সরকার পদত্যাগের ‘পদযাত্রা’ ‘শুধু পদযাত্রা নয়, জয়যাত্রা: মির্জা ফখরুল 

আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর মহানগরীতে পদযাত্রাপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এই মন্তব্য করেন।

সরকার পদত্যাগের ‘পদযাত্রা’ ‘শুধু পদযাত্রা নয়, জয়যাত্রা: মির্জা ফখরুল 

প্রথম নিউজ, ঢাকা: সরকার পদত্যাগের ‘পদযাত্রা’র কর্মসূচিকে ‘শুধু পদযাত্রা নয়, জয়যাত্রা’ বলে অভিহিত করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর মহানগরীতে পদযাত্রাপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এই মন্তব্য করেন।

সকাল ১১ টার দিকে গাবতলী থেকে বিএনপির এই পদযাত্রা শুরু হয়। ১৬ কিলো মিটারের এই পদযাত্রা টেকনিক্যাল মোড়, মিরপুর-১, মিরপুর-১০ গোল চত্বর, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁওয়ের তালতলা, বিজয় স্মরণী, কাওরান বাজার, এফডিসি, মগবাজার, কাকরাইল, নয়া পল্টন, ফকিরাপুল, মতিঝিল, ইত্তফাক মোড়, দয়া গঞ্জ হয়ে রায়েসাহেব বাজার মোড়ে গিয়ে বিকাল ৪টায় শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

যাত্রাপথ: গাবতলী– টেকনিক্যাল মোড়– মিরপুর-১– মিরপুর-১০ গোল চত্ত্বর– কাজীপাড়া– শেওড়াপাড়া– তালতলা(আগারগাঁও)– বিজয় স্মরণী– কাওরান বাজার– এফডিসি– মগবাজার– মালিবাগ– কাকরাইল– নয়াপল্টন(বিএনপি অফিস)– ফকিরাপুল– মতিঝিল (শাপলা চত্বর)– ইত্তেফাক মোড়– দয়াগঞ্জ– রায়সাহেব বাজার মোড়। এই পদযাত্রাকে ঘিরে মহানগরীরের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে হাজার হাজার নেতা-কর্মী সমবেত হয় বিভিন্ন স্পটে। ফলে পদযাত্রার বহর দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে।

নেতা-কর্মীদের হাতে রয়েছে দলীয় ও জাতীয় পতাকা এবং সরকার পদত্যাগের দাবি সম্বলিত বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড। লাল-সবুজ-হলুদ,-বেগুনি প্রভৃতি রঙের ক্যাপ পড়ে কর্মীরা বিভিন্ন শ্লোগানের মাধ্যমে ঢাকাবাসীকে আন্দোলনের দাবিগুলো জানান দিচ্ছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, এটা শুধু পদযাত্রা নয়, এটা জয়যাত্রা। মানুষের অধিকার আদায়ের পথে বিজয়ের জয়যাত্রা। বাংলাদেশের মানুষ জেগে উঠেছে। আজকে সারা বাংলাদেশের শুধু পদযাত্রা নয়,এর আগে সভা হয়েছে, সমাবেশ হয়েছে আমরা শান্তিপূর্ণনভাবে বিক্ষোভ করছি..আমরা দাবি জানাচ্ছি যে, অবিলম্বে পদত্যাগ করবেন। এক দফা এক দাবি, দাবিটা কি?” নেতা-কর্মীরা এ সময়ে উচ্চস্বরে ‘শেখ হাসিনা এখন যাবি’ বলে শ্লোগান দিতে থাকে।

তিনি বলেন,পদত্যাগ করো, ওই পার্লামেন্ট যেটা বানাইছো সেটা বিলুপ্ত করো এবং একটা নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা দাও। আমরা ১২ তারিখে নয়া পল্টন থেকে যে দাবি দিয়েছি সারা দেশের মানুষের কাছে শুধু আমরা বিএনপি নই, ৩৬টি রাজনৈতিক দল একযোগে ঘোষণা দিয়েছে যে, এই সরকারকে এখনই পদত্যাগ করতে হবে। এদেশের মানুষ আর আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। আসুন এই পদযাত্রার মধ্য দিয়ে আমরা নতুন যাত্রা শুরু করি। এটা হচ্ছে বিজয়ের যাত্রা। এই যাত্রার মধ্য দিয়ে ইনশাল্লাহ আমরা আমাদের এক দফা দাবি আদায় করবো এই ভয়াবহ দানবীয় সরকারকে পরাজিত করে জনগনের সরকার, জনগনের পার্লামেন্ট গঠন করবো। এই রৌদ্র, বৃষ্টি, ঝড় সব কিছুকে উপেক্ষা করে শান্তিপূর্ণ ভাবে আমরা বিজয় হতে হবে আমাদেরকে। আমি সমস্ত রাজনৈতিক দল, সংগঠন, পেশাজীবীসহ সকলকে আহ্বান জানাচ্ছি এই দেশকে রক্ষা করতে, দেশের মানুষকে রক্ষা করতে, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করতে আমাদের আজকে একজোট হতে হবে। এজন্য বলেছি সরকারকে পদত্যাগ করেন। নইলে ফয়সালা হবে কোথায়? শ্লোগান তুলে বিএনপি মজাসচিব ফয়সালা হবে ‘রাজপথে’।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও দক্ষিনের আহ্বায়ক আবদুস সালাম বক্তব্য রাখেন।

গত ১৩ জুলাই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নয়া পল্টনের সমাবেশ থেকে সরকার হটানোর ‘এক দফা’ আন্দোলনের যে ঘোষণা দেন তার প্রথম কর্মসূচি মঙ্গলবারের এই পদযাত্রা। বিএনপির পাশপাশি সমমনা জোটগুলো গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, গণফোরাম-পিপলস পার্টি, এলডিপি, গণঅধিকার পরিষদের দুই অংশ, সাধারণ ছাত্র সংরক্ষন পরিষদ যুগপতভাবে একই কর্মসূচি পালন করছে আজ।

একদফায়র ঘোষণায় রয়েছে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, বিদ্যমান অবৈধ সংসদ বিলুপ্ত, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন ও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে তার অধিনে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহনমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি, মিথ্যা-গায়েবি মামলা প্রত্যাহার, ফরমায়েসি সাজা বাতিল এবং সংবিধান ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে জনগনের অর্থনৈতিক মুক্তি, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুণঃপ্রতিষ্ঠা। বিএনপির এই পথযাত্রাকে ঘিরে ১৪ কিলো মিটার সড়ক পথের বিভিন্ন পথে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকতে দেখা গেছে।

পদযাত্রার সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ গতকাল ঢাকায় নির্বাচন কমিশন একটা উপনির্বাচনের তামাশা করেছে। সেই উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলো অত্যন্ত হেভিওয়েট প্রার্খী। সে আবার আওয়ামী লীগের থিংক ট্যাঙ্কের প্রধান… দেশের সব মানুষ তাকে চিনে প্রফেসর ড. আরাফাত। প্রতিদ্বন্দ্বি কে? হিরো আলম। ওই নির্বাচনেও ভোটাদেরকে নিতেই পারে নাই। ভোটকেন্দ্র শূণ্য, ভোটকেন্দ্র খালি। ইলেকশন কমিশন যেটা একেবারে পঙ্গু, অর্থব, বংশবদ, দাসানুদাস তাদের অধীনে মাত্র ১১% ভোট পড়েছে। আমরা তো দেখলাম কোথাও ভোটার নাই। পাঁচ ঘন্টা পর একটা ভোটার আসছে ওকে সনি্রেয় লাফালাফি কাড়াকাড়ি। আবার ভোটের রেজাল্টের পর আরাফাত সাহেব আবার আঙ্গুল দেখায়- ভিক্টরি। লজ্জা লজ্জা সেইম, সেইম…। হিরো আলম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব্ নয়, তার সঙ্গে করতে গিয়ে তাকে ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে পিটিয়ে পিটিয়ে সাপ যেভাবে মারে সেভাবে গতকাল তাকে মারা হয়েছে।

পুলিশের ভুমিকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আবার পুলিশ বলে কি আমরা তো আমাদের কাজ করেছি। ঠিকই করেছেন। যে একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী তাকে যখন মেরেছে তখন আপনারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছেন। আর ইলেকশন কমিশন বলছে যে, না ওই ১১% ভোটের মধ্যে নাকি শ্রেষ্ঠ নির্বাচন হয়েছে। এসব তামাশা করে কোনো লাভ নাই। এসমস্ত তামাশা করে জনগনের সাথে প্রতারণা করে কেনো লাভ হবে নাই। ২০১৪ সালে করেছো.. ১৫৪জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করে জোর করে অবৈধভাবে ক্ষমতায় বসেছো, ২১০৮ তে নির্বাচনের আগের রাতে ভোট করে নিয়ে গিয়ে রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করে আবার ক্ষমতায় বসেছো। এই ১০/১৫ বছরে বাংলাদেশের মানুষের পকেট খালি করে দিয়েছো।ট্যাক্স দিতে দিতে, সারা চার্জ দিতে দিতে মানুষের এখন বেহাল অবস্থা। বিদুতের বিল দিতে দিতে …. চাল-ডাল-তেল-লবনরে দাম বাড়তেই আছে…..।

মির্জা ফখরুল বলেন, অসত ব্যবসায়ীদের সরকার একটা। জনগণের টাকা লুট করে নিচ্ছে, যারা এলএমজির দাম বাড়ায়, বিদ্যুতের দাম বাড়ায়, লুটপাট করে টাকা বিদেশে নিয়ে যায়, সিঙ্গাপুর, কানাড়ায় বাড়ি বানায়… তাদের জন্য এই সরকার। শেখ হাসিনা(প্রধানমন্ত্রী) তাদের সঙ্গে পাঁচ ঘন্টা আলাপ করে।  লজ্জায় হয়, দুঃখ হয়, ঘৃণা জানাই, ঘৃণা জানাই এই সরকারকে, ঘৃণা জানাই এই অবৈধ প্রধানমন্ত্রী যে আপনি আজকে গণতন্ত্রকে কবরে পাঠিয়ে দিয়েছে, নির্বাচনী ব্যবস্থাকে শেষ করে দিয়েছেন। 

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ডেঙ্গুর কথা নাই বা বললাম। ডেঙ্গু হচ্ছে এখানে । আর আমাদের দক্ষিনের মেয়র অবকাশ যাপন করতে চলে গেছেন ইউরোপে। স্বাস্থ্য মন্ত্রী গেছেন আমেরিকায় । বাহ বাহ। কি রকম দায়বদ্ধতা। আর কোনো দিন নয়। এখন আমাদের রাস্তায় নামতে হবে। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে এই অবৈধ সরকারকে পরাজিত করতে হবে।’