আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিতে পরিণত হয়েছে : মির্জা ফখরুল
এই সরকার একটি দানবীয় সরকার। আজকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য বাংলাদেশের একটি সংস্থার কর্মকর্তার নিষিদ্ধ করা হয়েছে
প্রথম নিউজ, ঢাকা: আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিতে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ সোমবার বিকালে এক আলোচনা সভায় তিনি এই অভিযোগ করেন। মহানগর নাট্যমঞ্চে বিএনপির উদ্যোগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও বিজয় দিবস এই আলোচনা সভা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায় এবং বেআইনিভাবে মিথ্যা মামলায় কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে এরা আওয়ামী লীগ আজকে স্বাধীনতার বিরোধী শক্তিতে পরিণত হয়েছে। কারণ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এদেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে তিনি সেদিন তার দুই শিশুর হাত ধরে আজকে আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর হাত ধরে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী দ্বারা গ্রেফতার হয়ে তিনি কেন্টমেন্টের কারাগারে বন্দি ছিলেন ১৬ ডিসেম্বব পর্যন্ত। আজকে আপনারা তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করে রেখেছেন। এখন তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে লড়াই করছেন, মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন।
দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে দেখুন এই ৫০ বছরে এরা(সরকার) দাবি করে যে, বাংলাদেশে উন্নয়নের নাকী বন্যা বইয়ে দিয়েছে। এই ৫০ বছরে আজকে গরীর আরো গরীব হয়েছে। এখানে কিছু সংখ্যাক আওয়ামী লীগের সহায়তাপুষ্ট, মদদপুষ্ট কিছু বড়লোক আরো ধনী হয়েছে। কি হয়েছে? আজকে আমাদের দেশের কৃষকেরা তারা তাদের পণ্যের দাম পাচ্ছে না, শ্রমিকেরা তাদের শ্রমের ন্যায্য পাওনা মজুরী পাচ্ছে না। আমাদের সমস্ত রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধবংস করে ফেলেছে, শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধবংস করে ফেলেছে, আমাদের অর্থনীতি সত্যিকার অর্থে একটা পরনির্ভরশীল অর্থনীতিতে পরিণত করেছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সকলকে ঐক্য হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টির আহবান জানান বিএনপি মহাসচিব। আজকে সময় নেই। আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জনগণকে সাথে নিয়ে সমস্ত রাজনৈতিক শক্তি, ব্যক্তি সকলকে সঙ্গে নিয়ে দূর্বার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই ভয়াবহ দানবীয় যে শক্তি আমাদের বুকের ওপর চেপে বসে আছে তাদেরকে পরাজিত করে সত্যিকার অর্থে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে, একটা গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এই সরকার একটি দানবীয় সরকার। আজকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য বাংলাদেশের একটি সংস্থার কর্মকর্তার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এটা আমাদের জন্য লজ্জার খবর। আজকে সরকারের সাবেক প্রতিমন্ত্রী দেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে তিনি কোথাও জায়গা পাচ্ছেন না, তাকে দেশে ফিরে আসতে হয়েছে। এসব কাদের জন্য হচ্ছে? আজকে যারা ক্ষমতায় জোর করে দখল করে আছে তাদের জন্য, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকারের জন্য।
তিনি বলেন, ৫ বছর পর পর দেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংযোজন করেছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। আওয়ামী লীগ সরকার গায়ের জোরে তা বাতিল করে ক্ষমতায় আছে। এখন আগামী নির্বাচন করতে নাটক শুরু করেছে। নাটকের প্রথম মঞ্চায়ন হয়েছে আজ (গতকাল) বঙ্গভবনে। তারা (রাষ্ট্রপতি) নির্বাচন কমিশন করার জন্য সার্চ কমিটি করার আলোচনা শুরু করেছে। এগুলো তামাশা। গত তিনটি নির্বাচনে আমরা দেখেছি নির্বাচন কমিশন রাবার স্ট্যাম্পের ভূমিকা পালন করেছে। শেখ হাসিনার সরকার যতদিন আছে কোনো নির্বাচন কমিশন এ দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবেন না। এগুলো নাটক, এগুলো তামাশা। এখানে মূল সঙ্কট বর্তমান স্বৈরাচারী সরকার। এ সরকারকে হটিয়ে নির্দলীয় সরকার গঠন করতে হবে, তখন নির্বাচন কমিশন গঠন হলে পরিবেশ সৃষ্টি হবে। তার আগে এসব নাটক করে লাভ হবে না।
ড. মোশাররফ বলেন, ‘বাংলাদেশ এবার যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সামিটে আমন্ত্রণ পায়নি। আমরা এতোদিন যা বলছি তা আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটা অত্যন্ত লজ্জার, অত্যন্ত কষ্টের। আমরা যখন বিজয় দিবস পালন করছি, স্বাধীণতার সুবর্ণজয়ন্তী করছি, তখন বাংলাদেশে ঘৃণিত একটি ফ্যাসিস্ট দেশ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। যেখানে গণতন্ত্র নেই সেদেশে মানবাধিকার থাকতে পারে না। ৭২-৭৫ সালে আওয়ামী লীগ রক্ষীবাহিনী করে হাজার হাজার মানুষ হত্যা করেছে। ক্ষমতায় থাকতে গুম, খুন ও অত্যাচার করছে। এ দেশকে কেউ মানবিক বলবে না, দানবীয় বলবে।
তিনি বলেন, এই সরকার একটি দানবীয় সরকার। আজকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য বাংলাদেশের একটি সংস্থার কর্মকর্তার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এটা আমাদের জন্য লজ্জার খবর। সরকারের সাবেক প্রতিমন্ত্রী দেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে তিনি কোথাও জায়গা পাচ্ছেন না, তাকে দেশে ফিরে আসতে হয়েছে। এসব কাদের জন্য হচ্ছে? আজকে যারা ক্ষমতা জোর করে দখল করে আছে তাদের জন্য, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকারের জন্য।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও সহ প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলিমের পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক, ঢাকা মহানগর দক্ষিনের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক হাসান শহিদুল ইসলাম বাবুল, মৎস্যজীবী দলের আহবায়ক রফিকুল ইসলাম মাহতাব প্রমুখ। আলোচনা সভার শুরুতেই কোরআন তেলোয়াত করেন ওলামা দলের আহবায়ক শাহ নেছারুল হক।
এছাড়াও আলোচনা সভায় বিএনপির সহ দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, সহ প্রচার সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, সহ সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ সভাপতি আনু মোহাম্মাদ শামীম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, সহ সাধারণ সম্পাদক সর্দার নুরুজ্জামানসহ বিএনপি ও তার অঙ্গ সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: