ছাত্রলীগ নিয়ে যে গুরুতর অভিযোগ করলেন রাবি অধ্যাপক

ছাত্রলীগ বর্তমানে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের সংগঠন নয়, গুণ্ডা লালন-পালনের কারখানায় পরিণত হয়েছে।

ছাত্রলীগ নিয়ে যে গুরুতর অভিযোগ করলেন রাবি অধ্যাপক
ছাত্রলীগ নিয়ে যে গুরুতর অভিযোগ করলেন রাবি অধ্যাপক

প্রথম নিউজ, রাজশাহী: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেছেন, রাবির আবাসিক হলগুলোতে যেভাবে একের পর এক সাধারণ শিক্ষার্থীকে বেধড়ক পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হচ্ছে- এতে প্রতীয়মান হয় যে, বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া ছাত্রলীগ বর্তমানে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের সংগঠন নয়, গুণ্ডা লালন-পালনের কারখানায় পরিণত হয়েছে। রাস্তায় চাঁদাবাজি করে গুণ্ডা, চোর-ডাকাতরা; কিন্তু এ দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছে ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী। সোমবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে এসব কথা বলেন তিনি। তিনি আরও বলেন, গোপনে এ ধরনের নিপীড়ন আরও বেশি চলছে। যেগুলো শিক্ষার্থীরা ভয়ে মুখ খুলছে না। আমি শিক্ষক হিসেবে চুপ থাকতে পারি না। ভয়কে জয় করতে পারলে সেদিন থেকে এই নৈরাজ্য বন্ধ হয়ে যাবে। প্রশাসনের উদ্দেশ্য এই শিক্ষক বলেন, আবরাবের মতো যদি রাবির কোনো শিক্ষার্থীর পরিণতি হয়, তাহলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা কী হবে একবার ভেবে দেখেছেন? আমরা এর অবসান দেখতে চাই। এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি চাই না। ছাত্রলীগের এসব কর্মকাণ্ডে ব্যাপারে প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ উল্লেখ করে সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার বলেন, আমরা যেভাবে ছাত্রদের নির্যাতনের প্রতিবাদে এখানে দাঁড়িয়েছি পৃথিবীর কোনো দেশেই এমন নজির নেই। এ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় সবাই রয়েছে। তাহলে তারা কী করছে? দায়িত্ব পালন না করতে পারলে ছেড়ে দিন। প্রশাসন মাঝে মধ্যে দায় এড়ানোর জন্য বলেন আমাদের কাছে তারা লিখিত অভিযোগ দেয়নি। এগুলো দায়িত্বহীন কথা। আপনাদের অবস্থান শক্ত না হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।

এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর বলেন, শোকের মাসে আমাদের প্রতিবাদে দাঁড়াতে হচ্ছে। এটা শোকসন্তপ্ত জাতির কাছে বেমানান। তাহলে মস্তানি বিভাগ খোলা হোক বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাহলেই সেটা ভালো হবে। আর নাহলে এগুলোকে উৎখাত করুন। আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসুদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল প্রাণ শিক্ষার্থী। সেখানে প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। আর সেটার প্রতিবাদে আমাদের এখানে দাঁড়াতে হচ্ছে। যারা এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছে তাদের ছাত্র পরিচয় দিতে আমাদের লজ্জা লাগে। আমরা এমন ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। ছাত্রলীগের গুণ্ডারা শিক্ষার্থীদের কোনো অধিকার নিয়ে কাজ না করে শিক্ষার্থীদের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে ধারাবাহিকভাবে শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের ঘটনা ঘটেই চলেছে। এর প্রতিবাদে ‘নিপীড়ন বিরোধী ছাত্র-শিক্ষক ঐক্যের’ ব্যানারে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। সেখানে বক্তারা আরও বলেন, রাজনীতি একটি দারুণ জিনিস যখন সেটার মাঝে কল্যাণকামিতা থাকে। আমরা মস্তানি, গুণ্ডামি, টেন্ডারবাজির নাম এখন রাজনীতি দিয়েছি। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন আর বিশ্ববিদ্যালয় নেই। ছাত্রলীগের একদল গুণ্ডাকে লালন করা হচ্ছে। যদি লালন করা নাই হবে তাহলে প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থী নির্যাতনের মতো এমন ঘটনা দেখতে হতো না। এ সময় মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নেন- অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দীন খান, সোনালী সংবাদ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদ জামাল কাদেরি, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ড. কাজী মামুন হায়দার, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুল হক, ম্যাটেরিয়ালস সাইন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল মতিন, রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সমন্বয়ক আব্দুল মজিদ অন্তর, ছাত্র অধিকার পরিষদের নাইমুল ইসলাম, ছাত্র ফেডারেশনের মহাব্বত হোসেন মিলন, মেহেদী, আমানুল্লাহ খানসহ প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী।

এদিকে শুক্রবার ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সামসুল ইসলামকে মতিহার হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর সাহা রুমে ডেকে নিয়ে চাঁদার দাবিতে ৩ ঘণ্টা বেধড়ক পেটায়। এ সময় ২০ হাজার টাকাও কেড়ে নেয় এই নেতা। এমনকি ওই ঘটনা যদি কাউকে জানানো হয় তবে সামসুল ইসলামকে বুয়েটের আবরারের মতো মেরে ফেলার হুমকিও দেয় ভাস্কর। এর আগে ২৪ জুন রাবির লতিফ হলে মধ্যরাতে শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হল থেকে বের করে দেয় ছাত্রলীগ। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ছিলেন রসায়ন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক তীব্র প্রতিবাদ জানাতে এসেছিলেন শিক্ষকরা। সোহরাওয়ার্দী, জিয়া, শামসুজ্জোহা হলেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছিল।

 

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom