খুলনার দশ পয়েন্টে হামলা ভাঙচুর গুলি
প্রথম নিউজ, অনলাইন: খুলনায় বিএনপি’র সমাবেশে যোগ দেওয়ার পথে দশটি পয়েন্টে হামলা, সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। পথে পথে বাধা, হামলা, ধাওয়া ও মারধরের শিকার হয়েছেন বিএনপি’র নেতাকর্মীরা। প্রায় প্রতিটি পয়েন্টে তাদের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সশস্ত্র বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। কিছু জায়গায় ধাওয়া-পালটাধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। উত্তেজিত কর্মীরা আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র অফিস ভাঙচুর করেছেন। রেলস্টেশন এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় কর্মীরা স্টেশন ভাঙচুর করেন। গোলাগুলির ঘটনাও ঘটেছে একাধিক স্থানে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন অর্ধশত নেতাকর্মী। এক নেতার পায়ের রগ কেটে দেওয়া হয়েছে। অপর নেতার চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। তারা হাসপাতালে ভর্তি। এসব ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে প্রায় ২০০ জনকে। অনেক নেতাকর্মী শহরেই ঢুকতে পারেননি।
সমাবেশে আসতে পারেননি বাগেরহাটের বিএনপির নেতাকর্মীরা। রূপসা ব্রিজের দুই পাশে অবস্থান নেন শাসক দলের লোকজন। যারা শহরে ঢোকার চেষ্টা করেন তাদের মারধর করে বের করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। একই অবস্থা নগরীর গল্লামারি প্রবেশদ্বারেও।
আ.লীগ ও বিএনপি কার্যালয়ে ভাঙচুর : সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। দুপুর ১২টার দিকে খালিশপুর নতুন রাস্তার মোড় দিয়ে মিছিল সহকারে সমাবেশের দিকে যাচ্ছিলেন বিএনপির সমর্থকরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ সময় যুবলীগের ১৪-১৫ জনের একটি গ্রুপ তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। বিএনপির সমর্থক বেশি হওয়ায় তারা যুবলীগ নেতাকর্মীদের ওপর চড়াও হন। যুবলীগ সদস্যরা সেখান থেকে পালিয়ে যান। উত্তেজিত বিএনপির নেতাকর্মীরা আ.লীগ অফিসের চেয়ার ভাঙচুর করেন। এ ঘটনার পর যুবলীগ নেতা হোয়াইটের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ অবস্থান নেয় মোড়ে। যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিতে দেখা যায়। একই সঙ্গে দৌলতপুর থানা বিএনপি’র কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। এর আগে দুপুর ১টার দিকে নগরীর খুলনা যশোর রোডের গোয়ালখালী এলাকায় গাছের ডাল ফেলে রাস্তা আটকে দেন যুবলীগ নেতাকর্মীরা। সেখানে রাস্তা আটকে ইজিবাইক, রিকশা থামিয়ে যাত্রীদের তল্লাশি করে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ। সাধারণ যাত্রী বিষয়টি সন্দেহ মুক্ত হলে তবেই তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। দুপুর আড়াইটার দিকে নগরীর ১৪নং ওয়ার্ড ও ৯নং ওয়ার্ড বিএনপি’র কার্যালয়ে আগুন দেন শাসক দল ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতারা। দুপুর ২টার দিকে সমাবেশ থেকে বিএনপি’র ক্যাপ পরিহিত দুই কিশোর ইজিবাইকে যাওয়ার সময় তাদের আটক করেন যুবলীগ নেতাকর্মীরা। এ সময় তাদের পাশের একটি রুমে নিয়ে যান। সেখানে ভয়ভীতি দেখিয়ে জয় বাংলা স্লোগান দেওয়ার শর্তে ছেড়ে দেওয়া হয়।
অপরদিকে দুপুর ১২টার দিকে খুলনা রেলস্টেশন এলাকায় পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই সংঘর্ষের সময় রেলস্টেশনে ভাঙচুর করা হয়। বিএনপি’র সমাবেশে আগত ব্যক্তিদের বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। প্রত্যদর্শীরা জানান, দুপুর ১২টার দিকে রেলস্টেশন চত্বরে ভিড় করেছিলেন বিভিন্ন এলাকা থেকে সমাবেশে আসা বিএনপির নেতাকর্মীরা। এ সময় পুলিশ তাদের সেখান থেকে সরে যেতে বলে। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের বাগবিতণ্ডা হয়। পুলিশ নেতাকর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ করলে বিএনপি নেতাকর্মীরা ইটপাটকেল ছুড়ে মারেন। সেই ইট গিয়ে লাগে স্টেশনের জানালা-দরজায়। সেখান থেকে কাঁচ ভেঙে পড়ে। প্রায় আধা ঘণ্টা পর পরিস্থিতি শান্ত হয়। এদিকে নগর বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম জহিরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছিয়া সি ফুডে হামলা চালান স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ নেতাকর্মীরা। তিনি অভিযোগ করেন, সমাবেশের দিন দুপুরে একদল সশস্ত্র লোক মাছ কোম্পানির ভেতরে প্রবেশ করে বিভিন্ন জিনিসপত্র ভাঙচুর করে। এ সময় কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মারধর করা হয়।
