লিয়াকত, মুরগি মিলন ও আমুর সঙ্গে যুদ্ধ করে এখানে আসছি : সুব্রত বাইন

প্রথম নিউজ, অনলাইন: রাজধানীর হাতিরঝিল থানার অস্ত্র আইনের মামলায় শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। একই সঙ্গে আবু রাসেল মাসুদ ওরফে মোল্লা মাসুদ, আরাফাত ইবনে নাসির ওরফে শ্যুটার আরাফাত ও এম এ এস শরীফের ছয় দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছের আদালত।
বুধবার (২৮ মে) ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসাইনের আদালতে শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
শুনানির আগে সুব্রত বাইন বলেন, ‘নিজে বাঁচার জন্য সঙ্গে অস্ত্র রাখি।
কে মরতে চায়। ৮৪, ৮৫ থেকে আমার শত্রুতা। লিয়াকত, মুরগি মিলন, আমির হোসেন আমু আমার শত্রু ছিল। তাদের সাথে যুদ্ধ করে এখানে আসছি।
আমার নাম বিক্রি করে যারা চাঁদাবাজি করছে। যে চাঁদা চেয়েছে তাকে ধরুন। আরেকজনকে ব্লেম দিয়ে কী লাভ।’
এদিন আসামি সুব্রত বাইনসহ চার আসামিকে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়।
এ সময় তাদের হাজতখানায় রাখা হয়। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হাতিরঝিল থানার উপপরিদর্শক রিয়াদ আহমেদ তাদের ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন। বেলা ৩ টা ৪২ মিনিটে কঠোর পুলিশ প্রহরায় তাদের আদালতের কাঠগড়ায় নেওয়া হয়। এ সময় হেলমেট, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও হাতকড়া পড়ানো ছিল। পরে কাঠগড়ায় নিয়ে তাদের হেলমেট ও এক হাতের হাতকড়া খোলা হয়।
তখন সুব্রত হাসতে থাকেন। পুলিশের উদ্দেশ্যে বলেন, আরেক হাতের হাত কড়া খুলে দিতে বলেন। তবে পুলিশ সদস্যরা আপত্তি জানান। তখন সুব্রত বাইন উচ্চ স্বরে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য বলতে থাকেন, সত্য কথা লিখবেন। আমি যা তাই লিখবেন। অন্য কিছু লিখবেন না। হলুদ সাংবাদিকতা যেন না হয়। সাংবাদিকরা ১৯৮৯ সাল থেকে লিখতেছে। কিন্তু জায়গামত পৌঁছাতে পারেনি। এ সময় সাংবাদিকদের বলেন, কোনো প্রশ্ন থাকলে করেন। এরই মাঝে আরেক আসামি কথা বলতে চান। তাকে থামিয়ে দিয়ে সুব্রত বাইন বলেন, যা বলার আমি বলবো। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের রসালো লিখতে লিখতে অভ্যাস হয়ে গেছে। অথচ কারো কাছে কোনো প্রমাণ নাই। বাঁচার জন্য কে কি না করে। কত মানুষ মরে পচে গেছে। ঘাসও পচে গেছে। বেঁচে আছি, আল্লাহ জীবন্ত রেখেছেন। এসময় আদালতে তিনি তার আইনজীবীকে খোঁজেন। বলেন, মজিবর ভাই কই। আমার উকিল কই। পরে আবার বলেন, সাংবাদিকরা কিছু না জেনে লিখে দেয়। আমারও তো পরিবার আছে। কি ইফেক্ট পড়ে। কিন্তু আমি কোনো প্রতিবাদ করিনি ১৯৮৭ সাল থেকে। আমার বয়স ৬১ বছর। সাংবাদিকরা এতো খবর রাখে, আড়াই বছর আগে আয়না ঘরে রাখে, সেই খবর নাই। এখন আমাকে ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ বানানো হচ্ছে। প্রমাণ দিয়ে দেখান আমি চাঁদাবাজি, ছিনতাই করেছি কি না। যারা আমার নামে চাঁদাবাজি, ছিনতাই করছে, তাদের ধরেন। আমার টাকা থাকলে পত্রিকা অফিস, টিভি অফিস খুলে নিতাম। আমার কোনো পাওয়ার নাই, পাওয়ার দরকারও নাই। পাওয়ার আমার পিছে ঘুরে। সর্বশ্রেষ্ঠ পাওয়ারকে আমি সেজদাহ করি।
তিনি বলেন, ২০২২ সালে হ্যান্ডকাপ পড়িয়ে দেশে নিয়ে আসে। আমাকে আয়না ঘরে রাখা হয়। যা কবরের মত। রড দিয়ে পিটিয়েছে। দেখেন আমার মাথায় কি করছে। এসময় মাথায় হাত দিয়ে দেখান তিনি। এখনো বেঁচে আছি। ৫ আগস্ট রাত ৩ টার দিকে আমাকে ছেড়ে দেয়। নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের কাছে প্রত্যাশা, তারা সত্যটা তুলে ধরবেন।
এরপর বেলা ৩ টা ৫৪ মিনিটে আদালতের বিচারকাজ শুরু হয়। তখন বিচারককে উদ্দেশ্য করে বলেন, ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাতকড়া পড়ে দাঁড়ানো যায়। যতটুকু আইন জানি, আদালতে দাঁড়ানোর সময় হ্যান্ডকাফ পড়িয়ে রাখে না। তাহলে আদালতের সম্মান কি রইলো। রিমান্ডের পক্ষে শুনানিতে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, আসামিরা খুবই আলোচিত। তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের সাথে আরো কারা জড়িত রয়েছে, আরো অস্ত্র উদ্ধারের জন্য দশ দিনের রিমান্ড প্রয়োজন। আসামিদের পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ বাদল মিয়া তাদের রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, সুব্রত বাইন আজকে মিডিয়ার সৃষ্টি। তাকে মিডিয়ার সৃষ্টি করেছে। তৎকালীন সরকার তাদের শত্রুদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এই লিস্টে করেছে। এরপর আর কোন সরকার কোন লিস্ট তৈরী করেননি। এই আসামিকে ভারতে তিনবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরে ৬ তারিখে নরসিংদীর ভূলতা ইউনিয়নে ফেলে রেখে চলে যায়। ওই সময় তিনি এত পরিমাণ ভয় পেয়েছেন। সুব্রত বাইন টোটালি ইনোসেন্ট। প্রয়োজনে তাদের কেন্দ্রীয় কারাগারে জেলগেটে জিজ্ঞেসাবাদ করা যেতে পারে। শুনানি শেষে আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে রিমান্ডের আদেশ দেন। পরে ৪ টা ১৬ মিনিটে পুলিশ প্রহরায় তাদের হাজতখানায় নেওয়া হয়।
এর আগে মঙ্গলবার আনুমানিক ভোর ৫ টায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ অভিযানে কুষ্টিয়া জেলা থেকে শীর্ষ তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ওরফে ফতেহ আলী ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী মোল্লা মাসুদ ওরফে আবু রাসেল মাসুদকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তী সময়ে তাদের তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সুব্রত বাইনের দুই সহযোগী শ্যুটার আরাফাত ও শরীফকে।
অভিযানের সময় তাদের কাছ থেকে পাঁচটি বিদেশি পিস্তল, ১০টি ম্যাগাজিন, ৫৩টি গুলি এবং একটি স্যাটেলাইট ফোন উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করা হয়।