শক্তিশালী ভূমিকম্পে কাঁপল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মিয়ানমারে ভবন ধসে নিহত ২৬

প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: শুক্রবার (২৮ মার্চ) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় শক্তিশালী এক ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। যার ফলে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে একটি নির্মাণাধীন ভবন ধসে পড়ে এবং মিয়ানমারের মান্দালয় শহরে বেশ কয়েকটি ভবন ভেঙে পড়ে অন্তত ২৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাতে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (USGS) জানিয়েছে, শুক্রবার দুপুরের দিকে আঘাত হানা ভূমিকম্পটির মাত্রা ৭.৭ এবং এর কেন্দ্র ছিল মিয়ানমারের মান্দালয় শহরের ১৭.২ কিলোমিটার দূরে, ভূ-পৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরে। ভূমিকম্পের পর শক্তিশালী আফটারশকও (পরবর্তী কম্পন) অনুভূত হয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, মান্দালয় শহরে একটি মসজিদ ধসে পড়ার ফলে অনেকে হতাহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে অনেকে নামাজ আদায় করছিলেন। শহরটিতে উদ্ধার অভিযান চলছে এবং মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মিয়ানমারে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ
- এছাড়া স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, মান্দালয়ে ইরাবতী নদীর ওপর একটি পুরনো সেতু ধসে পড়েছে।
- বহু আবাসিক ভবন বিধ্বস্ত হয়েছে এবং অনেকে ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়েছে।
- মান্দালয় বিমানবন্দর ও টাউংগি শহরের একটি মঠ গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
- মান্দালয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়া গেছে এবং সেখানে হতাহতের আশঙ্কা রয়েছে।
মিয়ানমারের ফায়ার সার্ভিস বিভাগের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, ‘আমরা উদ্ধার অভিযান শুরু করেছি এবং ইয়াঙ্গুনসহ বিভিন্ন এলাকায় ক্ষয়ক্ষতির তথ্য সংগ্রহ করছি। এখনো বিস্তারিত তথ্য পাইনি’।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও ছবিতে দেখা গেছে, মান্দালয়ের রাস্তায় ভবন ধসে পড়েছে এবং ধ্বংসস্তূপ ছড়িয়ে রয়েছে।
এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ‘ভূমিকম্প শুরু হতেই আমরা সবাই ঘর থেকে দৌড়ে বের হয়ে আসি। আমার চোখের সামনে পাঁচতলা একটি ভবন ধসে পড়েছে। পুরো শহর রাস্তায় নেমে এসেছে, কেউ ভবনে ফিরে যেতে সাহস পাচ্ছে না’।
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী হতেত নাইং উ রয়টার্সকে জানান, ‘একটি চায়ের দোকান ধসে পড়েছে এবং বেশ কয়েকজন মানুষ ভেতরে আটকা পড়েছে। আমরা ভেতরে ঢুকতে পারিনি, পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ’।
এছাড়া একটি মসজিদও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বলে জানিয়েছেন এক প্রত্যক্ষদর্শী।
এহেন পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের জান্তা সরকার দেশটিতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে এবং আন্তর্জাতিক সহায়তার জন্য আবেদন জানিয়েছে।
ইতিহাসে মিয়ানমারের ভূমিকম্প
- সাগাইং ফল্ট লাইনের কারণে মিয়ানমারে ভূমিকম্প খুবই সাধারণ ঘটনা।
- ১৯৩০ থেকে ১৯৫৬ সালের মধ্যে ৭.০ মাত্রার ছয়টি ভূমিকম্প হয়েছে।
- ২০১৬ সালে বাগান শহরে ৬.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে তিনজন নিহত হয় এবং বহু প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দির ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মিয়ানমারে চিকিৎসা ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ায়, বিশেষত গ্রামীণ অঞ্চলে, উদ্ধার ও চিকিৎসা সেবা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ব্যাংককে ভবন ধসে নিহত ১
এদিকে থাইল্যান্ডের জাতীয় জরুরি চিকিৎসা ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, ব্যাংককে ধসে পড়া ভবনটির ধ্বংসস্তূপ থেকে একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে এবং অনেক শ্রমিককে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।
ব্যাংককের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কিত মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন। অনেক হোটেল অতিথি স্নানের পোশাক ও গাউন পরে বাইরে ছুটে আসেন, যখন একটি অভিজাত হোটেলের সুইমিং পুল থেকে পানি উপচে পড়তে থাকে।
ব্যাংককের অফিস ভবনগুলো কেঁপে ওঠে
ব্যাংককের একাধিক অফিস টাওয়ার দুই মিনিটেরও বেশি সময় ধরে দুলতে থাকে। দরজা-জানালা বিকট শব্দে কাঁপতে থাকে।
ভবন থেকে কর্মীরা জরুরি সিঁড়ি দিয়ে বাইরে চলে আসেন, অনেকে আতঙ্কে স্থির হয়ে যান। ভবনটি দুলতে থাকায় তীব্র আতঙ্ক সৃষ্টি হয় এবং বাইরে জড়ো হওয়া মানুষের মধ্যে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু হয়।
উদ্ধারকর্মীরা আহত ও আতঙ্কগ্রস্তদের জন্য অফিস চেয়ার এনে দেন এবং জরুরি চিকিৎসা সরবরাহ করেন।
চীনের ইউনান প্রদেশেও কম্পন অনুভূত
চীনের শিনহুয়া বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী ইউনান প্রদেশেও প্রবল ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে, তবে এখনো কোনো হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
এই ভূমিকম্পের ফলে আরও পরবর্তী কম্পন হতে পারে, বলে ভূতাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন। এখনো মিয়ানমারে ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণ হিসাব পাওয়া যায়নি।