দেশে ‘রেজিম’ পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র: মেনন
বরিশাল নগরের কাউনিয়ার নীলু-মনু ট্রাস্ট ও পাবলিক লাইব্রেরিতে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে বিশেষ বর্ধিত সভার শুরুতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রথম নিউজ, বরিশাল: ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, শুরু থেকেই আমি বলে এসেছি, পার্লামেন্টের শেষ অধিবেশনের আগেও আমি বলেছি যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য আমাদের নির্বাচন নয়। তারা দেশের মধ্যে এবং ভূখণ্ডের বাইরে বঙ্গোপসাগরে ঘাঁটি স্থাপন নিয়ে বহুদিন ধরে চাপাচাপি করছে। সেই লক্ষ্য পূরণ করতে না পেরে তারা রেজিম চেঞ্জ বা শাসন পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে। সেই জায়গা থেকে এই নির্বাচনকে একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সফল করার দায়িত্ব আমাদের সকলের রয়েছে। আর তাই এই নির্বাচনে দৃঢ়তার সঙ্গে ভূমিকা রেখে চলছে ওয়ার্কার্স পার্টি।
রোববার (১৭ ডিসেম্বর) সকালে বরিশাল নগরের কাউনিয়ার নীলু-মনু ট্রাস্ট ও পাবলিক লাইব্রেরিতে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে বিশেষ বর্ধিত সভার শুরুতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।
এসময় তিনি বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটা সংকোচ তৈরি হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে এবারের নির্বাচনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বিদেশি চাপ, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের এ নির্বাচনের ব্যাপারে অধিকতর আগ্রহী ও অধিক তৎপরতা দেখিয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা সক্ষম হননি। আজকেও পত্রিকায় রয়েছে নির্বাচন যদি বানচাল করতেও না পারে, তাহলে নির্বাচনের পরবর্তীকালে আরব বসন্তের মতো এখানে একটা পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা তারা করবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের শরিকদল হিসেবে ১৪ দলে আমরা আছি। আমরা বহুদিন ধরে একত্রে আন্দোলন, নির্বাচন, সরকার ইত্যাদি পরিচালনা করছি। এখনও আমরা আশা করি ঐক্যবদ্ধভাবে এগুবো। আসন বণ্টন নিয়ে কিছু সমস্যা হয়েছিল, এখনও কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। গত সংসদে আমরা ৫টি আসনে নির্বাচন করেছিলাম। দুটি আসনে নৌকার প্রার্থী হওয়ার পরও হেরে গিয়েছিল। কী কারণে হয়েছিলো আপনারা বরিশালবাসী ভালো জানেন এবং তিনটি আসনে আমরা জয়ী হয়েছিলাম। তারপরও আমাদের প্রত্যাশা ছিল ন্যূনতম ৭টি আসনে আমার ছাড় পাব। কিন্তু জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণ ও ভূমিকার কারণে আমাদের আসন সংখ্যা কমে গেছে বলে তারা আমাদের জানিয়েছে।
মেনন বলেন, আমরা রাজশাহী-২, সাতক্ষীরা-১ ও বরিশাল-২ নিয়ে তিনটি আসন পেয়েছি। বরিশালের আসন নিয়েও একটা কনফিউশন সৃষ্টি হয়েছিল। কারণ, তারা আমাকে প্রথমে বরিশাল-৩ এ দিয়েছিল, তারপরে গত পরশু দিন রাত ৮ টার সময় আমাকে জানানো হয় বরিশাল-৩ এর পরিবর্তে আমাকে বরিশাল-২ এ দেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে আমাদের কর্মীদের মাঝেও সমস্যা তৈরি হয়, প্রার্থীদের মাঝেও সমস্যা তৈরি হয়। তারপরও আমি এটা মেনে নিয়ে নির্বাচনে এসেছি।
তিনি বলেন, এই বরিশালে ১৯৭৩ সালে নির্বাচন দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলাম। নির্বাচিত হয়েও এমপি হইনি, সে এক করুণ ইতিহাস। ২০০৮ সালে এখানে নমিনেশন সাবমিট করার পরও আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে ঢাকায় নিয়ে যান। এরপর আমি পর পর তিনবার ঢাকা-৮ থেকে নির্বাচিত হয়েছি।
তিনি বলেন, এবার নির্বাচনের ব্যাপারে আমি নিজেও খুব আগ্রহী ছিলাম না। আমার বয়স হয়ে গেছে, আমি ৮০ বছর অতিক্রম করেছি এরইমধ্যে। সেদিক থেকে আমি ভেবেছিলাম এবার নির্বাচনে আমি যাব না। কিন্তু আমার পার্টি কোনোভাবেই রাজি হয়নি। পরবর্তীকালে দেশের এবং জাতীয় পরিস্থিতি দেখে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। আমি বরিশালের সন্তান, বরিশালের বাইরে থেকেও আমি এখানকার উন্নয়ন ও বিভিন্ন কার্যক্রমের বিষয়ে আগ্রহ বজায় রেখেছি। আমার স্ত্রীও সংরক্ষিত আসনের এমপি থাকা অবস্থায় এ অঞ্চলের উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছেন। বরিশাল তথা এলাকার সঙ্গে আমার সম্পর্ক সবসময় ছিল। আমি আশা করি উজিরপুর-বানারীপাড়াবাসীসহ গোটা বরিশালের মানুষ আমাকে সহযোগিতা করবেন। বিশেষ করে বরিশালের সাংবাদিক বন্ধুদের কাছে আমি সহযোগিতা চাই।
এসময় মেননের সঙ্গে ওয়ার্কার্স পার্টি বরিশাল জেলা কমিটির সিনিয়র সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজ্জাম্মেল হক ফিরোজসহ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এরআগে শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) বিকেলে তিনি বরিশালের বাবুগঞ্জের নিজ বাড়িতে আসেন। আসার পথে উজিরপুরের ইচলাদিতে বরিশাল-২ আসনের নেতাকর্মীরা তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
তবে সেসময় তিনি তেমন কোন বক্তব্য না দিলেও বলেন, জোটগতভাবে নির্বাচনে হাতুড়ি নয়, নৌকার প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের মাঠে থাকব। আর প্রতীক বরাদ্দের পর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করার কথা জানিয়ে তিনি সবাইকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান।