ইউপিআরে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপের বিষয় আসেনি
প্রথম নিউজ, ঢাকা : জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের ইউনিভার্সাল পিরিওডিক রিভিউ (ইউপিআর) ওয়ার্কিং গ্রুপে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের বসার বিষয়ে কোনো কথা আসেনি বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
সোমবার (১৩ নভেম্বর) জেনেভায় ইউপিআরে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা শেষে ভার্চুয়ালি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।
সাংবাদিবরা আইনমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রাখেন যে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের বিষয়ে ইউপিআরে কোনো বক্তব্য এসেছে কি না— জবাবে মন্ত্রী বলেন, সংলাপের বিষয়ে কোনো কথা আসেনি।
বিএনপির চেয়ারপরসন খালেদা জিয়া প্রসঙ্গে অন্য এক প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, খালেদা জিয়ার ব্যাপারে অত্যন্ত জোরালোভাবে আমাদের যে অবস্থা এবং যেটা বাস্তব এবং সত্য অবস্থা সেটা বলেছি।
আইনমন্ত্রী বলেন, ইউপিআর ওয়ার্কিং গ্রুপে মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় অংশ নেওয়া ১১১টি দেশের মধ্যে শতকরা ৯০ ভাগ দেশ বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে। কয়েকটি দেশ কিছু সুপারিশ করেছে। তবে কানাডা এবং স্লোভাকিয়া বাংলাদেশের মানবাধিকার বিষয়ে কড়া সমালোচনা করেছে।
তিনি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং বেলজিয়াম এরা সবাই আমাদের অগ্রগতির প্রশংসা করেছে। কিছু কিছু এরিয়া যেমন-নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করেছে। এদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র এবং বেলজিয়াম ছিল। তারা শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের কথা বলেছে। সেক্ষেত্রে আমি নির্বাচনের ব্যাপারে অত্যন্ত স্পষ্টভাবে আমাদের অবস্থান জানিয়েছি।
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কিছু বন্ধু রাষ্ট্র থেকে পাওয়া সুপারিশের বিষয়ে আইনমন্ত্রী জানান, আমরা যে সাজেশন পেয়েছি সেগুলো পরীক্ষা করব। আমরা সুপারিশগুলোর বিষয়ে আমাদের মতামত জানাব। আগামী পরশু পুরো সুপারিশগুলো আমরা পাব। সুপারিশ পেলে আমরা চিন্তা করব কোনটা কোনটা রাখব কোনটা রাখব না। সুপারিশগুলো নিয়ে আমরা অংশীজনদের সঙ্গে কাজ করব এবং ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে জমা দেব।
ইউপিআরে বাংলাদেশ নিয়ে যে বিষয়গুলো সুপারিশ করা হয়েছে তা তুলে ধরেন আনিসুল হক। তিনি বলেন, সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে— জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কার্যক্রম এবং ব্যবস্থাগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা জোরদারকরণ, জাতীয় পর্যায়ে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে বিভিন্ন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা, মানবাধিকারকমিশনকে শক্তিশালী করা, প্রতিবন্ধীদের সুরক্ষা, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা দূর করার উদ্যোগ অব্যাহত রাখা, শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতির জন্য প্রচেষ্টা জোরদারকরণ, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণ, অভিবাসী শ্রমিকের সুরক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়ন, গ্রাম পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণ, বাল্যবিবাহ রোধকরণে জোরদার প্রচেষ্টা গ্রহণ, মানব পাচার বন্ধকরণ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা সম্পর্কিত সুপারিশ।
ইউপিআরে বাংলাদেশের মানবাধিকারসহ সার্বিক বিষয় উপস্থাপন করেন আইনমন্ত্রী। তিনি বলেন, বক্তব্যের পর আমাকে প্রশ্ন করেনি। তারা গ্রহণ করেছে কি করে নাই সেটা জোর না দিয়ে যদি আমি বলতে পারি, তাদের হয়তো কোনো প্রশ্ন ছিল না।
দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি-জামায়েতের ভূমিকা প্রসঙ্গে ইউপিআরে দেওয়া বক্তব্য প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত কি করছে আমরা সেটা বলেছি। আমি মনে করেছি, এটা বলা সরকারের পক্ষ থেকে ন্যায্য। আমাদের সাংবিধানিক যে অবস্থান সেটা আমি তুলে ধরেছি।
সোমবার জেনেভায় চতুর্থ বারের মতো বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়। এর আগে, ২০০৯, ১৪ এবং ১৮ সালে ইউপিআরে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়।