‘সুন্দরবন দিবস’ আজ, জাতীয়ভাবে দিবসটি পালনে ২৩ বছরেও মেলেনি সাড়া
![‘সুন্দরবন দিবস’ আজ, জাতীয়ভাবে দিবসটি পালনে ২৩ বছরেও মেলেনি সাড়া](https://prothom.news/uploads/images/2025/02/image_750x_67aec91e15e91.jpg)
প্রথম নিউজ, অনলাইন: বিশ্বের একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরুপ লীলাভূমি এই বন। অসংখ্য উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবাসস্থল সুন্দরবন। আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘সুন্দরবন দিবস’।
২০০২ সাল থেকে সুন্দরবন-সংলগ্ন উপকূলীয় জেলাগুলোতে এই দিবস পালিত হয়ে আসছে।
বিগত বছরের মতো এবারও খুলনায় বিভাগীয় পর্যায়ে সুন্দরবন দিবস পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া সুন্দরবন-সংলগ্ন পাঁচটি জেলার ১৭টি উপজেলায় এ বছর সুন্দরবন দিবস পালন করবে যুব ফোরাম। তবে ২৩ বছরেও জাতীয়ভাবে ‘সুন্দরবন দিবস’ পালনে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
‘সুন্দরবন দিবস’ পালনে আয়োজকরা বরাবরই সরকারের কাছে জাতীয়ভাবে দিবসটি পালনের দাবি জানিয়ে আসছেন। তাদের মতে, জাতীয়ভাবে সুন্দরবন দিবস পালন করা হলে সুন্দরবনের গৌরব বৃদ্ধি পাবে এবং তা দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। আর গৌরব বৃদ্ধি পেলে সুন্দরবন সংরক্ষণ করার ক্ষেত্রেও সুবিধা হবে।
বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের অববাহিকায় গড়ে উঠেছে।
নিজেই সৌন্দর্য নিয়ে গড়ে উঠেছে এই বন। সুন্দরবনের মোট আয়াতন ছয় হাজার ১৭ বর্গ কিলেমিটার। এর মধ্যে স্থলভাগের পরিমাণ ৪ হাজার ১৪৩ বর্গ কিলোমিটার এবং জলভাগের পরিমাণ ১ হাজার ৮৭৩ বর্গ কিলোমিটার।
১৮৭৮ সালে সুন্দরবনকে সংরক্ষিত বন হিসাবে ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে এর মোট আয়াতনের অর্ধেকের বেশি এলাকাই সংরক্ষিত বনাঞ্চল।
সুন্দরবন জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধশালী একটি ইকোসিস্টেম। রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল এই বন। প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক দেওয়াল হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে সুন্দরবন। সুন্দরবনের চারপাশজুড়ে কয়েক লাখ মানুষ জীবিকার জন্য এই বনের ওপর নির্ভরশীল। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের প্রতিনিয়ত আকৃষ্ট করে চলেছে সুন্দরবনের নয়নাভিরাম দৃশ্য।
তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বের বৃহত্তম এই ম্যানগ্রোভ বন দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। হুমকির মুখে রয়েছে এর জীববৈচিত্র্য।
সুন্দরবনের ইতিহাস ও নামকরণ
জাতিসংঘের ইউনেস্কো কমিশন ১৯৯৭ সালে সুন্দরবনের তিনটি অভয়ারণ্যকে বিশ্ব ঐতিহ্য এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে। সুন্দরবনের প্রধান উদ্ভিদ সুন্দরী গাছ। কারও কারও মতে, সুন্দরী গাছের নাম অনুসারে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা এই বনের নাম হয়েছে সুন্দরবন।
আবার সমুদ্রের কাছাকাছি অবস্থান হওয়ায় ‘সমুন্দর’ শব্দ হয়ে প্রথমে ‘সমুন্দরবন’ ও পরে ‘সুন্দরবন’ নামকরণ হয়েছে বলেও অনেকে মনে করেন। সুন্দরবনের প্রথম জরিপ অনুষ্ঠিত হয় ১৭৬৯-১৭৭৩ সালের মধ্যে।
বন বিভাগের তথ্যমতে, দেশের বন্যপ্রাণীর বৃহত্তম আবাসস্থল সুন্দরবন। এখানে ৫২৮ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৩৫৫ প্রজাতির পাখি, ১৪ প্রজাতির উভচর প্রাণী, ১২৫টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার, ৪৭ হাজার ৫১৫টি বন্যশুকুর, ২৫ হাজার ১২৫টি গুইসাপ, ১৪০টি লোনাপানির কুমির ও ৪৫১টি ইরাবতী ডলফিনসহ মোট ৫০৫ প্রজাতির বন্যপ্রণী, ৮৭ প্রজাতির সরীসৃপ, ৪৯ প্রজাতির স্তন্যপায়ী রয়েছে।
এছাড়া হরিণ রয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ৪৪৪টি, সজারু ১২ হাজার ২৪১টি, গাঙ্গেয় ডলফিন ২২৫টি এবং ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ রয়েছে।
সুন্দরবনের প্রধান বনজ উদ্ভিদ হচ্ছে— সুন্দরী গাছ, পশুর গাছ, গেওয়া গাছ, ধুন্দুল গাছ ও কাকড়া গাছ। এছাড়া গোলপাতা, হেতাল, ছন, মধু প্রভৃতি রয়েছে সুন্দরবনে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০০১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি খুলনায় ‘সুন্দরবন ঘোষণার’ মধ্যে দিয়ে প্রথম জাতীয় সুন্দরবন সম্মেলন শেষ হয়। রূপান্তর, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাপা যৌথ ভাবে ওই সম্মেলনের আয়োজন করে।
সম্মেলনে ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘সুন্দরবন দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় এবং জাতীয়ভাবে ‘সুন্দরবন দিবস’ পালনে সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়। তবে এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে সুন্দরবন দিবস পালনে সাড়া মেলেনি। তবে ২০০২ সাল থেকে সুন্দরবন-সংলগ্ন জেলাগুলোতে ১৪ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবন দিবস পালন করা হচ্ছে।
খুলনার বেসরকারি সংস্থা রূপান্তরের পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম খোকন জানান, ২০০১ সালে সুন্দরবন ঘোষণার মধ্যে দিয়ে জাতীয়ভাবে সুন্দরবন দিবস পালনের দাবি জানানো হয়। এর পর থেকে বিভিন্ন সময় তারা সরকারের কাছে জাতীয়ভাবে সুন্দরবন দিবস পালনের দাবি জানিয়ে আসছেন। তবে সরকার এ বিষয়ে বরাবরই উদাসীন।
তিনি বলেন, সরকার সুন্দরবন সংরক্ষণের কথা বলে, কিন্তু কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে না। বিগত সরকারগুলোও জাতীয়ভাবে সুন্দরবন দিবস পালনের উদ্যোগ নেয়নি। তারা সুন্দরবনের প্রতি কথায় তাদের মমত্ববোধ প্রকাশ করেই কাজ সেরেসে
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছেও জাতীয়ভাবে সুন্দরবন দিবস পালনের দাবি জানান তিনি।
রফিকুল ইসলামের মতে, জাতীয়ভাবে সুন্দরবন দিবস পালনের মধ্যে দিয়ে সুন্দরবনের গৌরব বৃদ্ধি পাবে এবং এই গৌরব দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। আর গৌরব সৃষ্টি হলে সুন্দরবন সংরক্ষণে সুবিধা হবে।
এই কর্মকর্তার দেওয়া তথ্য অনুসারে, রূপান্তরের সহযোগিতায় সুন্দরবন-সংলগ্ন বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর ও বরগুনা জেলার ১৭টি উপজেলায় যুব ফোরাম সুন্দরবন দিবস পালন করছে। এবার সুন্দরবন দিবসে যুবকদের দাবি, ‘প্লাস্টিক, পলিথিন ও কারেন্টজালমুক্ত সুন্দরবন চাই।’
খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো জানান, দীর্ঘদিন ধরে জাতীয়ভাবে সুন্দরবন দিবস পালনের দাবি রয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনও সরকারিভাবে দিবসটি পালনের অনুমোদন পাওয়া যায়নি। তবে অবশ্যই জাতীয়ভাবে সুন্দরবন দিবস পালন হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনিও।
তিনি বলেন, বন অধিপ্তর ও সুন্দরবন একাডেমির যৌথ উদ্যোগে খুলনায় বিভাগীয় পর্যায়ে সুন্দরবন দিবস পালন করা হচ্ছে। এছাড়া সুন্দরবনের রেঞ্জে রেঞ্জেও দিবসটি পালিত হওয়ার কথা।
সুন্দরবন নিয়ে কাজ করে—এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, দেশ-বিদেশে মানুষের কাছে সুন্দরবন গুরুত্ব বহন করে। জাতীয়ভাবে সুন্দরবন দিবস পালন করা হলে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও সুন্দরবনের গুরুত্ব তুলে ধরা সহজ হবে এবং সুন্দরবন নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়বে। ফলে জাতীয়ভাবে ‘সুন্দরবন দিবস’ পালনে সরকার অতি শিগগির উদ্যোগ নিক—এই কামনা তাদের সবার।