গণআন্দোলনের মাধ্যমেই সরকারের পতন ঘটানো হবে
১০ মহানগরে বিএনপি’র পদযাত্রা
প্রথম নিউজ, অনলাইন: অসহনীয় লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতির প্রতিবাদে ঢাকাসহ ১০টি মহানগরে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। গতকাল দুুপুরের পর ঢাকাসহ সারা দেশের মহানগরগুলোতে এই পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেন দলটির নেতাকর্মীরা। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি’র উদ্যোগে পৃথক কর্মসূচিতে অংশ নেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা বলেন, সরকারের লুটপাট, দুর্নীতির কারণে দেশের অর্থনীতি বেহাল অবস্থায় পড়েছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে গণ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানো হবে।
গতকাল বিকালে মতিঝিল এলাকায় পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি। পদযাত্রাপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকারের অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রে টাকা পাচার করেছে। কিন্তু মার্কিন ভিসা নীতির পর সেই টাকা দেশে ফেরত আনতে বাজেটে বিশেষ সুযোগ দেয়া হয়েছে। চুরি করলেই সরকার পুরস্কৃত করছে। সরকার উন্নয়নের স্বপ্ন মরীচিকায় পরিণত হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ছাড়া আসুন না রাস্তায়। দেখবেন কার কত সাহস। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন, দেখবেন কার কত সাহস আর শক্তি। জনগণ আপনাদের কী করে।’ সরকারকে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘মানে মানে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। নইলে পালাবার পথটুকুও পাবেন না। এখন তো আবার আমেরিকা আপনাদের পালাবার পথ বন্ধ করে দিয়েছে।’ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকার সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে আটকে রেখেছিল।
এখন গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। আমাদের নেতা তারেক রহমানকে বিদেশে নির্বাসিত করে রেখেছে। আমাদের এমন কোনো নেতা নেই যার বিরুদ্ধে একের অধিক মামলা নেই।’ তিনি বলেন, এই সরকারের একটাই কাজ- জনগণের পকেট কাটা। এমন একটা জিনিস নেই সেখান থেকে সরকার পকেট কাটে না। মোবাইল থেকে তারা পকেট কেটে নেয়। বিদ্যুতের কার্ডে ১০০০ টাকা ঢুকালে দেখবেন ৩০০ টাকা নেই। বছরে আমাদের ৭৮ হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। সরকার এখন বলে কয়লা নাই, গ্যাস নেই। টাকা কই গেল? সব পাচার করেছে। সাংবাদিকরা মন খুলে কিছু বলতে পারেন না উল্লেখ করে তিনি বলেন, মিডিয়ার ওপর খড়গ বসে আছে। সরকারের গলাবাজি শেষ হয় না। ‘এদেশটা কারও একার নয়, এটা আপনার, আমার সবার দেশ’।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ করে এ দেশটাকে আমরা স্বাধীন করেছি। কিন্তু এখন দেশে কথা বলার কোনো অধিকার নেই, নিরাপত্তা নেই।’ নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে বিএনপি’র মহাসচিব বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে সিইসি সন্তোষ প্রকাশ করছেন। অথচ ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীর ওপর হামলা হয়েছে। যেই ইসি একজন প্রার্থীর নিরাপত্তা দিতে পারেন না, তারা নাকি আবার জাতীয় নির্বাচন করবেন। অনেক হয়েছে।
সরকারের উদ্দেশ্যে ফখরুল বলেন, গদি ও পুলিশ প্রশাসন ছেড়ে মাঠে আসুন, নির্বাচনে আসুন। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে নিজেদের শক্তি যাচাই করুন।
ফখরুল বলেন, সিরাজুল আলম খান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। কিন্তু এই আওয়ামী লীগ তাকে মৃত্যুর পর সম্মান পর্যন্ত দিলো না। একটি শোকবার্তা দেয়নি এই সরকার। কারণ তিনি এদের বিরুদ্ধে লড়েছিলেন। এদের তৈরি রক্ষীবাহিনীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন। সে সময় এই রক্ষীবাহিনী ৪০ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেছিল।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিচার বিভাগকে হাতে নিয়ে সব কূটকৌশল করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। কারণ তারা বুঝতে পেরেছে, নির্বাচনে গেলে জনগণ তাদের ভোট দেবে না। কারণ তারা ভালো কিছু করেনি। এই ভয়ে তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে ভয় পায়।’ সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে রাজধানীর গোপীবাগ থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে ধোলাইপাড় গিয়ে শেষ হয়।
এদিকে ঢাকা মহানগর উত্তরের পদযাত্রায় মহাখালীতে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী একটি হারিকেন দেখিয়ে নেতাকর্মীদের বলেন, এই হারিকেন শেখ হাসিনা সরকারের হাতে ধরিয়ে দিতে হবে। আমীর খসরু বলেন, আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে পরাজিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের নির্ভরশীলতা জনগণের উপর নেই, তাদের নির্ভরশীলতা পুলিশ, র্যাব ও আনসারের একাংশের ওপর। এই একাংশ এই অবৈধ অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় রাখার জন্য বেআইনি কাজ করছেন, জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন ও সংবিধান লঙ্ঘন করছেন। এই একাংশের কাছে অনুরোধ এই পথ থেকে সরে আসেন। দেশের জনগণ জেগেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে আমীর খসরু বলেন, জনগণের চলমান আন্দোলনের সঙ্গে শামিল হন। আপনারা যারা পুলিশ, র্যাব, আনসারে আছেন সরকারি কর্মকর্তা আছেন আপনারা আপনাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব নির্বিঘেœ পালন করতে পারবেন। আপনারা জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েন না, জনগণের পাশে থাকেন। এ সময় তিনি বলেন, আমরা জয়ের শেষ ভাগে এসে পৌঁছেছি। সহিংসতা কে করে, যার সঙ্গে জনগণের সমর্থন নাই তারা। কোটি কোটি মানুষ বিএনপি’র পক্ষে আছে আমরা কেন সহিংসতা করবো? সরকারকে বলবো ওই পথে যাইয়েন না। সুবোধ বালকের মতো গণতন্ত্রের পথে ফিরে আসেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন আপনাদের জন্য ভালো হবে।
সমাবেশ শেষে কয়েক হাজার নেতাকর্মীর অংশগ্রহণে পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। মহাখালী থেকে পদযাত্রা কাওরান বাজার গিয়ে শেষ হয়। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র কর্মসূচিতে অংশ নেন বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, আসাদুজ্জামান রিপন, আমিনুল হক, কেন্দ্রীয় নেতা তাবিথ আউয়াল, আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, শহিদুল ইসলাম বাবুল, কামরুজ্জামান রতন, মাহবুবুল হাসান ভূঁইয়া পিংকু, ফখরুল ইসলাম রবিন, রেজওয়ানুল হক রিয়াজ প্রমুখ।
অন্যদিকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সমাবেশে অংশ নেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জারিফ তুহিন, ঢাকা জেলা বিএনপি’র সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক প্রমুখ।