বর্তমানে করপোরেট কর ছাড়ের সুবিধা পেতে দুটি শর্ত মানতে হয়। প্রথমত, কোম্পানির সব ধরনের আয় ও প্রাপ্তি ব্যাংকের মাধ্যমে করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। দ্বিতীয়ত, একক লেনদেন ৫ লাখ টাকার বেশি এবং বছরে ৩৬ লাখ টাকার বেশি ব্যয় ও বিনিয়োগ ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ছোট-বড় সব কোম্পানির জন্য এই শর্ত প্রযোজ্য। এ নিয়ে ব্যবসায়ী মহল থেকে দীর্ঘদিন যাবৎ আপত্তি জানানো হয়ে আসছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ২০২৬-২৭ ও ২০২৭-২৮ অর্থবছরের জন্য একক লেনদেনে ৫ লাখ টাকার বেশি এবং বার্ষিক ৩৬ লাখ টাকার বেশি ব্যয় ও বিনিয়োগে ব্যাংক লেনদেনের শর্ত বাতিল করা হয়েছে। অর্থাৎ শুধু কোম্পানির আয় ও প্রাপ্তি ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে সম্পন্ন করলেই ছাড় পাওয়া যাবে।
শিল্প মালিকরা বলছেন, কঠিন শর্ত জুড়ে দেওয়ায় করপোরেট কর কমানো হলেও শিল্প সেই সুফল ভোগ করতে পারছে না। কারণ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অনানুষ্ঠানিক খাতের (ইনফরমাল ইকোনমি) প্রভাব বেশি। এ কারণে বহুজাতিক কমপ্লায়েন্স প্রতিষ্ঠানও এনবিআরের শর্ত পূরণ করতে পারবে না। শিল্পকে সহায়তা করতে চাইলে শর্তহীনভাবে কর কমাতে হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের কোনো কোম্পানির পক্ষে বর্তমান শর্ত পূরণ করার মাধ্যমে কর হ্রাসের সুবিধা নেওয়া সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খান বলেন, করপোরেট করে নগদ লেনদেনের শর্ত বাতিলের সিদ্ধান্তটি নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। তবে কোম্পানির রিটার্ন জমা দেওয়ার পর দায়িত্বরত কর কর্মকর্তারা যেভাবে খরচ অননুমোদন করেন, তাতে কার্যকরী কর হার ৩৫ শতাংশের বেশি হয়ে যায়। কর হার বাড়িয়ে হলেও কোম্পানি করদাতারা যেভাবে রিটার্ন জমা দেন, সেভাবে গ্রহণের বিধান করা হলে হয়রানি কমত। খরচ অননুমোদনের ক্ষমতা থাকায় বাধ্য হয়েই সব কোম্পানি করদাতাকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও কর কর্মকর্তাদের সঙ্গে অনৈতিক নেগোসিয়েশনে যেতে হয়।
তিনি আরও বলেন, কোম্পানিগুলো অনেক সময় সাপ্লায়ারদের কাছ থেকে ভুলবশত ভ্যাট-ট্যাক্স আদায় করে না। পরে সেই ট্যাক্স জমা দেওয়ার সুযোগ আইনে নেই। এ কারণে কর কর্মকর্তা সেই খরচকে ব্যবসার আয় দেখিয়ে ট্যাক্স নির্ধারণ করেন। যা কোম্পানি করদাতাদের জন্য একটি বড় বোঝা।
এসএমএসি অ্যাডভাইজরি সার্ভিসেসের পরিচালক ও হিসাববিদ স্নেহাশীষ বড়ুয়া বলেন, আয়কর আইনে পরিবর্তনের ফলে স্টক মার্কেটে আইপিওর মাধ্যমে ১০ শতাংশের কম শেয়ার রয়েছে এমন তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে ভবিষ্যতে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ অধিক কর দিতে হবে। এ ধরনের আইন বৈষম্যমূলক। ২০২৫-২৬ করবর্ষে যদি ২ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি দিতে হয়, আর ২০২৬-২৭ এবং ২০২৭-২৮ করবর্ষে যদি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি দিতে হয় তাহলে এ ধরনের কোম্পানির ওপর করভার অধিক হয়ে যায়। একটি কোম্পানি জীবনে একবার আইপিও করতে পারে। ফলে তারা যদি শেয়ার মার্কেটে আরও বেশি শেয়ার ছাড়তে চায় সে ক্ষেত্রে আরপিও (রিপিট পাবলিক অফার) করতে পারে। কিন্তু আয়কর আইনে আরপিওর বিধান না থাকায় এ ধরনের কোম্পানিগুলো বৈষম্যের শিকার হচ্ছে।
কোন খাতে করপোরেট কর কত : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার ২২ দশমিক ৫ শতাংশ। পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার ছাড়লে কর হার ২০ শতাংশ। সাধারণ কোম্পানির কর ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ, তালিকাবহির্ভূত ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর ৪০ শতাংশ, তামাক প্রস্তুতকারক কোম্পানি কর ৪৫ শতাংশ, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত মোবাইল অপারেটরের কর ৪০ শতাংশ, তালিকাবহির্ভূত মোবাইল অপারেটর ৪৫ শতাংশ, ট্রাস্ট, ব্যক্তিসংঘ ও ফার্মের করহার ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ, সমবায় সমিতি ২০ শতাংশ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ শতাংশ।