আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা: আপিল শুনানি ২৬ ফেব্রুয়ারি
প্রথম নিউজ, অনলাইন: আওয়ামী লীগ নেতা ও গাজীপুরের সাবেক সংসদ সদস্য আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের করা আপিল শুনানির জন্য আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ দিন ধার্য করেন। আদালতে আসামিদের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দস কাজল।
এর আগে গত ১৪ জানুয়ারি আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের আপিল দ্রুত শুনানি করতে আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়। জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দস কাজল আসামিদের পক্ষে এ আবেদন করেন।
এর আগে ২০১৬ সালের ১৫ জুন আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল মামলার রায়ে ১১ জনকে খালাস দেন হাইকোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান (সাবেক প্রধান বিচারপতি) ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের (আপিল বিভাগ থেকে অবসর) বেঞ্চ। রায়ে বিচারিক আদালতের দেওয়া বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম সরকারসহ অন্য ছয়জনের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন উচ্চ আদালত। বিচারিক আদালতে দণ্ড পাওয়া জীবিত ২৬ আসামির মধ্যে ৮ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। আগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত একজন পলাতক থাকায় তার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি আদালত। আসামিদের মধ্যে ১৭ জন কারাগারে ও ৯ জন পলাতক রয়েছেন। এছাড়া দুজন মারা গেছেন।
বিচারিক আদালতের দেওয়া ফাঁসি ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড থেকে খালাস পাওয়া ওই ১১ আসামি হলেন, আমির হোসেন, জাহাঙ্গীর ওরফে বড় জাহাঙ্গীর, ফয়সাল (পলাতক), লোকমান হোসেন ওরফে বুলু, রনি মিয়া ওরফে রনি ফকির (পলাতক), খোকন (পলাতক), দুলাল মিয়া, রাকিব উদ্দিন সরকার পাপ্পু, আইয়ুব আলী, জাহাঙ্গীর ও মনির।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ৮ জনের মধ্যে ৭ জনকে বিচারিক আদালতের দেওয়া ফাঁসির সাজা কমেছে এবং বাকি একজনের আগের সাজাই বহাল রয়েছে। এদিকে, মারা যাওয়া দুই আসামির করা আপিলের নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন আদালত।
আর মামলার মোট ৩০ আসামির মধ্যে দু’জন বিচারিক আদালতেই খালাস পেয়েছিলেন।
চূড়ান্ত রায়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা ছয়জন হলেন, নুরুল ইসলাম সরকার, নুরুল ইসলাম দিপু (পলাতক), মাহবুবুর রহমান মাহবুব, শহীদুল ইসলাম শিপু, হাফিজ ওরফে কানা হাফিজ ও সোহাগ ওরফে সরু।
মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সাতজন হলেন, মোহাম্মদ আলী, সৈয়দ আহমেদ হোসেন মজনু (পলাতক), আনোয়ার হোসেন ওরফে আনু (পলাতক), রতন মিয়া ওরফে বড় রতন, ছোট জাহাঙ্গীর (পলাতক), আবু সালাম ওরফে সালাম ওমশিউর রহমান ওরফে মশু (পলাতক)। যাবজ্জীবন বহাল থাকা আসামি হলেন নুরুল আমিন।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অহিদুল ইসলাম টিপু পলাতক থাকায় তার সাজার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি আদালত।
বিচারিক আদালতে ফাঁসির দণ্ডাদেশ পাওয়ার পর মারা যাওয়ায় আল আমিন ও রতন ওরফে ছোট রতনের আপিলের নিষ্পত্তি করে দেন হাইকোর্ট।
৩০ আসামির বাকি দু’জন কবির হোসেন ও আবু হায়দার ওরফে মিরপুরইয়া বাবু বিচারিক আদালত থেকেই খালাস পেয়েছিলেন।
২০০৪ সালের ৭ মে গাজীপুরের টঙ্গীর নোয়াগাঁও এম এ মজিদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক জনসভায় আহসান উল্লাহ মাস্টারকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ঘটনার পরদিন আহসান উল্লাহ মাস্টারের ভাই মতিউর রহমান টঙ্গী থানায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১০/১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
এরপর বিচার শেষে ২০০৫ সালের ১৬ এপ্রিল বিচারিক আদালত নূরুল ইসলাম সরকারসহ ২২ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ ও দু’জনকে খালাস দেন।
পরে বিচারিক আদালতের রায়ের বিষয়ে হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স ও জেল আপিল হয়। এর পর ২০১৬ সালের ১৫ হাইকোর্টের রায় ঘোষণা করা হয়। মামলার রায়ে ৬ জনের ফাঁসি বহাল। এই মামলায় ৩০ আসামির মধ্যে নিম্ন আদালতে মোট ২৮ জনের দণ্ড হয়। এর মধ্যে ২২ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ছয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। এসব আসামিদের মধ্যে ১৭ জন কারাগারে ও ৯ জন পলাতক রয়েছেন। এছাড়া দুজন মারা গেছেন।
হাইকোর্টের আপিল শুনানি করেন যে সকল আইনজীবী:
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রধান আইন কর্মকর্তা (মরহুম) অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তার সঙ্গে ছিলেন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাসুদ হাসান চৌধুরী পরাগ ও রোনা নাহরীন। অন্যদিকে, বাদীপক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এম.আমীর -উল -ইসলাম, মরহুম আবদুল মতিন খসরু প্রমুখ। অপরদিকে, আসামিপক্ষে আপিল শুনানিতে অংশ নেন মরহুম বিচারপতি টিএইচ খান, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, খন্দকার মাহবুব হোসেন ও এ জে মোহাম্মদ আলী।
হাইকোর্টের রায়ের পর ১১ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল:
আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলায় হাইকোর্টের রায়ে খালাসপ্রাপ্ত ১১ জনের রায় স্থগিত চেয়ে আপিল আবেদন করেন রাষ্ট্রপক্ষ।
খালাস পাওয়া ১১ আসামি হলেন, আমির হোসেন, জাহাঙ্গীর ওরফে বড় জাহাঙ্গীর, ফয়সাল (পলাতক), লোকমান হোসেন ওরফে বুলু, রনি মিয়া ওরফে রনি ফকির (পলাতক), খোকন (পলাতক), দুলাল মিয়া, রাকিব উদ্দিন সরকার ওরফে পাপ্পু, আইয়ুব আলী, জাহাঙ্গীর (পিতা মেহের আলী) ও মনির। ১১ জনের মধ্যে তিন আসামি পালাতক রয়েছেন যারা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত।
আবেদন করার বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ বলেন, আমরা খালাসপ্রাপ্তদের রায় এজন্য স্থগিত চেয়েছি যেন মামলার রায়ের অনুলিপি প্রকাশিত হওয়ার পর আসামিরা বের হয়ে যেতে না পারে। কারণ তাদের বিরুদ্ধে আমরা আপিল বিভাগে নিয়মিত আপিল করবো।
দুইবারের সাবেক সংসদ সদস্য আহসানউল্লাহ মাস্টারকে বিএনপি জোট সরকারের সময়ে ২০০৪ সালের ৭ মে দুপুরে একদল সন্ত্রাসী টঙ্গীর নোয়াগাঁও এম এ মজিদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে। হত্যার ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মতিউর রহমান মতি বাদী হয়ে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে দ্রুত বিচার আইনে টঙ্গী থানায় মামলা করেন।
মামলায় প্রধান আসামি করা হয় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের ছেলে বলে পরিচিত জাতীয় ছাত্রসমাজের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম দীপুকে। এ ছাড়া এজাহারে যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় শিল্পবিষয়ক সম্পাদক নূরুল ইসলাম সরকারকে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার মো. খালেকুজ্জামান প্রায় দুই মাস তদন্ত শেষে ৩০ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। আসামিদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও জাতীয় পার্টির সহযোগী সংগঠন জাতীয় ছাত্রসমাজের নেতাকর্মী। আর পাঁচজন আসামি বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী।