ছাদ থেকে ফেলে গৃহকর্মীকে খুনের পেছনে স্বামীর কুপ্রস্তাবের ক্ষোভ

শনিবার (১ জুলাই ) ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় তামান্না।

ছাদ থেকে ফেলে গৃহকর্মীকে খুনের পেছনে স্বামীর কুপ্রস্তাবের ক্ষোভ

প্রথম নিউজ, ঢাকা: রাজধানীর রূপনগর থানার আরামবাগ আবাসিক এলাকায় গৃহকর্মী তামান্নাকে কুপ্রস্তাব দিয়েছিলেন স্বামী আখতারুজ্জামান (৪২)। কিন্তু বিষয়টি আখতারের স্ত্রী অরুনিমা মৌয়ের (৩৬) নজরে আসে। আর এতেই ক্ষুব্ধ মৌ পরদিন বাসার ৯ তলায় ছাদে নিয়ে গৃহকর্মী তামান্নাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন।

এরপর গত শনিবার (১ জুলাই ) ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় তামান্না। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রূপনগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) দুলাল হোসেন।

তিনি বলেন, গত ২৩ জুন (শুক্রবার) সকাল ৬ টা থেকে ৭ টার মধ্যে যেকোনো সময় রূপনগর থানার আরামবাগ আবাসিক এলাকার আট নাম্বার রোডের বি-ব্লকের ৪০ নাম্বার বাসার নয়তলার ছাদ থেকে তামান্না নামের ওই গৃহকর্মীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় গৃহকর্ত্রী অরুনিমা মৌ। পরে আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরে সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এর পর দীর্ঘ আট দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর আইসিইউতে মারা যায় গৃহকর্মী তামান্না। পরে ময়নাতদন্ত শেষে তার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

এর আগে এই ঘটনায় নিহতের চাচা আসরুজ্জামান খান বাদী হয়ে গত ২৪ জুন রূপনগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এই ঘটনায় মামলার এক নাম্বার আসামি অরুনিমা মৌ ও তার স্বামী আখতারুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছিল। গৃহকর্তা আখতারুজ্জামান একটি বেসরকারি এনজিওতে চাকরি করেন।

রূপনগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) দুলাল হোসেন বলেন, যেহেতু গৃহকর্মী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন তাই এখন এটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হবে। মৃত্যুর বিষয়টি আমরা আদালতকে অবগত করেছি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর আগে সে ধর্ষিত হয়েছিল কিনা তা জানা যাবে।

নিহতের চাচা আসরুজ্জামান খান মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, বাবা-মা অসুস্থ হওয়ায় তামান্নার পরিবারে অসচ্ছলতা ছিল। চার মাস আগে ৭ হাজার টাকা বেতনে গৃহকর্মী হিসাবে ওই বাসায় কাজ শুরু করেন তামান্না। গত ২২ জুন তামান্নাকে গৃহকর্তা আখতারুজ্জামান কুপ্রস্তাব দেয়। এ সময় গৃহকর্ত্রী অরুনিমা মৌ বিষয়টি দেখে ফেলে এবং তামান্নাকে বকাবকি করে।

পরদিন সকালে গৃহকর্ত্রী অরুনিমা মৌ তামান্নাকে কৌশলে ছাদের বাগানের পাশে নিয়ে যায়। সেখানে গতরাতে তার স্বামীর দেওয়া কুপ্রস্তাব নিয়ে তামান্নাকে বকাবকি করতে করতে নয়তলা ভবনের ছাদের উত্তর পাশের ফাঁকা জায়গায় বাগানের রেলিংয়ের ধারে নিয়ে যায়। একপর্যায়ে তামান্নাকে ধাক্কা মেরে ফেলে পাশের একটি প্লটে ফেলে দেয়।

পরে বাসার দারোয়ান সাইদুল শব্দ শুনতে পেয়ে ঘটনাস্থলে যান এবং গৃহকর্মী তামান্নাকে আহত অবস্থায় চিৎকার করতে দেখেন। পরে সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পঙ্গু হাসপাতাল এবং সর্বশেষ ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়।

ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় তামান্নার ডান কাঁধের হাড়, বুকের পাঁজর, মেরুদন্ডের হাড় ও কোমরের হাড় ভেঙে যায়। পরদিন রূপনগর থানায় একটি হত্যা চেষ্টা মামলা (মামলা নং-১৮) দায়ের করেন আসরুজ্জামান খান। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে আট দিন পর না ফেরার দেশে চলে যান গৃহকর্মী তামান্না।

মৃত্যুর আগে তামান্না বলেছিলেন, আমি যাদের বাসায় কাজ করি সেই মৌকে আমি আন্টি বলে ডাকি। কাজকর্মে একটু দেরি হলেই আমার মৌ আন্টি আমাকে প্রায় মারধর করত। কয়েকদিন আগে তিনি আমাকে টাকা চুরির অপবাদ দেন।

সেসময় তিনি আরও বলেন, আজ (ঘটনার দিন) সকালে আমি বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালে আন্টি আমাকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়। এরপর আমার কোনো কিছুই মনে নেই। গুরুতর আহত অবস্থায় বেডে শুয়ে তামান্না তার মুখে লাগানো অক্সিজেন নিজ হাতে খুলে এই প্রতিবেদককে ঘটনার কথা খুলে বলেছিলেন।