আবু সাঈদ হত্যা মামলায় ১৬ দিন পর শিশু মাহিমের জামিন

আদালত চত্বরে মানুষের ঢল

আবু সাঈদ হত্যা মামলায় ১৬ দিন পর শিশু মাহিমের জামিন

প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: রংপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় ১৬ দিন জেল খাটার পর অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশু আলফি শাহরিয়ার মাহিম জামিনে মুক্তি পেয়েছে। গতকাল আলোচিত এ মামলার শুনানিতে শিক্ষার্থী, কৌতুহলী মানুষের ঢল নামে আদালত চত্বরে। রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান মাহিমের পরিবারকে আশ্বস্ত করেছেন মাহিমের মুক্তিতে সার্বিক সহায়তা করা হবে। গতকাল দুপুরে রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মাহিমের আইনজীবীরা জামিনের জন্য আবেদন করেন। আদালতের বিচারক মো. মোস্তফা কামাল মাহিমের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। এ সময় মাহিমের বাবা শাহজালাল, মা আঞ্জুম আরা ও বোন সানজানা আক্তার স্নেহাসহ তাদের স্বজনরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

মাহিমের আইনজীবী জোবাইদুল ইসলাম বলেন, মাহিমকে জামিন দেয়া হয়েছে। এখনো সে মামলা থেকে অব্যাহতি পায়নি। সে মামলার আসামি হিসেবেই রয়েছে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অনেক বড় বড় কথা বলেন। তাদের প্রশাসন আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় কোনো মামলা না করায় পুলিশ সুযোগ পেয়ে সেই মামলাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে শিশু মাহিমকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছে। 

আজ মিডিয়া, আইনজীবী, সচেতন মহল ও আন্তর্জাতিক মহলের চাপের মুখে মাহিম ছাড়া পেলো। তা না হলে এই মামলা থেকে তার মুক্তি কঠিন হয়ে যেতো। মাহিমের বোন সানজানা আক্তার স্নেহা বলেন, গতকাল পুলিশ কমিশনার বলেছিলেন, আমার ভাইকে কোনো মামলায় রাখবেন না। আজ তাকে জামিন দেয়া হলো। আমরা এতে খুশি। আমরা চাই মামলা নিয়ে মাহিমসহ আমার পরিবার যেন আর ট্রমাটাইজ হয়ে না পড়ে। মাহিমের মা আঞ্জুমান আরা ময়না বলেন, মাহিমের স্বপ্ন ছিল বুয়েটে পড়া। প্রকৌশলী হওয়া। আমার ছেলে কি অন্যায় করেছে? বাড়ির সামনে থেকে আমার ছেলেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমার ছেলেকে বিনা অপরাধে গ্রেপ্তারসহ জেলহাজতে পাঠানোর সঙ্গে জড়িতদের আমি বিচার চাই। 

মাহিমের বাবা মো. শাহজালাল বলেন, আমি মামলা থেকে মাহিমের অব্যাহতি চাচ্ছি। পুলিশ কমিশনার বলেছিলেন, আমাদের আর কোর্টে আসতে হবে না। আমি আপনারদের মাধ্যমে জানাই তার এই কথা যেন বাস্তবায়ন হয়।  এ ব্যাপারে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, তাজহাট থানা আক্রমণের সময় থানার সামনে থেকে পুলিশ মাহিমকে গ্রেপ্তার করে। সেই সময় তার বয়স সম্পর্কে জানা সম্ভব হয়নি। তার বয়স ১৭ হলেও দেখানো হয়েছে ২০ বছর। আমি বিষয়টি জানতে পেরে তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলি এবং মাহিমের মুক্তিতে সার্বিক সহযোগিতা করার কথা জানাই। আশা করছি আদালতের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মাহিম মামলা থেকে মুক্তি পাবে। 
উল্লেখ্য, গত বুধবার দুপুর ১টার দিকে মাহিমের বড় বোন সানজানা আক্তার স্নেহা তার ফেসবুকে ছোটভাই পুলিশ লাইন্স স্কুল এন্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র আলফি শাহরিয়ার মাহিম (১৬)কে আবু সাঈদ হত্যা মামলায় পুলিশ গ্রেপ্তারসহ আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়েছে উল্লেখ করেন। ভাইয়ের মুক্তির জন্য তিনি সকলের কাছে সহযোগিতা চান। ফেসবুকের এ পোস্টটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে তা বিভিন্ন মহলের নজরে আসে। এরপর সাধারণ মানুষের মাঝে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা দেখা যায়।