। এতে হাঁটু পানি ভেঙে বিদ্যালয়ে যেতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী শিমু আক্তার বললো, বিদ্যালয়ে যাতায়াতের সময় প্রায়ই বই, খাতা ও পোশাক ভিজে যায়। দ্রুত বিদ্যালয়ের যাতায়াতের রাস্তাসহ মাঠ নির্মাণের দাবি জানিয়েছে ওই শিক্ষার্থী। তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র নাবিল হোসেন বললো, বৃষ্টি হলে জমির আইল ডুবে যায়। মাঝেমধ্যেই পড়ে গিয়ে বই-খাতাসহ পোশাক ভিজে যায়। কর্তৃপক্ষ যেন দ্রুত আমাদের স্কুলের রাস্তা বানিয়ে দেয়।

স্থানীয় অভিভাবক ইউসুফ আলী বলেন, আমার দুই মেয়ে ওই স্কুলে পড়ে। বৃষ্টি হলে জমির আইলে পানি উঠে যাতায়াতে সাপে কাটাসহ নানা ধরনের ঝুঁকি দেখা দেওয়ায় কাজ বাদ দিয়ে মেয়েদের স্কুলে রেখে আসতে হয়। দ্রুত স্কুলের রাস্তাটি বানিয়ে দেওয়াসহ খেলাধুলার জন্য মাঠ বানিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, বৃষ্টির মৌসুমে বিদ্যালয়ে আসতে প্রতিদিনই ছাত্রছাত্রীদের বই-খাতা ভিজে যাচ্ছে। এতে অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ। তাছাড়া বিদ্যালয়ে মাঠ না থাকায় শিক্ষার্থীরা খেলাধুলায় ভালো করতে পারছে না। তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি বিদ্যালয়ে ওয়াশব্লক বরাদ্দ হয়েছিল। রাস্তা না থাকায় অতিরিক্ত খরচে মালামাল বহন করে কাজ করতে ঠিকাদার রাজি হননি।

শিশুদের যাতায়াতে ঝুঁকি ও ভোগান্তির কথা স্বীকার করেছেন বিদ্যালয়ের সভাপতি অ্যাডভোকেট রবিউল হাসান রতন বলেন, তিনদিকে বাড়ি ও একদিকে বড় সড়ক থাকায় বৃষ্টির পানি নামতে পারে না, তাই বৃষ্টি হলে দ্রুত জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। ভোগান্তি নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

হেমনগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান তালুকদার হীরা বলেন, বিদ্যালয়ের রাস্তা নির্মাণের জন্য বরাদ্দ এসেছিল, কিন্তু জমির মালিকরা রাস্তা নির্মাণে আপত্তি জানানোর কারণে বরাদ্দ ফেরত গেছে। বিদ্যালয়ের রাস্তা ও মাঠ নির্মাণে পুনরায় উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, শিগগির সমস্যার সমাধান করা হবে।

এ বিষয়ে গোপালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসফিয়া সিরাত বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি এরইমধ্যে জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেছি। জমি নিয়ে অতীতে যে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছিল, দ্রুতই জমির মালিকদের নিয়ে বসে বিষয়টি সুষ্ঠু সমাধান করবো। দ্রুতই শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাতায়াতের ব্যবস্থা হবে। তিনি আরও বলেন, আদর্শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাঠ থাকা অত্যন্ত জরুরি। খেলাধুলার মাধ্যমে শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ ঘটে। বিদ্যালয়টিতে খেলাধুলার উপযোগী মাঠ নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও গ্রহণ করবো।