তিন খাতে পেনশনের তহবিল বিনিয়োগ, আসছে মোবাইল অ্যাপ
আসছে ব্যবস্থাপনা বিধিমালা
প্রথম নিউজ, ঢাকা: দেশের নাগরিকদের বহুল প্রতীক্ষিত সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি (স্কিম) চালু হলেও নতুন এ প্রকল্প নিয়ে মানুষের মধ্যে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। বিশেষ করে বিনিয়োগ ঝুঁকি ও তহবিল ব্যবস্থাপনা কেমন হবে, তা নিয়ে মানুষের আগ্রহ বেশি। এসব বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা দিতে তহবিল ব্যবস্থাপনার একটি বিধিমালা তৈরির কাজ চলছে, যা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের খসড়া বিধিমালা অনুযায়ী, নিরাপদ ও দীর্ঘমেয়াদে মুনাফা পাওয়া যায় এমন খাতে তহবিলের অর্থ বিনিয়োগ করা হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে বিনিয়োগ করা হবে সরকারি বন্ডে। যেখান থেকে ৮ থেকে ৯ শতাংশ পর্যন্ত সুদ পাওয়া যাচ্ছে। আর তহবিলের বড় একটি অংশ সরকারের লাভজনক অবকাঠামো প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হবে। এছাড়াও ক্রেডিট রেটিংয়ের মাধ্যমে নির্ধারিত প্রথম সারির ১০ সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকে দীর্ঘমেয়াদি এফডিআর আকারে রাখা হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন সূত্রে জানা গেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে আরও জানা যায়, অর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সব ধরনের সুরক্ষা নিশ্চিত করে ভালো রিটার্ন পাওয়ার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে। যারা পেনশন স্কিমে চাঁদা দেওয়া শুরু করবেন, তারা যেন মেয়াদ পূর্ণ করেন। এরপরও যদি কেউ মেয়াদ পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত চাঁদা দিতে না পারেন, তাহলেও মুনাফাসহ জমা দেওয়া অর্থ ফেরত পাবেন। এমনকি কেউ যদি চাঁদার এক কিস্তি দেওয়ার পর আর না দেন, তাহলেও মুনাফাসহ জমা দেওয়া টাকা ফেরত দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। আর যিনি পেনশন স্কিম গ্রহণ করবেন, তার বয়স ৬০ বছর পূর্ণ হলেই চাঁদার অর্থ মুনাফাসহ ফেরত পাবেন। পেনশন কর্তৃপক্ষ প্রতি বছর মুনাফার হার ঘোষণা করবে। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে গ্রাহক তার ইউনিক পেনশন আইডি দিয়ে প্রবেশ করে বছর শেষে মুনাফাসহ জমা হওয়া টাকার পরিমাণ জানতে পারবেন।
আর সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি পুরোপুরি অটোমেশনের আওতায় আনা হচ্ছে। চালু করা হবে মোবাইল অ্যাপ। সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্তির জন্য www.upension.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে নিবন্ধন করা যাচ্ছে। গ্রামীণ পর্যায়ে নিবন্ধন করতে সহযোগিতা করছে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার। কেউ অনলাইনে পেনশন স্কিমের জন্য নিবন্ধন করতে ব্যর্থ হলে সোনালী ব্যাংকের যেকোনো শাখায় গিয়ে তা করতে পারবেন। তারপরও রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় কিছু ঘাটতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিবন্ধন প্রক্রিয়া আরও সহজ করতে কাজ করছে কর্তৃপক্ষ। এরই অংশ হিসেবে কিছুদিনের মধ্যে মোবাইল অ্যাপ চালু করা হবে।
গত ১৭ আগস্ট পেনশন স্কিম উদ্বোধনের পর ব্যাপক সাড়া মিলেছে। প্রবাস স্কিম, প্রগতি স্কিম, সুরক্ষা স্কিম এবং সমতা স্কিম– এ চার স্কিম নিয়ে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছে সরকার। পেনশন বিধিমালা বলছে, সর্বজনীন পেনশন প্রথায় যার যত টাকা জমা, মেয়াদ শেষে তার তত বেশি পেনশন। অন্যদিকে স্বল্প আয়ের মানুষদেরও বিমুখ করবে না এ উদ্যোগ। যারা মাসিক ৫০০ টাকা জমা দেবেন, তাদের জন্য শুরু থেকেই থাকবে সরকারের আরও ৫০০ টাকার ভর্তুকি। সব মিলিয়ে সবার জন্যই থাকছে নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে বাড়তি কয়েকগুণ মুনাফা।
অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, পৃথিবীর বহু দেশেই চালু আছে জাতীয় পেনশন ব্যবস্থা। যেগুলো চলছে ঠিকঠাক। বাংলাদেশে সর্বজনীন পেনশন খাতে জমা হওয়া অর্থ যাবে লাভজনক বিনিয়োগে, তা থেকে পাওয়া মুনাফাই জমা হবে স্কিমের হিসাবে। ফলে বেগ পোহাতে হবে না খুব একটা। আর পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করে কর রেয়াত পাওয়ার যোগ্য হবেন এবং মাসিক পেনশন বাবদ প্রাপ্ত অর্থ আয়কর মুক্ত থাকবে, যা সর্বজনীন পেনশন আইনে উল্লেখ করা হয়েছে।
২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশনে সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতি প্রবর্তনের সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর লক্ষ্যে জাতীয় সংসদে ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩’ পাস করা হয়। বহুল প্রতীক্ষিত সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি (স্কিম) ১৭ আগস্ট সকালে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার পরপরই সবার জন্য সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি উন্মুক্ত করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করার পর জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইট www.upension.gov.bd চালু করা হয়েছে এবং চারটি স্কিমে অংশগ্রহণের জন্য অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম ও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস, ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড ও ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা দেওয়া শুরু হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের জারি করা সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা অনুযায়ী, এ কর্মসূচিতে যুক্ত হলে ৬০ বছর বয়সের পর থেকে আজীবন পেনশন সুবিধা পাবেন গ্রাহক। চাঁদা পরিশোধের পর গ্রাহক মারা গেলে তার নমিনি বা উত্তরাধিকারী পেনশন পাবেন ১৫ বছর।
সর্বজনীন পেনশনের আওতায় আপাতত চার ধরনের স্কিম চালু করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রবাসীদের জন্য প্রবাস স্কিম, বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য প্রগতি স্কিম, অনানুষ্ঠানিক খাত অর্থাৎ স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য সুরক্ষা স্কিম আর নিম্নআয়ের মানুষের জন্য রয়েছে সমতা স্কিম। পরবর্তী সময়ে শ্রমজীবী ও শিক্ষার্থীদের জন্য আরও দুই ধরনের প্যাকেজ চালু করা হতে পারে বলে জানা গেছে।