৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি কি বাতিল হবে?

এদিকে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) পরীক্ষাসহ ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের সংবাদ প্রকাশের পর থেকেই চাকরি প্রত্যাশীরা স্যোশাল মিডিয়ায় নানা মন্তব্য করছেন।

৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি কি বাতিল হবে?

প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: চাকরি প্রত্যাশীদের আস্থা ও ভরসার জায়গা পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। অন্য সবখানে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটলেও চাকরিপ্রত্যাশীদের আস্থার জায়গা ছিল পিএসসি। কারণ পিএসসির অধীনে অন্তত প্রশ্নফাঁস সম্ভব নয়। তবে সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের (চ্যানেল-২৪) অনুসন্ধানে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি সামনে এসেছে। যার সঙ্গে জড়িত পিএসসির চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী জীবন ও পিএসসির ঊর্ধ্বতন তিন কর্মকর্তাসহ ১৭ জন। যাদের গতকাল গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

এদিকে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) পরীক্ষাসহ ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের সংবাদ প্রকাশের পর থেকেই চাকরি প্রত্যাশীরা স্যোশাল মিডিয়ায় নানা মন্তব্য করছেন। অনেকে বিষয়টি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন, আবার অনেকে ফাঁস হওয়া প্রশ্নে অনুষ্ঠিত পরীক্ষাগুলো বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। ৪৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া হাবিব নামের এক শিক্ষার্থী তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে তা কখনই বিশ্বাসযোগ্য ছিলো না। কিন্তু এখন যা দেখলাম তাতে সবই সম্ভব মনে হচ্ছে। পিএসসির অধীনে প্রশ্নফাঁস হলে পড়ালেখার কোন যৌক্তিকতা দেখি না। পিএসসির কাছে অনুরোধ আমার ৭০০ টাকা ফেরত দিন। আর না পারলে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা বাতিল করুন।’ 

অন্যদিকে আবির নামের আরেক শিক্ষার্থী নিজের ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে বলেন, ‘ফাঁস হয়েছিল ৪৬তম বিসিএসের প্রশ্ন। এছাড়াও ৩৩তম বিসিএস থেকে প্রায় ৩০টি ক্যাডার নন-ক্যাডার পরীক্ষার প্রিলি, লিখিত এমনকি ভাইভার প্রশ্নপত্রও ফাঁস হয়েছিল। তরুণ সমাজের কাছে একমাত্র ভরসার জায়গা ছিল পিএসসি। এটিও বাদ গেল না পচনের হাত থেকে।’ এদিকে প্রশ্নপত্র ফাঁস সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই শিক্ষার্থীরা ৪৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা বাতিল চেয়েছেন। তবে পরীক্ষা বাতিল হবে কিনা এ সম্পর্কে এখনও কিছু জানায়নি পিএসসি। 

বিষয়টি সম্পর্কে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন গণমাধ্যমে বলেন, ‘কমিশনের ক্ষমতাবলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠতে পারে। সেটি প্রমাণ হতে হবে। প্রমাণ হলে, কমিশন যদি মনে করে তাহলে প্রশ্নফাঁস হওয়া বিসিএসের কার্যক্রম বাতিলও হতে পারে।’ এদিকে বিসিএসের প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগের ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। গতকাল সোমবার রাতে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন পিএসসির চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন।

কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে সরকারি কর্ম কমিশনের যুগ্মসচিব আব্দুল আলীম খানকে। কমিটির সদস্য পিএসসির পরিচালক দিলাওয়েজ দুরদানা। তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে পিএসসির পরিচালক মোহাম্মদ আজিজুল হককে।

পিএসসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্রশ্নফাঁস নিয়ে আমাদের ব্যাখ্যা আমরা দিয়েছি। তারপরও পুরো ঘটনাটি তদন্ত করতে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। যার বিরুদ্ধেই অভিযোগ প্রমাণিত হবে, সঙ্গে সঙ্গেই তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেবো না আমরা। তবে কত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে তদন্ত কমিটি, সে বিষয়ে কিছু জানাননি তিনি।’

গত ১২ বছরে বাংলাদেশ রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী পদ, বিসিএসসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) দুজন উপপরিচালক, একজন সহকারী পরিচালকসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। আজ (মঙ্গলবার) সকালে তাদের আসামি করে রাজধানীর পল্টন থানার মামলা হয়েছে।