সরকারের জন্য ১০ নম্বর মহা বিপদ সংকেত চলছে:রিজভী
নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, এবারে আর যেনতেন নির্বাচন করতে পারবেনা। চারদিক থেকে সরকারের বিরুদ্ধে অন্ধকার ধেয়ে আসছে। সরকারের জন্য ১০ নম্বর মহা বিপদ সংকেত চলছে। শেখ হাসিনার হুংকার আর কাজে আসবে না। নির্দলীয় সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আজ নয়াপল্টনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির মুখপাত্র বলেন,আজকে অবহেলিত, বঞ্চিত, নির্যাতিত, নিপীড়িত জনগণ গ্রাম থেকে শহরে সকল পর্যায়ে নানা শ্রেনীপেশার মানুষ জেগে উঠতে শুরু করেছে। স্বৈর রুদ্রশাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়েও জনগণ নিপীড়কদের প্রতিহত করতে শুরু করেছে। দেশের মানুষ অধিকার ঐক্যবদ্ধ। বাংলাদেশের দুঃশাসনে বিশ্ববিবেকও জাগ্রত হয়েছে। বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় আশ্রয়ে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ভেঙ্গেচুরে তছনছ করে গোটা জাতিকে বন্দিশালায় আটকে রাখার এক দমবন্ধ করা দুঃশাসনের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক বিশ্ব ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো সোচ্চার হয়েছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে যে অন্যায়ভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বন্দি করে রাখা হয়েছে এবং দেশনায়ক তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সকল মামলা প্রতিহিংসামূলক তা আজ বিশ্ববাসীর কাছে পরিস্কার।
রিজভী আহমেদ বলেন, আজ দেশে গণতন্ত্রের সংকটকে আড়াল করতে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে তথাকথিত আওয়ামী বুদ্ধিজীবী, কলামিষ্টসহ উচ্ছিষ্টজীবীরা। বর্তমান গণতন্ত্র সংকটের প্রতিপক্ষ হিসেবে ‘বাঙ্গালী জাতি, বাঙ্গালী সংস্কৃতি’ ইত্যাদি অকারণে বাগড়ম্বর তুলে অবৈধ সরকারকে বৈধতা দানের এক মরিয়া প্রয়াসে লিপ্ত রয়েছে তারা। বাংলাদেশী জাতি তাদের স্বতন্ত্র সত্তার এবং ভাষাগত অধিকার প্রতিষ্ঠার ধারাবাহিক সংগ্রাম যা মুক্তিযুদ্ধে আত্মপ্রকাশ করে, আর এর মূল চেতনা ছিল গণতন্ত্র। পাকিস্তানীরা বাংলাদেশের জনগনের ওপর যে ধরণের অত্যাচার জুলুম নিপীড়নসহ ভৃত্যের পর্যায় নামিয়ে আনতে চেষ্টা করেছিলো ঠিক তেমনভাবেই আওয়ামী সরকার বর্তমানে বাংলাদেশের জনগণকে কৃতদাসের পর্যায়ে নামিয়ে আনতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে। অথচ আওয়ামী কলাম লেখকরা বিবেক বিক্রি করে কিছু সুবিধা পাওয়ার জন্য গণতন্ত্র হত্যাকারীদের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। বাঙ্গালী সংস্কৃতির জিকির তুলে তারা অবৈধ আওয়ামী সরকার যে নিজ দেশবাসীর উপর গুম, খুন, ক্রসফারে হত্যা, গুপ্ত হত্যা ও রক্তাক্ত সংস্ত্রাস চালাচ্ছে তা জায়েজ করতেই তারা উঠে পরে লেগেছে।
বিগত ১৪ বছর ধরে কুৎসিত অনাচার আর রক্তাক্ত সহিংসতার সংস্কৃতিতে গড়ে উঠা দুঃশাসনে আওয়ামী নেতারাসহ তাদের বুদ্ধিজীবী ও কলাম লেখকদের দেশের জনগনের মুখোমুখি হওয়ার কোন পুঁজি নেই। একমাত্র নির্ভেজাল মিথ্যাই তাদের পুঁজি। আসলে প্রানবন্ত গণতন্ত্রের জন্য যে দলীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং উদার সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রবণতা অপরিহার্য তা আওয়ামীলীগ ও তাদের উচ্ছিষ্টভোগীরা কখনোই রক্ষা করেনি। আওয়ামীলীগ একটি বধ্যকুপ আর এই কুপে ‘মন্ডুকনীতি’ ছাড়া অন্য কিছু আশা করা যায়না।
এবারের কোরবানীর ঈদে মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই উল্লেখ করে বিএনপি এ নেতা বলেন ঈদের জন্য ঘরে ফেরা মানুষদের যানজটে প্রচন্ড দূর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। ঈদের প্রাক্কালে বাড়ীর উদ্দেশ্যে যেদিন রওনা দিয়েছে, তার পরের দিন সন্ধ্যায় বা মাঝরাতে বাড়ীতে পোঁছেছে। কেউ কেউ গতকাল ঈদের দিনেও বাড়ী পৌঁছেছে।
এবারের কোরবানীর ঈদে জনগোষ্ঠীর অধিকাংশ মানুষের দিন কেটেছে নিরানন্দে। নিরন্ন মানুষ বাড়ী-বাড়ী গিয়ে ২/৩ টুকরো মাংস চেয়ে কয়েক কেজি হওয়ার পর তার থেকে সামান্য অংশ রেখে বাকিটা বিক্রি করে দেয় মাংস রান্নার মসলা কেনার জন্য। এ দৃশ্য মর্মান্তিক ও বেদনা দায়ক। তথাকথিত উন্নয়নের জোয়ারে গরীব মানুষ চেয়ে আনা মাংস রান্না করতেও পারে না। ক্ষমতাসীনদের বাজার সিন্ডিকেটের কারণে প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম যেভাবে হু-হু করে বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে মধ্যম ও স্বল্প আয়ের মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাই কোরবানী ঈদে রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় যেসমস্ত জিনিসের প্রয়োজন হয় যেমন- কোরবানীর পশু, চাল, ডাল, তেল, লবন, পেঁয়াজ, কাচা মরিচ ও মসলাসহ অধিকাংশ খাদ্যপন্যই ছিলো মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। দেশের জনগনই যেন আওয়ামী সরকারের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ। তাই এদের আমলে মানুষের জীবন কাটে আতঙ্কে, ভয়ে, অবহেলায়, অনাহারে ও অর্ধাহারে।
এদিকে রাজধানীসহ দেশের কয়েকটি স্থানে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তিনি বলেন, প্রতিদিনই এডিস মশা বাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বাড়ছে। এক্ষেত্রে বরাবরের মতো এখনো সরকারের পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ভোটার বিহীন আওয়ামী সরকার সবসময়ই মানুষের বেঁচে থাকার নিরাপত্তাকে উপেক্ষা করেছে। করোনা মোকাবেলায় যেমন শুধু ব্যর্থই হয়নি বরং করোনার টিকাকে কেন্দ্র করে মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে নিজেদের লোককে প্রচুর অর্থ হাতিয়ে নেয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে।
বিএনপি নেতা বলেন, ঈদের মধ্যেও আওমী সন্ত্রাসের কোন কোমতি নেই। সশস্ত্র মহড়া থেকে শুরু করে বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর আক্রমন চালাচ্ছে। গোপাল গঞ্জের মকসুদপুরে বিএনপি’র সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিমের ঈদ শুভেচ্ছার পোষ্টার, ব্যানার ও ফেষ্টুন ছিড়ে ফেলে। সংবাদ পেয়ে সেখানে বিএনপি নেতাকর্মীরা সেখানে গেলে তাদের উপর যুবলীগ, ছাত্রলীগ সশস্ত্র হামলা চালায়। এতে বেশকয়েকজন বিএনপি নেতাকর্মী আহত হয়। পাশাপাশি পুলিশ ছাত্রদলের সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান রুয়িং ও মিনাল মাতুব্বরসহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে এবং বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করে। বিএনপি’র প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম রবি, যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না, মিয়া নুরুদ্দিন অপু, যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের আহ্বায়ক গোলাম মাওলা শাহীন, ইউসুব বিন জলিল, আলী আকবর চুন্নু, আজিজির রহমান মুছাব্বির ও সিরাজুল ইসলাম সিরাজসহ গ্রেফতারকৃত সকল নেতৃবৃন্দের নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবী জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবি-উন নবী খান সোহেল, স্বেচ্চাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর শরাফত আলী সপু, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, ঢাকা জেলার সভাপতি খন্দকার আবু আসফাক, ঢাবির অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য তারিকুল আলম তেনজিং প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।