Ad0111

শেয়ারবাজার নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বৈঠক: কথা বলতে রাজি নন কেউই

এই বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বিএসইসির প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

শেয়ারবাজার নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বৈঠক: কথা বলতে রাজি নন কেউই

প্রথম নিউজ, ঢাকা: দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মতবিরোধের মধ্যে আজ মঙ্গলবার  বৈঠকে বসে অর্থ মন্ত্রণালয়।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এবং শেয়ারবাজার কার্যক্রম সমন্বয় ও তদারকি কমিটির আহ্বায়ক মফিজ উদ্দীন আহমেদ এতে সভাপতিত্ব করেন। বহুল প্রতীক্ষিত এই বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বিএসইসির প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

সকাল ১১টায় শুরু হওয়া এই বৈঠক চলে প্রায় দেড় ঘণ্টাজুড়ে। তবে বৈঠকে কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এবং কী ধরনের সিদ্ধান্ত এসেছে তা নিয়ে কেউ কোনো কথা বলেননি।

বৈঠক শেষে অতিরিক্ত সচিব মফিজ উদ্দীন আহমেদের কক্ষ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকরা বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানের কাছে বৈঠকের বিষয়ে জানতে চান। এ সময় তিনি বলেন, বৈঠকের বিষয়ে নাহিদ ভাই (আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম সচিব ড. নাহিদ হোসেন) কথা বলবেন।

এরপর সাংবাদিকরা যুগ্ম সচিব নাহিদ হোসেন এবং অতিরিক্ত সচিব মফিজ উদ্দীন আহমেদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা কথা বলতে চাননি।

তবে যুগ্ম সচিব নাহিদ হোসেন এবং বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান বলেন, বৈঠকে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। অবশ্য বৈঠকে কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং কী ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে কেউ কোনো কথা বলেননি।

এদিকে কয়েক মাস ধরে দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের মতো বিভিন্ন ইস্যুতে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে শেয়ারবাজারে। দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিরোধ প্রকাশ্য রূপ নেওয়ায় টানা আট কার্যদিবস দরপতন হয় শেয়ারবাজারে।

এ পরিস্থিতিতে ৩০ নভেম্বর বৈঠকে বসে এই দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বৈঠক শেষে বিএসইসি কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, শেয়ারবাজারের অদাবিকৃত ডিভিডেন্ড নিয়ে গঠিত স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের ব্যাপারে একমত বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে বিষয়টি নিয়ে কিছু আইনগত অস্পষ্টতা রয়েছে।

তিনি বলেন, স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের বিষয়ে কিছু আইনগত অস্পষ্টতা রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কথা হয়েছে। বিএসইসি-বাংলাদেশ ব্যাংক উভয়পক্ষ এ বিষয়ে আন্তরিক। আমাদের কারও সঙ্গে কারও কোনো মতবিরোধ নেই।

বিএসইসির এই কমিশনার বলেন, বৈঠকে আমার মনে হয়েছে শেয়ারবাজারের উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংক খুবই আন্তরিক। যে কারণে তারা বন্ডে বিনিয়োগকে বিনিয়োগ সীমার বাহিরে রাখার অঙ্গীকার করেছেন। এছাড়া বিনিয়োগ সীমা গণনায় বাজার দরের পরিবর্তে কস্ট প্রাইসকে বিবেচনায় নেওয়ার যে দীর্ঘদিনের চাহিদা রয়েছে, সেটাও তারা সমাধান করবেন। এ জন্য যা করণীয় তারা তাই করবেন।

সাধারণ বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা বাজার নিয়ে হতাশ হবেন না। বাজার ভালো করার জন্য আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। আমরা উভয় রেগুলেটরি বডি ভালো বাজারের জন্য যা যা করা দরকার তা করে যাবো।

বিএসইসির পক্ষ থেকে এমন বক্তব্য আসার পর ১ ডিসেম্বর শেয়ারবাজারে বড় উত্থান হয়। ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক একদিনে বেড়ে যায় ১৪৩ পয়েন্ট। তবে সন্ধ্যার দিকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, শেয়ারবাজারে তফসিলি ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়ে বিএসইসির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

এতে আরও বলা হয়, ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ১৯৯৩-এ শেয়ারবাজারে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের বিষয়ে বিদ্যমান কতিপয় আইনি সীমাবদ্ধতার বিষয়ে বিএসইসির প্রতিনিধি দলকে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সভার পরে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের প্রতিনিধির বরাত দিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ওই সভার কতিপয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের যে সংবাদ প্রচার করা হয়েছে, তা সঠিক নয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর একেএম সাজেদুর রহমান খানের সভাপতিত্বে বিএসইসির সঙ্গে পূর্ব নির্ধারিত এ সভা কেন্দ্রীয় ব্যাংক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিএসইসির উদ্যোগে ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড গঠনের ফলে তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সৃষ্ট জটিলতা নিরসন এবং পুঞ্জিভূত লোকসান বিদ্যমান থাকলেও সংশ্লিষ্ট বছরের মুনাফা হতে নগদ লভ্যাংশ বিতরণের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

এছাড়া সভায় ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এর ৩৫(১)(গ) ধারা ও ২২ ধারা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন ১৯৯৩ এর ১০ ধারার বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করা হয়। এক্ষেত্রে ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অদাবিকৃত তহবিল স্থানান্তর এবং পুঞ্জিভূত লোকসান থাকা সত্ত্বেও নগদ লভ্যাংশ দেওয়া আইনসম্মত নয় বলে অভিহিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিএসইসির নির্দেশনায় প্রয়োজনীয় সংশোধন আনতে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক- বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এমন সংবাদ বিজ্ঞপ্তি আসার পর ওইদিন রাতেই শেয়ারবাজর সংশ্লিষ্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন গ্রুপে বিনিয়োগকারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এতে বিনিয়োগকারীদের এক ধরনের আতঙ্কের চিত্র উঠে আসে।

পরের দিন ২ ডিসেম্বর লেনদেন শুরু হতেই বাজারে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ডিএসইতে লেনদেন শুরুত হতেই প্রধান মূল্য সূচক ৮৬ পয়েন্ট পড়ে যায়। তবে পুঁজিবাজার নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বৈঠকের তথ্য প্রকাশ হওয়ার পর শেয়ারবাজারে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। শুরুর বড় পতন কাটিয়ে বড় ধরনের উত্থান দিয়ে দিনের লেনদেন শেষ হয়। ওইদিন ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক বাড়ে ৮৯ পয়েন্ট।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

This site uses cookies. By continuing to browse the site you are agreeing to our use of cookies & privacy Policy from www.prothom.news