স্বৈরাচারের প্রেত্মাতাদের প্রশাসনে রেখে কিসের সংস্কার, প্রশ্ন মির্জা আব্বাসের

রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরে এক অনুষ্ঠানে তিনি এই প্রশ্ন তুলেন।

স্বৈরাচারের প্রেত্মাতাদের প্রশাসনে রেখে কিসের সংস্কার, প্রশ্ন মির্জা আব্বাসের

প্রথম নিউজ, অনলাইন: ‘পতিত স্বৈরাচারের প্রেত্মাতাদের’ প্রশাসনে রেখে অন্তবর্তীকালীন সরকার কি সংস্কার করতে চায় তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরে এক অনুষ্ঠানে তিনি এই প্রশ্ন তুলেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের অবস্থান থেকে বার বার বলেছি যে, আওয়ামী লীগের প্রেত্মাতাকে রেখে… হাসিনা চলে গেছে কিন্তু তার প্রেত্মাতারা সব রয়ে গেছে… আমার সামনে এখন ৮ জনের নাম আছে… আমি নাম বলব না…. এরা সবাই সচিব হিসেবে মন্ত্রণালয়ে অবস্থান করছে। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো এতো বিরোধিতার পরও মাত্র দুই-তিনদিন আগে সচিবালয়ে আরেকজন প্রাক্তন বাকশালী সচিবকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।’

‘এখন বাকশালীদের প্রেত্মাতাকে বগলধাবা করে নিয়ে আপনারা কি সংস্কার করবেন …জাতির কাছে প্রশ্ন জাগে? আমার কা্ছেও প্রশ্ন জাগে? আমরা কি আওয়ামী লীগকে আবার ফিরিয়ে আনার রাস্তা করে দিচ্ছি?” যথাসময়ে নির্বাচনের দাবির কথা পুনরুল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘অন্তবর্তীকালীন সরকারকে বলতে চাই, সংস্কারের কথা বলছেন… করেন, যতটুকু লাগে করেন.. আমাদের কোনো আপত্তি নাই। কিন্তু যথাসময়ে দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী নির্বাচন দেবেন।’
‘উস্কানি দাতারা এখানেই আছে’
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগের দোসরদেরকে মন্ত্রণালয়ে রেখে… এই যে সচিবালয়ে কয়েকদিন আগে আগুন লেগেছে, এর আগে চট্টগ্রাম সি-পোর্টে মালবহনকারী বার্জে আগুন লেগেছিলো, আনসার বিদ্রোহ হলো… আরও কত কিছু হবে। এত কিছু হওয়ার সুযোগ কেনো আমরা দিচ্ছি এবং দেবো কেনো?’
‘আমাদের মনে রাখতে হবে, এই যেন আগুন(সচিবালয়), এই যে বিদ্রোহ(আনসার বিদ্রোহ) ঘটনা ইত্যাদি এসব বিষয়গুলো এমন-এমনি ঘটছে না, খামখা ঘটছে না। কেউ না কেউ উস্কানি দিচ্ছে এবং তারা সচিবালয়েই বসে আছেন…. সবাইকে কিন্তু আমরা চিনি।’
নয়া পল্টনে আনন্দ ভবনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের সাথে এই মতবিনিময় অনুষ্ঠান হয়।
’২৪ আন্দোলনকে কেউ ব্র্যান্ডিং করবেন না’
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘২০২৪ সালের আন্দোলনকে কেউ ব্র্যান্ডিং করার চেষ্টা করবেন না। কেউ জাতিকে অহংকারী বক্তব্যের মাধ্যমে… অহংকার আল্লাহ তায়ালা পছন্দ করেন না।’
‘যিনি আজকে বক্তব্য দিয়েছেন আমি তাকে অনুরোধ জানাব, টেলিভিশনে ক্যামেরায় দেখেন কি বলেছেন। অহংকার আল্লাহ তায়ালা পছন্দ করে না। হাসিনা অহংকার করেছিলো পতন হয়ে গেছে। হাসিনা পতন আমাদের কষ্টের অর্জন, এটাকে এরকম বালখিল্য কথা বলে জাতিকে বিভক্ত করবেন না… এটা আমরা সর্বশেষ অনুরোধ।’
সংবিধান কবর দেয়ার কথায় কষ্ট লাগে’
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি এবং ফ্রন্ট লাইনে অংশগ্রহণ করেছি-সামনা-সামনি… আমার সামনে বহু সহকর্মী মারা গেছে। আমার বন্ধুবান্ধব… মোট মারা গেছে প্রায় তিন লক্ষ। শহীদের রক্তের ওপর দিয়ে লেখা যে সংবিধান, সেই সংবিধানকে যখন কবর দেয়ার কথা বলা হয়; তখন কিন্তু আমাদের কষ্ট লাগে। আমরা তোমাদের সিনিয়র হিসেবে, তোমাদের অগ্রজ হিসেবে আমরা কষ্ট পাই যে, এটা কি করছে? এইভাবে কথা বলাটা ঠিক হলো?এই সংবিধানে যদি খারাপ কিছু থাকে নিশ্চয়ই সেটা বাতিলযোগ্য।’
‘যদি নতুন কোনো সংবিধান লিখতে হয়..তাও তো লিখতে হবে আগের ওমুক সালের সংবিধান বাতিল করে এই সংবিধান জারি করা হলো… সুতরাং এই সংবিধানকে সংশোধন করা যাবে। আমি আগে একবার বলেছিলাম, একজন খুব আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে গেছে যিনি আমার এক ছোট ভাই, আমার খুব প্রিয়… বাইরে থেকে দেশকে পরিচালনা করার চেষ্টা করছেন, ছাত্রদের পরিচালনা করার চেষ্টা করছেন। উনি খুব ক্ষিপ্ত হয়ে গিয়েছিলেন… আমি বলেছিলাম যে, সংবিধান একটা রাফ খাতা নয় যে, ছুঁড়ে ফেলে দিলাম।’
তিনি বলেন, ‘আমি বলব, আমাদের সন্তানদের কাছে যারা এই ঘোষণা দিয়েছে (সংবিধানের কবর দেয়া হবে) বৈষ্যমবিরোধী ছাত্রদের কাছে অনুরোধ জানাব, কথাগুলো বুঝার চেষ্টা করবেন, ভুল বুঝবেন না… সেটা হলো এই, এ ধরনের কথাগুলো ফ্যাসিবাদের মুখ দিয়ে আসে… কবর দিয়ে দেবো, মেরে ফেলবো, কেটে ফেলবো, ছিঁড়ে ফেলবো… এই সমস্ত কথা ভালো কথা নয়।’ ‘জাতি তাকিয়ে আছে আপনাদের দিকে, আমরাও তাকিয়ে আছি তোমাদের দিকে… তোমাদের মুখ থেকে এই ধরনের কথা আমরা আশা করি না।’
‘একাত্তর সালে যুদ্ধ কি অন্যায়’
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘কিছু লোক বাইরে থেকে সরকার গঠন করে ফেলেছে… তারা আবার বলেও আমাদের সাথে্ এদেশের কথাবার্তা হয় এবং তাদের কথাবার্তার যে ধাঁচ, আজকে আমাদের ছাত্রদের কথাবার্তার যে ধাঁচ …একরকম।’
‘আমার প্রশ্ন যে, একাত্তর সালে জাতি কি করলো? আমরা কি অন্যায় করেছিলাম? আমি জানি একটা পক্ষ বলবে যে, হ্যাঁ ওইদিন পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন করে অন্যায় করেছেন… বলতে পারেন। কিন্তু আমরা কি যুদ্ধ করে অন্যায় করেছিলাম, দেশকে স্বাধীন করে কি অন্যায় করেছিলাম?’
আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘ওরা বাকশাল কায়েম করল। হাসিনাকে দেশটাকে ১৫ বছরে শেষ করে দিলো… আমি কালকেও বলেছি প্রায় ভারতের আন্ডারে উপনীত করেছিল… এখান থেকে উদ্ধারে আমরা ১৫ বছর আন্দোলন করেছি। আমাদের আন্দোলনের কি কোনো মূল্য নাই।’
‘এককভাবে কোনো মতামত না নিয়ে, সিনিয়রদের সাথে কথা না বলে এভাবে ওদের (ছাত্র বৈষ্যম আন্দোলনকারী) একথা বলা কি ঠিক হলো। আমি ’৭২ সালের সংবিধানের সমর্থক নই, আমি একাত্তর সালের সংবিধানের মুক্তিযুদ্ধের রক্তের সমর্থক। মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিলো বলেই এই সংবিধান… যদি মুক্তিযুদ্ধটা একাত্তরের আগেই অর্থাৎ একাত্তরের প্রথম দিকে শেষ হয়ে যেতো তাহলে ৭১ সালের সংবিধান বলা হতো।’
আগামী ৩১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আওয়ামী লীগকে অপ্রাসঙ্গিক ঘোষণা ও মুজিববাদী ৭২'র সংবিধানকে কবর দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। রবিবার দুপুরে রাজধানীর বাংলামোটরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি ঘোষণা দেন।
‘আমাদের পাশের প্রতিবেশী ভালো না’
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘একটা কথা মাথায় রাখতে হবে, আমাদের দেশের পাশে ভালো প্রতিবেশী নাই। আমাদের পাশে যারা আছে তারা কখনো বাংলাদেশকে স্থির থাকতে দিতে চায় না।’ ‘আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আমরা সুযোগ দিতে চাই না, সুযোগ দেবো না। আজকে বাংলাদেশ নিয়ে কত কথা বলছে, কেউ চট্টগ্রাম নিয়ে যায়, কেউ লারমনিরহাট নিয়ে যায়, কেউ অস্ত্র নিয়ে যায়… বাবা হরিলুটের মাল বাংলাদেশ। না এখন সম্ভব না।”
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বাযক রফিকুল আলম মজনুর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, নির্বাহী কমিটি সদস্য কাজী আবুল বাশার, মহানগর উত্তর বিএনপির আহবায়ক আমিনুল হক, সদস্য সচিব মোস্তফা জামান, চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত ফটোগ্রাফার নুরুদ্দিন আহমেদ, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহসভাপতি বাছির জামাল, সাংবাদিক কামরুজ্জামান রাজিব, মহসিন হোসেন, নাজিয়া আফরিন,আহমেদ সালেহীন, রেজা করীম, বাবুল তালুকদার, মো. মহসিন প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, শহিদুল ইসলাম বাবুল, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ,মহানগর দক্ষিনের হারুনুর রশিদ হারুন, লিটন মাহমুদ, আনম সাইফুল ইসলাম, মনির হোসেন চেয়ারম্যান, সাইদুর রহমান মিন্টু, আব্দুস সাত্তার, মীর হোসেন মীরু, ফরিদ উদ্দিন, ফারুকুল ইসলাম, শরীফ হোসেন, আরিফা সুলতানা রুমা প্রমূখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।