চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে পুনরায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করছি: নসরুল হামিদ
আগামীতে দেশে মানসম্মত বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নিশ্চিত করাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: জাতীয় সংসদে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ রেখেছি। আগামীতে দেশে মানসম্মত বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নিশ্চিত করাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মঙ্গলবার (১৩ জুন) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া অধিবেশনে সাধারণ আলোচনায় আরও অংশ নেন সরকারি দল আওয়ামী লীগের মো. আব্দুস শহীদ, ওমর ফারুক চৌধুরী, আব্দুস সালাম মূর্শেদী, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, দীপংকর তালুকদার, নূরুন্নবী চৌধুরী, এনামূল হক, আনোয়ারুল আবেদীন খান, জাফর আলম ও মো. সাহিদুজ্জামান এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টির গোলাম কিবরিয়া টিপু।
তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতি ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে প্রত্যেকটি দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে যেমন দ্রব্যমূল্য বেড়েছে, তেমনি জ্বালানির মূল্যও বেড়েছে। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এরপরও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে নিরিবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ রেখেছি। জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটকে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের দিকে অগ্রসর হওয়ার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ পদক্ষেপ বলে দাবি করেন প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বাজেটে একদিকে যেমন সামাজিক নিরাপত্তা বলয় বাড়ানো হয়েছে, তেমনি টেকসই উন্নয়নের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে সামনে রেখে বাজেট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ-জ্বালানি সরবরাহের পরিকল্পনা রয়েছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০৪১ সালের আগেই বাংলাদেশকে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।
জ্বালানি খাতে তিনটি চ্যালেঞ্জ নিয়ে সরকার অগ্রসর হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, সেগুলো হলো- রিল্যাইবেলিটি, এফোর্ডেবিলিটি এবং নিরবচ্ছিন্ন পাওয়ার এনার্জি পাওয়া। এজন্য কেবল অর্থসংস্থান হলে হবে না; টেকনোলজি গুরুত্বপূর্ণ। সারাবিশ্বের প্রতিটি দেশ জ্বালানি ব্যবস্থা কেমন হবে, তা নতুনভাবে চিন্তা করছে। পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়া থেকে সরে এসে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে যাচ্ছে। কারণ তাদের প্রচুর জায়গা আছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মতো দেশে এটা করা কঠিন। স্টোরেজ ব্যাটারি করতে গেলে খরচ আরও বেড়ে যাবে। তবে সরকার চেষ্টা করছে অন্তত বিদ্যুৎ উৎপাদনে ১০ শতাংশ যেন নবায়নযোগ্য জ্বালানি করা যায়। সেটা মাথায় রেখে নেপাল থেকে ৭০০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চুক্তির জন্য সবকিছু তৈরি করা হয়েছে। সঞ্চালন লাইন করে আরেকটি দেশের ভেতর দিয়ে এভাবে বিদ্যুৎ আনতে পাঁচ থেকে আট বছর সময় লাগে। কিন্তু এখানে জ্বালানি খরচ ২০ বছর একই থাকবে, এ কারণে আনা হচ্ছে। ডিজেল, ফুয়েলের দামের তারতম্য হয়। এতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়া কষ্টকর হয়।
ভুটান থেকেও বিদ্যুৎ আনার চেষ্টা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিদ্যুতের চাহিদা দিনদিন বাড়ছে। এই চাহিদা পূরণে শুধু অর্থসংস্থান হলেই হবে না। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। কার্বণ কমাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে হবে। এজন্য নেপালের সঙ্গে চুক্তির প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। নেপালের সঙ্গে সরাসরি বিদ্যুৎ লাইন স্থাপনের জন্য তিন দেশের যৌথসভায় আমরা ঐক্যমতে পৌঁছেছি। সর্বনিম্ন খরচে জনগণের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতীয় পার্টির গোলাম কিবরিয়া টিপু বলেন, সরকারের নানা পদক্ষেপ সত্ত্বে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নয়ন হয়নি। মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগে আছে, নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ না পেলেও অনেককে ভৌতিক বিল দিতে হচ্ছে। গ্যাস-পানির ক্ষেত্রেও একই অবস্থা, ভৌতিক বিল আসছে। ওই সকল অফিসগুলোতে গেলে মানুষকে হয়রানির শিকার হতে হয়। এটা দেখার কেউ নেই।
তিনি বলেন, আগে ছিল কানাডায়, এখন লন্ডনে বেগমপাড়া হচ্ছে। সাধারণ মানুষ মনে করে এগুলো এমপিরা করেছে। কিন্তু না, যারা বিদেশে বাড়ি করেছে তাদের বেশিরভাগ আমলা। ঘুষ চলে না এমন কোন অফিস নেই। এখন গোল্ডের বারে ঘুষ নেয়। এই ঘুষখোরদের চিহ্নিত করতে হবে। ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধ না করতে পারলে এই দেশকে উন্নত দেশে পরিণত করা সম্ভব হবে না। এটা বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা না পারলে অন্য কেউ পারবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সাবেক চিফ হুইপ মো. আব্দুস শহীদ বলেন, সংসদীয় কমিটিতে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি যথাসময়ে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো সমাপ্ত করতে পারলে সুবিধা আগে থেকেই পেতাম এবং ব্যয়ও বাড়তো না। কিন্তু অধিকাংশ প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় ও বাজেট বাড়াতে হয়। দেশের উন্নয়নের স্বার্থে মন্ত্রণালয়গুলোকে প্রকল্প বাস্তবায়নে সময়ের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, কৃষিতে সার, সেচসহ চাষের উপকরণ কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ায় দেশ বর্তমানে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বৈশ্বিক মহামারি করোনার মধ্যে দেশের মানুষের খাওয়া পরার কোন অভাব হয়নি। তার ওপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা, অর্থ ও খাদ্য সহায়তার ফলে জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বজায় রাখা সম্ভব হয়েছে।
সংসদ সদস্য দীপঙ্কর তালুকদার বলেন, প্রধানমন্ত্রী পার্বত্য এলাকাকে হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। যে কারণে উন্নয়ন হয়েছে। পাহাড়ে কুকি-চীন জঙ্গিরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। সেনাবাহিনী তাদের অপতৎপরতা গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। উন্নয়নের প্রধান বাধা হলো অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি। এটা বন্ধে আরো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান তিনি।