বাধার বিষয়ে বিএনপি নেতা যা বললেন : খুলনা মহানগর বিএনপি’র সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন বলেন-সমাবেশ শেষ হওয়া পর্যন্ত ২০০ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একদিকে পুলিশের গ্রেফতার হয়রানি অন্যদিকে শাসক দলের নেতাকর্মীদের হামলা-নির্যাতনের তাণ্ডব উপেক্ষা করে নেতাকর্মীরা সমাবেশে উপস্থিত হয়েছেন। শাসক দলের নেতাকর্মীদের হাতে নিগৃহীত হয়েছেন অর্ধশত নেতাকর্মী। ফুলতলা থেকে ট্রলারে সমাবেশে আসছিলেন বিএনপি’র কর্মীরা। এ সময় খানজাহান আলী থানার কাছে পৌঁছালে সেখানে শাসক দলের লোকজন বাধা দেন। ট্রলার লক্ষ করে গুলি ছোড়ে তারা। একই ভাবে পাইকগাছা, দিঘলিয়া ও নড়াইল থেকে আসা বিএনপি’র নেতাকর্মীদের লক্ষ করে গুলি ছোড়া হয় চরেরহাট এলাকায়। কাউন্সিলরের ক্যাডার বাহিনী এ হামলা চালায়। অন্যদিকে ১২নং ওয়ার্ড যুবদল নেতা বাবুকে কুপিয়ে পায়ের রগ কেটে দিয়েছে এবং খালিশপুর থানা বিএনপি’র নেতা মুনসুর আলী বাবলুর চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। তারা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। ১০নং ওয়ার্ড যুবদল নেতা আব্দুল মতিন গুরুতর জখম হয়েছেন। মিছিলে আসার সময় তাদের ওপর হামলা করে আওয়ামী লীগের লোকজন। ১৮নং ওয়ার্ডে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয়। শিববাড়ি মোড়ে দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন তারা। তিনি বলেন-আমার রাজনৈতিক জীবনে এমন বাধার সম্মুখীন হইনি। মোড়ে মোড়ে বাধার এমন নজির খুলনার রাজনীতিতে আগে কখনও হয়নি।
চুয়াডাঙ্গা থেকে খুলনাগামী সব ট্রেন দেরিতে ছেড়েছে : চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, শনিবার রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী আন্তঃনগর সাগরদাঁড়ী এক্সপ্রেস ট্রেনটি চুয়াডাঙ্গা থেকে ৮ ঘণ্টা দেরিতে ছেড়ে যায়। সকাল সোয়া ৯টায় ট্রেনটি যাওয়ার কথা থাকলেও সেটি যায় বেলা প্রায় ৫টার দিকে। এছাড়া ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা আন্তঃনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি চুয়াডাঙ্গা থেকে ২ ঘণ্টা দেরিতে বেলা আড়াইটায় ছেড়ে যায়। খুলনাগামী আন্তঃনগর রূপসা এক্সপ্রেস বেলা আড়াইটায় যাওয়ার কথা থাকলেও সেটি যায় সন্ধ্যায়। একটি সূত্র জানায়, চুয়াডাঙ্গার বাইরে বিভিন্ন স্টেশনে অহেতুক ট্রেনগুলো থেমে ছিল। এ সময় যাত্রীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। চরম ভোগান্তিতে পড়েন তারা। এতে অনেক যাত্রী বাড়িতে ফিরে গেছেন। কেউ কেউ বিকল্প পথে গন্তব্যে রওয়ানা দেন।
বাগেরহাটের শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মী পথে পথে হামলায় আহত : বাগেরহাট প্রতিনিধি জানান, বাগেরহাটের বিএনপি নেতাদের দাবি, সমাবেশে যাওয়ার সময় পথে হামলায় বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। বাগেরহাট জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম জানান, খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় মহাসমাবেশে লোকসমাগম ঠেকাতে বাগেরহাটে বিএনপি নেতার্র্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে শাসক দলের নেতারা হুমকি দিয়েছে। গাড়ি বন্ধ করে দিয়েছে। পথে পথে বাধা দিয়েছে। সব উপেক্ষা করে বিএনপির নেতাকর্মীরা শুক্রবার সকাল থেকে ট্রাক, পিকআপ, মোটরসাইকেলে খুলনায় রওয়ানা দেন। মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের বাধার মুখে পড়েন তারা। শুক্রবার রায়েন্ধা, মোড়েলগঞ্জ, বাগেরহাট বাসস্ট্যান্ড, দশানী মোড় ও বারাকপুরে হামলায় আহত হন বিএনপির ৫০ নেতাকর্মী। এদের মধ্যে গুরুতর আহত হন পিরোজপুর জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি ইমরান আহম্মেদ সজিব, মোড়েলগঞ্জ পৌর শ্রমিক দলের সভাপতি মাসুদ খান চুন্নু ও যুবদল নেতা রুম্মান সেখ। শুক্রবার মধ্যরাতে কাটাখালী মোড়ে হামলায় বাগেরহাট বিএনপির আরও অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী হামলায় আহত হন। এসব বাধা পেরিয়ে বাগেরহাট থেকে বিএনপির প্রায় ১০ হাজার নেতাকর্মী মহাসমাবেশে যোগ দিয়েছেন।
মোংলায় বাস ধর্মঘটে ভোগান্তি : মোংলায় বাস ধর্মঘটে চরম বিপাকে পড়েন যাত্রীরা। শনিবার স্থায়ী বন্দর বাসস্ট্যান্ড থেকে ছেড়ে যায়নি কোনো বাস। বন্ধ ছিল ঢাকা-চট্টগ্রামের দূরপাল্লার বাস। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েন রোগী, চাকরিজীবীসহ সাধারণ যাত্রীরা। পরিবহণ মালিক প্রতিনিধি ও শ্রমিকরা বলেছেন, মালিক সমিতির নির্দেশে বাস বন্ধ রাখা হয়েছে।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews