আবারও ভোট ডাকাতির নির্বাচন করতে প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী রণপ্রস্তুতি শুরু করেছে: রিজভী

আবারও ভোট ডাকাতির নির্বাচন করতে প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী রণপ্রস্তুতি শুরু করেছে: রিজভী

প্রথম নিউজ, ঢাকা: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন জাতীয় নির্বাচন যখন ঘনিয়ে আসে তখন বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবী মামলা,হামলা নির্যাতন এবং পাইকারী গ্রেফতার অভিযানে ঝাঁপিয়ে পড়ে আওয়ামী অবৈধ সরকারের দলবাজ প্রশাসন। ভোট ডাকাতির নানা রকম কারিগরি করতে মাঠ সাজানো শুরু হয়। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের মতো সেই একই প্রক্রিয়ায় পুরানো পথে হাঁটতে শুরু করেছে তারা। ইতোমধ্যে প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী রণপ্রস্তুতি শুরু করেছে। বিএনপির  আজ দুপুরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এসব অভিযোগ করেন।
বিএনপির মুখপাত্র বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশ প্রশাসনের দলবাজ হোমড়া চোমড়া ও প্রশাসনের অফিসাররা আবারো ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো রাজধানীর নিউ ইস্কাটনের বিয়াম ভবনসহ এখানে সেখানে ভোট ডাকাতির কলাকৌশল ও মাঠ সাজানো নিয়ে গুপ্ত বৈঠক শুরু করেছেন। 
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ক্ষমতাসীন অবৈধ সরকার নিজেদের ‘তখতে তাউস’ রক্ষা করতে সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও গায়েবী মামলা দিতে শুরু করেছে। এখনো আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীকে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এই আওয়ামী আমলে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও গায়েবি মামলায় সারাদেশে প্রায় ৪০ লাখের অধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। গণতান্ত্রিক আন্দোলন বাধাগ্রস্ত করতে সম্প্রতি গায়েবি মামলা দায়েরের সূত্রপাত করেছে গণবিচ্ছিন্ন স্বৈরাচারী সরকারের প্রশাসন। কোনো কিছু ঘটেনি, হঠাৎ বলে দিলো-নাশকতা হয়েছে। নিজেরাই বোমা রেখে মামলা দিচ্ছে, যার সুস্পষ্ট প্রমাণ এবার দেখা গেছে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যেখানে পুলিশ নিজেরাই বোমাসহ প্রবেশ করেছে বিএনপি নেতাকর্মীদের ফাঁসাতে। পুলিশ যে বোমা নিয়ে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢুকেছে সেই ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। নিজেদের অফিস ভাংচুর করে বিরোধী দলের নেতাকর্মীকে আসামি করার খেলা চলছে। ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ কেউ শুনেনি, দেখেওনি। কিন্তু আসামি করা হয় মৃত ব্যক্তি ও কারাবন্দি নেতাদের। সারাদেশে চলছে ইতিহাসের জঘন্যতম এই ভয়াবহ মামলাবাজী আর আটক বানিজ্য। তিনি ছোট্ট একটি উদাহরণ দিয়ে বলেন,গত বুধবার দৈনিক সমকালে “মৃত ব্যক্তি, কারাবন্দিও ককটেল ছুড়েছেন!” শিরোনামে গায়েবী ও মিথ্যা মামলা নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে-রাজধানীতে মৃত ব্যক্তিকেও ককটেল বিস্ফোরণের আসামি করেছে পুলিশ। একই অভিযোগে প্রবাসী এবং কারাবন্দিদেরও আসামি করেছে তারা। পুলিশের বিস্ময়কর এই সমস্ত্র তৎপরতায় প্রমাণিত হয়-অবৈধ সরকার আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে এক সর্বনাশা নিষ্প্রাণ, নিস্তেজ পরিস্থিতি তৈরী করতে কার্যক্রম শুরু করেছে। 
তিনি বলেন, দেশের প্রায় প্রতিটি থানা-উপজেলার দৃশ্যপট অভিন্ন। এই গায়েবী মামলা গ্রেফতার নিয়ে বিশ্বের গণতন্ত্রকামী দেশ, জাতিসংঘ এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানালেও নিশিরাতের সরকার নিজেকে রক্ষা করতে এই অপকর্মে মরিয়া। ২০২১ সালের ২৪ জুন হাইকোর্ট এর একটি বেঞ্চ গায়েবি মামলা করে নিরাপরাধ মানুষকে হয়রানি থেকে রক্ষায় পাঁচ দফা নির্দেশনা দিলেও তা পরোয়া করেনা আওয়ামী সরকারের পুলিশ প্রশাসন। পুলিশ বাহিনী সরকারি দলীয় সংস্থায় পরিণত হয়েছে-এমন আলোচনা এখন সর্বত্র। বিএনপির মুখপাত্র বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশ প্রশাসনের দলবাজ হোমড়া চোমড়া ও প্রশাসনের অফিসাররা আবারো ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো রাজধানীর নিউ ইস্কাটনের বিয়াম ভবনসহ এখানে সেখানে ভোট ডাকাতির কলাকৌশল ও মাঠ সাজানো নিয়ে গুপ্ত বৈঠক শুরু করেছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করার প্যাকেজ খরচ হিসাবে ১২২৬ কোটি টাকার বাজেট চেয়েছে পুলিশ। এর মধ্যে নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দমনে ১৫৮ কোটি টাকায় অস্ত্র ও গোলাবারুদ কেনাকাটায় ব্যয় হবে। সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ঠেকাতে ৫৪০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি ক্রয়ের প্রস্তাব রয়েছে তাদের বাজেটে। তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি সরঞ্জামাদি ও কম্পিউটার এবং সফটওয়্যার কিনতে মোট ব্যয় হবে ২০ কোটি টাকা। সর্বশেষ ৮ নম্বর খাতে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক কর্মসূচি বৃদ্ধির ফলে পুলিশের গতিও বাড়াতে হবে। এখানেই থেমে নেই আওয়ামী নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় পরিচয় দেখে পুলিশে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনী রদবদল ও পদোন্নতি শুরু হয়েছে। তিনি হুসিয়ার উচ্চারণ করে বলেন, এতোসব করে এবার আর পার পাওয়া যাবে না। জনগণ রাজপথে নেমেছে অধিকার আদায়ের আন্দোলনে। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন না দিলে সরকারের পতন হবে।
বিএনপি নেতা বলেন, শেখ হাসিনার স্বেচ্ছাচারিতার শিকার হয়ে বেশ কয়েক মাস কারাগারে কাটাতে হয়েছে। অন্যায়ভাবে কারাগারে বন্দি থাকা হাজার হাজার মানুষ যেভাবে কারামুক্তির প্রহর গুনছে, একইভাবে দেশের কোটি কোটি গণতন্ত্রকামী মানুষ দেশে ক্ষমতাসীনদের মিথ্যাচার, অবিচার, অনাচার আর গণতন্ত্রহীনতার অন্ধকার থেকে মুক্তি চাইছে। মাদার অফ ডেমোক্রেসি বেগম খালেদা জিয়ার আপোষহীন সংগ্রামের অনুপ্রেরণায়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে গণতন্ত্রহীনতার অন্ধকার থেকে গণতন্ত্রকামী মানুষের মুক্তির চলমান এই মিছিলকে গুম খুন অপহরণ করে কিংবা অন্যায়ভাবে জেল জুলুম হুলিয়া দিয়ে স্তব্ধ করা যাবেনা। এখনও পর্যন্ত অন্যায়ভাবে বিএনপি’র তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না, সহ-সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর, ইউসুফ বিন জলিল, আলী আলী আকবর চুন্নু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র যুগ্ম আহবায়ক হারুনুর রশিদ হারুন, খুলনা জেলা বিএনপি’র আহবায়ক আমির এজাজ খান, যুবদল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহবায়ক গোলাম মাওলা শাহীন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ-সভাপতি রফিক হাওলাদার, ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসিফসহ শত শত নেতাকর্মী এখনও কারাগারে নির্যাতন-নিপীড়ণ ভোগ করছে। সাইফুল আলম নীরবকে কারাগারের ভেতরে ২৪ ঘন্টা লক-আপে রাখা হয়েছে, এটি একটি বিভৎস নির্যাতনের নমূণা। সরকারের মদদে কারাকর্তৃপক্ষ কর্তৃক নীরবের ওপর এহেন নির্যাতনের  তীব্র প্রতিবাদ জানান তিনি। তিনি বলেন, সরকার চক্রান্ত করে এদের জামিনে বাধা দিচ্ছে। রিজবী অবিলম্বে উল্লিখিত নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারসহ নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান। 
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভুইয়া, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় নেতা মীর শরাফত আলী সপু, সেলিমুজ্জামান সেলিম, মীর নেওয়াজ আলী, মনির হোসেন,আমিরুল ইসলাম খান আলীম, আসাদুল করিম শাহীন,শামীমুর রহমান শামীম, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, তরিকুল আলম তেনজিং, আবু নাসের রহমত উল্লাহ, আমিনুল ইসলাম,  আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।