অভিযোগের বিষয় জানতে গিয়ে থানায় পুলিশের মারধরের শিকার বাবা
শনিবার (২০ আগস্ট) বিকেলে শিবালয় থানার ভেতরে এ ঘটনা ঘটে।
প্রথম নিউজ, মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জের শিবালয় থানায় অভিযোগের বিষয়ে জানতে গিয়ে পুলিশ সদস্য আরিফের হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন সুজন হোসেন (৩০) নামে এক পোশাককর্মী। শনিবার (২০ আগস্ট) বিকেলে শিবালয় থানার ভেতরে এ ঘটনা ঘটে।
মারধরের শিকার সুজন হোসেন শিবালয় উপজেলার উলাইল ইউনিয়নের রুপসা এলাকায় কোদালিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ঢাকার একটি পোশাক কারখানায় কর্মী হিসেবে কাজ করেন।
জানা গেছে, সুজন হোসেনের চার বছর বয়সী মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টা করে শিবালয় উপজেলার উলাইল ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ নেতা মান্নান খানের ছোট ভাই রজ্জব খান। এ ঘটনা জানার পর সুজন ঢাকা থেকে বাড়িতে চলে আসেন। এরপর এলাকায় গণ্যমাণ্য ব্যক্তিদের কাছে বিচার দাবি করেন। কিন্তু অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রভাবশালী হওয়ায় এলাকায় এই ঘটনার কোনো বিচার পাননি তিনি। পরে বিচারের দাবিতে শিবালয় থানায় গত ১৪ আগস্ট একটি লিখিত অভিযোগ দেন সুজন।
কাজের সুবাদে স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় থাকেন সুজন। দুদিন আগে ঢাকা থেকে বাড়িতে এসেছেন তিনি। শনিবার কর্মস্থল ঢাকায় যাওয়ার আগে অভিযোগের বিষয়ে জানতে শিবালয় থানায় যান সুজন। সেখানে গিয়ে থানা পুলিশের সদস্য আরিফের হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন সুজন হোসেন।
পুলিশের হাতে মারধরের শিকার সুজন হোসেন বলেন, ৬-৭ মাস আগে আমার শিশু মেয়ের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন খজন বংশের রজ্জব খান। পরে স্থানীয় মুরুব্বিরা ওই ঘটনার মীমাংসা করেন। এই ঘটনা আমি জানতাম না। এরপর আবারও রজ্জব খান আমার মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। পরে আমি জানতে পেরে ঢাকা থেকে বাড়িতে আসি এবং এলাকায় মুরুব্বিদের কাছে বিচার চাই। কিন্তু তারা আমাকে বলেন, চুপচাপ মিটায়ে ফালাও। পরে আমি বলি, বিচারের মতো বিচার করে দেন, যেন ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের কাজ করতে সাহস না পায়।
তিনি বলেন, এলাকায় বিচার না পেয়ে শিবালয় থানায় অভিযোগ করি গত ১৪ আগস্ট। সেই অভিযোগের বিষয়ে জানতে শনিবার বিকেলে আমিসহ আমার মেয়ে ও মাকে নিয়ে থানায় যাই। থানায় ওসি স্যার না থাকায় দারোগা আরিফ আমাকে ডাকলে, তার কাছে গিয়ে সব ঘটনা খুলে বলি। এরপর আমি চলে আসার সময় আরিফ (পুলিশ সদস্য) পেছন থেকে আমার শার্টের কলার ধরে টানতে টানতে ওসি স্যারে রুমের পাশের একটি রুমে নিয়ে যায়। সেখানে আমাকে গালি দিয়ে অনেক মারধর করে। আরিফ বলে তুই কি জানস, কার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিচ্ছোস?
সুজন বলেন, তুই এইটা নিয়া বেশি বাড়াবাড়ি করতাছোস। তুই আমাকে চিনছ, তুই দারোগা আরিফরে চিনস, আমার নাম দারোগা আরিফ। তুই কার লগে লাগছ? পরে আমি বলি, স্যার আমি কাউরে চিনি না, আমি আইছি আমার অভিযোগের বিষয়ে জানতে। আমাকে গালি দিয়া আরিফ বলে, তুই কার লগে লাগচ্ছস। তুই বেশি কথা কবি, তরে এহনি দুই পা ওপরে ঝুলায়ে বাইরা কোর্টে চালান করে দিমু। পরে আমারে দুইডা লাথি মাইরা ওইখান থেকে বাহির করে দিছে। এরপর আমি সেখান থেকে চলে আসি।
বিচার দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে সুজন বলেন, আমার মতো বিচারের জন্য থানায় যারা যাবে, তারা যেন সঠিক বিচার পায়। পুলিশের হাতে তারা যেন নির্যাতনের শিকার না হয়। এ বিষয় জানতে শিবালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহিনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলে তিনি রিসিভ করেননি।
পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিবালয সার্কেল) নুরজাহান লাবানী বলেন, আমি ওই ঘটনা নিয়ে আছি। ভিকটিমকে আমার কাছে নিয়ে আসছি। আগের ঘটনাটি যাতে আসামি বুঝতে না পারে, এজন্য টেকনিক্যাল কারণে হেল্টআপ করা হয়েছিল। আর আজকের ঘটনায় ইতোমধ্যে ওই পুলিশ সদস্য আরিফকে শিবালয় থানা থেকে জেলা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews
