দেশে দ্রুত বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী ও মৃত্যু

গতকাল সারা দেশের পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের নিয়মিত ডেঙ্গু বিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,  একদিনে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।

দেশে দ্রুত বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী ও মৃত্যু

প্রথম নিউজ, অনলাইন: দেশে দ্রুত বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী ও মৃত্যু। ডেঙ্গু মৌসুম আসার আগেই এবছরে ইতিমধ্যে সর্বোচ্চ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে এবছর সবচেয়ে বেশি ২১১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। তাতে দেখা যায়, ঘণ্টায় ৯ জন করে ডেঙ্গু রোগী আসছেন হাসপাতালে। দুই সপ্তাহে প্রায় ১৬শ’ ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। রোগীর চাপ কমাতে এখন থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণের কথা বলছে অধিদপ্তর। ঢাকা মহানগরীর পর দেশে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী কক্সবাজারে। সেখানে  রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে।

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে যারা হাসপাতালে ভর্তি হন, কেবল তাদেরই তথ্য আসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে। আক্রান্ত হয়েছেন কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি হননি, এমন ব্যক্তিরা সরকারের হিসাবের বাইরেই থেকে যান। গতকাল সারা দেশের পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের নিয়মিত ডেঙ্গু বিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,  একদিনে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। জুন মাসের এই কয়েকদিনে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে  ডেঙ্গুতে। চলতি বছরে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ২১১ জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ১৭৪ জন এবং ঢাকার বাইরে ৩৭ জন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নতুন ২১১ জন সহ বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ভর্তি থাকা ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭০৩ জনে। ঢাকার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৫৭৫ জন এবং ঢাকার বাইরে ১২৮ জন। চলতি বছরের এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৬০১ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২ হাজার ৮৭১ জন। 

অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৬৬ জন এবং মারা গেছেন ৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬ জন এবং মারা গেছেন ৩ জন, মার্চে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১১১ জন এবং এপ্রিলে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৪৩ জন এবং মারা গেছেন ২ জন। মে মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৩৬ জন এবং মারা গেছেন ২ জন। জুন মাসে ১ হাজার ৫৭৯ জন এবং মারা গেছেন ১৪ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডিরেক্টর ও মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি যে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা (অন্য বছরের এ সময়ের তুলনায়) বেশ কয়েকগুণ বেশি। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে বর্ষা মৌসুম শুরু হয়নি। সেজন্য আমরা মনে করি আগাম সতর্কতা ও প্রস্তুতির প্রয়োজন আছে। সেটি আমরা এরই মধ্যে শুরু করেছি। আমরা দেশবাসীকে এজন্য সচেতন করতে চাই, যাতে সবাই এই মৌসুমে নিজ নিজ জায়গা থেকে স্বাস্থ্যবিধি ও সতর্কতা মেনে চলি। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি জেলায় সারা বছর পাঁচজন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেলে ধরে নেয়া যায় আক্রান্ত রোগী অন্য জেলা থেকে এসেছে; কিন্তু এর বেশি হলে ধরে নিতে হবে স্থানীয়ভাবে এ রোগ ছড়াচ্ছে। তারা এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা না থাকায় ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু বাড়ছে। তাছাড়া ঢাকার বাইরে ডেঙ্গুর চিকিৎসা ব্যবস্থা অপ্রতুল, তাতে মৃত্যুর ঝুঁকিও বেড়ে যাচ্ছে।

 এর আগে ২০১৯ সালে দেশের ৬৪ জেলায় এক লাখের বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। সরকারি হিসাবে সেবার মৃত্যু হয়েছিল ১৬৪ জনের। মাঝে এক বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছুটা কম থাকলেও ২০২১ সালে ফের ৫৮ জেলায় ডেঙ্গু ছড়ায়। তাতে ২৮ হাজার ৪২৯ জন এ রোগ নিয়ে হাসপাতালে যায়, মৃত্যু হয় ১০৫ জনের। গত বছর ৬২ হাজার ৩৮২ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। দেশে গেলে বছর রেকর্ড মৃত্যু হয় ২৮১ জনের। 

ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার। কেন এবছর ডেঙ্গুর প্রকোপ আগেই বাড়ছে জানতে চাইলে তিনি মানবজমিনকে বলেন, এবছর আগেই বৃষ্টি হয়েছে। এজন্য এডিস মশার বিস্তারে ভূমিকা রাখছে। এখন গ্রামেও নগরায়ন হচ্ছে। ফলে শহর থেকে জেলা শহর বা উপজেলায়ও ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। তবে এজন্য জেলা প্রশাসককে প্রস্তুত থাকতে হবে। সমন্বিতভাবে ডেঙ্গুকে মোকাবিলা করতে হবে। একার পক্ষে সম্ভব না।