রাজনীতিতে যে সংস্কৃতি চলছে তা শোভনীয় নয়-জিএম কাদের
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি আয়োজিত ঈদ পুনর্মিলনী ও আড্ডায় এ কথা বলেন তিনি।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের বলেছেন, গত কয়েক বছর এদেশের রাজনীতিতে যে সংস্কৃতি চলছে তা শোভনীয় নয়। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি আয়োজিত ঈদ পুনর্মিলনী ও আড্ডায় এ কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে জিএম কাদের বলেন, গত কয়েক বছর এদেশের রাজনীতিতে যে সংস্কৃতি চলছে তা শোভনীয় নয়। রাজনৈতিক নেতারা কারও প্রতিপক্ষ নন, একে অপরের যেন শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের একে অপরের প্রতি সহনশীল হতে হবে। সামাজিকভাবে আমাদের কাজ করতে হবে। তাহলে দেশের রাজনীতিতে আগামীতে সুবাতাস বইবে। আমরা দেশের রাজনীতিতে কাজ করে যাচ্ছি, কাজ করে যেতে চাই।
এদিন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি আয়োজিত ঈদ পুনর্মিলনী ও আড্ডা যেন বিরোধী রাজনীতিবিদদের মিলনমেলায় পরিণত হয়। বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ সরকারবিরোধী প্রায় সব দলের শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি বিভিন্ন পেশাজীবীরাও এতে অংশ নেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় গুলশানের ইম্মান্যুয়াল পার্টি সেন্টারে এ আড্ডা শুরু হয়ে চলে রাত ১০টা পর্যন্ত। ছিল রাতের খাবারের আয়োজনও। অনুষ্ঠানে আগত প্রত্যেককে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। ঈদ পুনর্মিলনী হলেও বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের একসঙ্গে বসার পেছনে রাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। এর মধ্য দিয়ে সবার মধ্যে একটা সেতুবন্ধন তৈরির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম মহাসচিব আবদুল্লাহ আল হাসান সাকিবের সঞ্চালনায় এতে অংশ নেন- জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের মোস্তফা মোহসীন মন্টু, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল হাই শিকদার, ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, নিতাই চন্দ্র রায়, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত।
এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিকল্প ধারা বাংলাদেশের অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন বেপারী, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুর, বাংলাদেশ মাইনরিটি পার্টির সুকৃতি মন্ডল, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) ববি হাজ্জাজ, বাংলাদেশ জাতীয় দলের অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা, বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, এনডিপির ক্বারী মুহাম্মদ আবু তাহের, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) অ্যডভোকেট শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, জাগপা একাংশের রাশেদ প্রধান, জাগপার আরেক অংশের খন্দকার লুৎফর রহমান, মেজর (অব.) হানিফ, ব্যারিস্টার সারোয়ার হোসেন, সাংবাদিক এমএ আজিজ, কামালউদ্দিন সবুজ, কাদের গণি চৌধুরী, আমিরুল ইসলাম কাগজী, খুরশিদ আলম, শহীদুল ইসলাম, রাশেদুল হকসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা।
সভাপতির বক্তব্যে মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা থাকলে এবার নিশ্চয়ই আন্দোলনের সফলতা আসবে। এই সরকারের মন্ত্রী ও এমপিদেরকে বলছি, এখনো সময় আছে লুটেরাদের থামান, নিজেরা থামুন। মানুষকে আর কষ্ট দিবেন না। কল্যাণ পার্টি বিশ্বাস করে, প্রবীণ ও নবাগত তরুণদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জনগণের জয় হবেই হবে। অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা সবাই একটা পরিবর্তনের জন্য অপেক্ষা করছি। নতুন দিনের জন্য অপেক্ষা। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি আয়োজিত ঈদ পুনর্মিলনী ও আড্ডায় এমন কথা বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের আশি ভাগ মানুষের নেতৃত্ব দানকারী সব রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে এ আড্ডায় পেয়ে মনে হচ্ছে, এখান থেকেই আগামীর রাজনীতির নতুন কিছু হবে। আমরা সবাই একটা পরিবর্তনের জন্য অপেক্ষা করছি। নতুন দিনের জন্য অপেক্ষা। বিএনপি মহাসচিব বলেন, সারাজীবন যিনি গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন সেই দেশনেত্রী খালেদা জিয়া আজ গৃহঅন্তরীণ। একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ তৈরির জন্য চলমান আন্দোলনে লাখ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হামলা মামলা চলছে। তার পরও আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে।
নুরুল হক নূর বলেন, বাংলাদেশকে স্বাধীনতা এনে দেওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা যারা আছেন, আপনারা আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করে আরেকটি মুক্তিযুদ্ধের ডাক দেন। তাহলে তরুণরা রক্ত দিতে পিছপা হবে না। এ যুদ্ধ হবে গণতন্ত্রকে মুক্তির জন্য। সারা বাংলাদেশের প্রতিটি কোণায় গণআন্দোলনে এই সরকার এক সপ্তাহের মধ্যে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হবে।
স্বাগত বক্তব্যে কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আবদুল আউয়াল মামুন বলেন, অনুষ্ঠানটি যদিও ঈদ আড্ডা, কিন্তু সামনের জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপট বিবেচনায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক মিলনমেলা। তিনি উপস্থিত সবাইকে অভিনন্দন জানান।