রংপুরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তিন সাংবাদিকের বিচার শুরু
প্রথম নিউজ, রংপুর: রংপুরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালত। বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) দুপুরে রংপুর সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক আবদুল মজিদ এ আদেশ দেন। এর মাধ্যমে মামলার বিচারকাজ শুরু হলো।
অভিযুক্ত সাংবাদিকেরা হলেন- স্থানীয় দৈনিক যুগের আলো ও মানবকণ্ঠ পত্রিকার সাংবাদিক মহিউদ্দিন মখদুমী, দেশ রূপান্তরের সাংবাদিক মামুন রশিদ ও ঢাকা পোস্টের সাংবাদিক শরিফুল ইসলাম। শরিফুল ইসলাম এর আগে অনলাইন পোর্টাল রংপুরের কণ্ঠে কাজ করতেন।
সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) রুহুল আমিন আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সরকারি কৌঁসুলি রুহুল আমিন বলেন, রংপুর সদর উপজেলার সদ্যপুস্করনী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সোহেল রানার বিরুদ্ধে ভিজিডির চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে সংবাদ প্রকাশ করেন সাংবাদিক মহিউদ্দিন মখদুমী, মামুন রশিদ ও শরিফুল ইসলাম। সংবাদ প্রকাশের কারণে ইউপি চেয়ারম্যানের মানহানির অভিযোগে তার শ্বশুর মোস্তাফিজার রাহমান বাদী হয়ে ২০২১ সালের ১৪ জুন রংপুর সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার পর দীর্ঘদিনের শুনানি শেষে আজ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচারকাজ শুরু হলো।
মামলার অভিযোগ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় দৈনিক যুগের আলো ও মানবকণ্ঠ পত্রিকায় ২০২১ সালের ২৪ মে ‘ভিজিডির কার্ডে চাল নেন সদ্যপুস্করনী ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের শাশুড়ি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন সাংবাদিক মহিউদ্দিন মখদুমী। একই দিনে অনলাইন নিউজ পোর্টাল রংপুরের কণ্ঠের সাংবাদিক একই শিরোনামে খবর প্রকাশ করেন। দেশ রূপান্তর পত্রিকাতেও একই খবর প্রকাশিত হয়।
এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে সদ্যপুস্করনী ইউপির চেয়ারম্যান সোহেল রানার বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও ভুয়া সংবাদ প্রকাশ করে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করা এবং বাদীর স্ত্রী ও জামাতার সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। ২০২১ সালের ৫ নভেম্বর কোতোয়ালি থানার উপরিদর্শক (এসআই) শাহ আলম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
সাংবাদিক মহিউদ্দিন মখদুমী বলেন, আমাদের সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে। আমরা এ আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাব।
তিনি আরও বলেন, ২০১৯ সালে ভিজিএফের চাল অন্যত্র সরিয়ে রাখার অভিযোগে র্যাব-১৩ অভিযান চালিয়ে সদ্যপুস্করিনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল রানাকে আটক করেছিলেন। পরে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। ঘটনার কিছুদিন পর ওই মামলায় জামিন পান চেয়ারম্যান। সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে এই চেয়ারম্যান ভিজিডি কার্ড নিয়ে আত্মীয়করণ করে প্রকৃত হতদরিদ্র ও দুস্থদের বঞ্চিত করেছেন।
মহিউদ্দিন মখদুমীর দাবি, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় চেয়ারম্যান ক্ষুব্ধ হয়ে স্বজনকে দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন। অথচ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়ম-দুর্নীতির সত্যতা পেয়েছে উপজেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি। শুধু তাই নয়, যারা এই দুর্নীতির সংবাদ ফেসবুকে শেয়ার করেছেন, তাদেরও ছাড় দেননি চেয়ারম্যান ও তার স্বজনেরা।
মামলার আরেক আসামি সাংবাদিক শরিফুল ইসলাম বলেন, আমি চেয়ারম্যান সোহেল রানাকে নিয়ে কোনো সংবাদ প্রকাশ করিনি। আমি দুর্নীতির সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার দিয়েছিলাম। এ কারণে আমাকে আসামি করা হয়েছে। চেয়ারম্যান কৌশলে মামলা করে আমাদের সঙ্গে অন্যায় করেছেন। আমরা ন্যায় বিচার আশা করছি।
এদিকে মামলার আসামিপক্ষের আইনজীবী পলাশ কান্তি নাগ বলেন, মামলায় তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হওয়ার পরও তারা ন্যায় বিচার পাওয়ার আশা করছেন।
রংপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মেরিনা লাভলী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করার কথা থাকলেও এখনো সেই আইনে মামলার কার্যক্রম চলছে। রংপুরের সাংবাদিক সমাজের পক্ষ থেকে তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলার নিন্দা জানান তিনি।