শিশু হত্যার আসামি গণপিটুনিতে নিহত
রোববার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে পলাশবাড়ী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) দিবাকর অধিকারী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
প্রথম নিউজ,গাইবান্ধা: গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার চাঞ্চল্যকর শিশু বায়েজিদ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি সাইফুল ইসলাম ওরফে শেরেকুল মণ্ডল (৫০) গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
রোববার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে পলাশবাড়ী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) দিবাকর অধিকারী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, নিহতের ছেলে মোকছেদুর রহমান বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এঘটনায় জড়িত দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃরা হলেন- মনোহরপুর ইউনিয়নের তালুক ঘোড়াবান্দা গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে মাহাবুল ইসলাম (৩০) ও মৃত আব্দুল করিম সরকারের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৪০)।
এর আগে শনিবার (১৪ অক্টোবর) রাত পৌনে ৯টার দিকে উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের চৌরাস্তা বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত শেরেকুল উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের তালুক ঘোড়াবান্দা বালুখোলা গ্রামের বাসিন্দা।
স্থানীয়রা জানান, শিশু বায়েজিদ হত্যারর মামলার অন্যতম আসামি শেরেকুল সম্প্রতি উচ্চ আদালত থেকে জামিনে জেল থেকে বের হন। পরে শনিবার রাতে চৌরাস্তা বাজারে আসেন তিনি। এসময় উত্তেজিত জনতা তাকে ঘিরে ফেলে। প্রাণ বাঁচাতে বাজারের একটি হোটেলে আশ্রয় নেন শেরেকুল। সেখানে শতাধিক নারী-পুরুষ তার ওপর হামলা চালায়। একপর্যায়ে প্রকাশ্যে শেরেকুলকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
পলাশবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরজু মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, গণপিটুনিতে আহত শেরেকুলকে উদ্ধার করে গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক শেরেকুলকে মৃত্যু ঘোষণা করেন।
রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পলাশবাড়ী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান একেএম মোকছেদ চৌধুরী বিদ্যুৎ ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান।
উল্লেখ্য: গত ৮ মে বিকেল ৩টার দিকে বাড়ির পাশে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয় উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের তালুক ঘোড়াবান্দা বালুখোলা গ্রামের সৌদি প্রবাসী তাহারুল ব্যাপারীর চার বছরের ছেলে বায়েজিদ। অনেক খোঁজাখুজি করে শিশুটির কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। নিখোঁজের পরদিন গত ৯ মে শিশুটির মা রায়হানা বেগম বায়েজিদের সন্ধানে পলাশবাড়ী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
পরে গত ১৩ মে সন্ধ্যা ৬টার দিকে উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের তালুক ঘোড়াবান্দা বালুখোলা গ্রামের ধানক্ষেত থেকে বায়েজিদের খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় শিশুর মা রাহেনা বেগম বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলার অন্যতম আসামি শিরিকুল ইসলামকে গত ২৬ মে বগুড়া থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরবর্তীতে সে হাইকোর্ট থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে এলাকায় ফিরে আসেন।
নিহত বায়েজিদের মা রায়হানা বেগম দাবি করেন, প্রতিবেশী শেরকুলের ছেলে রোমান এলাকার একজন চিহ্নিত চোর। পাশাপাশি সে নেশায় আসক্ত। রোমানের পরিবারের পক্ষ থেকে আমার মেয়ে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী তিশাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। কিন্তু তাতে আমি রাজি না হওয়ায় রোমান বিভিন্ন সময় আমাকে হুমকি দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় তার ছেলে বায়েজিদকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে।
পরবর্তীতে মায়ের দাবিই সত্যি প্রমাণিত হয়। পরে রোমানসহ অভিযুক্ত আসামিরা হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।