শহীদ মিনারের স্রোত বইমেলায়

গতকাল দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়ে বইমেলার চিত্র ছিল অন্য দিন থেকে আলাদা। সকাল ৮টায় মেলার দ্বার খুলতেই পাঠক-দর্শনার্থীদের ঢল নামে।

শহীদ মিনারের স্রোত বইমেলায়
শহীদ মিনারের স্রোত বইমেলায়শহীদ মিনারের স্রোত বইমেলায়

প্রথম নিউজ, অনলাইন: হাতে গুচ্ছ ফুল। পোশাকে একুশের ছোঁয়া। দীর্ঘ সারিতে অপেক্ষা করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন। এরপর অধিকাংশেরই গন্তব্য অমর একুশে বইমেলা। শহীদ মিনারমুখী যে স্রোত শুরু হয়েছিল একুশের প্রথম প্রহরে সেটি গতকাল সকাল থেকে ঠেকেছে বইমেলায়। গতকাল দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়ে বইমেলার চিত্র ছিল অন্য দিন থেকে আলাদা। সকাল ৮টায় মেলার দ্বার খুলতেই পাঠক-দর্শনার্থীদের ঢল নামে। সাদা-কালোর মিশেলে আগতদের পোশাক ও সাজসজ্জায় ছিল শোকের আবহ, গৌরবের বর্ণচ্ছটা। বাংলা ভাষার বিভিন্ন প্রতীক, বর্ণ, একুশের ঐতিহ্যের চিহ্ন ঠাঁই পেয়েছে পোশাকে। গতকাল ছিল ২১শে ফেব্রুয়ারি।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ৭০ বছর আগে সালাম, বরকত, রফিকদের রক্তের বিনিময়ে বাঙালি পেয়েছিল বাংলা ভাষায় কথা বলার অধিকার। বিশেষ এই দিনটি বাঙালির জন্য গৌরবের, অহংকারের।  তাইতো শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর পর আগতদের অধিকাংশই ঘুরে গিয়েছেন বাঙালির প্রাণের মেলায়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বইমেলায় ছিল ক্রেতা দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। বিকিকিনি ছিল এবারের মেলায় সর্বোচ্চ। বিকালের দিকে বড় বড় স্টল প্যাভিলিয়নকে পাঠকদের চাপ সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছে। স্ত্রী, সন্তান নিয়ে মেলায় এসেছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা হাসান।

দু’হাতে দু’জনকে শক্ত করে ধরে রেখেছিলেন, ভিড়ের মাঝে যাতে হারিয়ে না যায়। হাসান বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারির বিশেষ দিনটি পরিবারকে নিয়ে উদ্‌যাপন করতে সকাল সকাল বেরিয়ে গিয়েছিলাম। শহীদ মিনারে কিছুক্ষণ কাটানোর পর পরিবারকে নিয়ে বইমেলায় এসেছি। এর আগেও একবার এসেছিলাম, তবে আজ বেশি ভালো লাগছে। চারদিকে একুশের আবহ। ভাষা দিবসের নানা আয়োজন খুব উপভোগ করছি। মেলায় কালো পাঞ্জাবি পরে দল বেঁধে বেশ কয়েকজন তরুণকে একসঙ্গে হাঁটতে দেখা গেল। তারা সবাই উত্তরা থেকে এসেছেন একটি সংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের হয়ে শহীদ মিনারে ফুল দিতে। শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এসেছেন বইমেলায়। তাদের মধ্যে জোবায়ের নামে একজন জানালেন, আজ বাঙালির জাতির গর্বের দিন। শহীদ মিনারের পাশাপাশি মেলায় আসার পরিকল্পনা আগেই ছিল। বাংলা সাহিত্যের সব থেকে বড় এই আসরে না এলে ভাষা দিবসের আয়োজন পূর্ণতা পেতো না। গতকাল মেলায় বই বিক্রিও হয়েছে অন্য দিনের তুলনায় অনেক বেশি। 

একাধিক স্টল মালিক ও প্যাভিলিয়ন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এবারের মেলায় গতকাল তাদের সর্বোচ্চ বই বিক্রি হয়েছে। শেষের কয়টা দিনেও বইমেলা একই রকম জমজমাট থাকবে বলে তাদের প্রত্যাশা। মেলা ঘিরে বাংলা একাডেমির বিভিন্ন সাংস্কৃতিক  অনুষ্ঠানেও ছিল অমর একুশের আবহ। সকাল ৮টায় মেলার মূল মঞ্চে ভাষা দিবস নিয়ে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কবি-সাহিত্যেকেরা। মূলমঞ্চে গতকালের ‘অমর একুশের বক্তৃতা প্রদান অনুষ্ঠানে’ ছিল সব পরিচিত মুখ। বাংলা একাডেমির সভাপতি ও প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে একুশে ফেব্রুয়ারির তাৎপর্য নিয়ে এতে বক্তৃতা রাখেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি নুরুল হুদা এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার প্রমুখ।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: