রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশকে সর্বোচ্চ কঠোর হওয়ার নির্দেশ
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হওয়ার আশঙ্কা আছে।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: আগামী ২৮ অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে কঠোর অবস্থানে রয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বোচ্চ কঠোর হতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দিয়েছে সরকার। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় থানা ও গোয়েন্দা পুলিশের অভিযান চলছে। ডিএমপির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে। এদিকে একই দিনে বিএনপির কর্মসূচিস্থল থেকে মাত্র দুই কিলোমিটারের মধ্যে গুলিস্তানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মহাসমাবেশ ডেকেছে। পাশাপাশি দিনটিতে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদেরও মাঠে নামার সম্ভাবনা আছে। তারা ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর নিহত নেতাকর্মীদের স্মরণে কর্মসূচি দিতে পারে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হওয়ার আশঙ্কা আছে।
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ-মহাসমাবেশে বাধা সৃষ্টির জন্য এক সপ্তাহ আগে থেকে পুলিশ গণগ্রেফতার শুরু করেছে। এলাকাভিত্তিক তালিকা ধরে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে হানা দিচ্ছে তারা। এমনকি হোটেলে থাকা নেতাকর্মীদেরও হয়রানি করছে। প্রতিদিনই শহরের কোনো না কোনো প্রান্তে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার অথবা হয়রানি করা হচ্ছে। এ অবস্থায় নেতাকর্মীদের বড় একটি অংশই নিজ বাসায় অবস্থান করতে পারছেন না।
আটক করে পুরোনো মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে। শনিবার রাতেও নতুনবাজার এলাকা থেকে ১১ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রোববারও মতিঝিল, উত্তরাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। ২৪ অক্টোবরের পর থেকে ব্যাপক গ্রেফতারের আশঙ্কা করছেন বিএনপি নেতাকর্মীদের অনেকে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশ বলছে, তারা তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সমাবেশ ঘিরে বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানির বিষয়টি সঠিক নয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) ড. খ. মহিদ উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, রাজধানীবাসীর নিরাপত্তা রক্ষায় আমরা কাজ করি। যত দলই কর্মসূচি করুক, জনগণের নিরাপত্তা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। বিএনপির অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, তালিকা ধরে এলাকাভিত্তিক অভিযানের কোনো তথ্য আমার কাছে নেই।
ডিএমপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় তাদের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিএনপির যেসব নেতার নামে ওয়ারেন্ট রয়েছে, তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। এছাড়া গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আইনশৃঙ্খলা বিনষ্ট করতে পারেন-এমন নেতাকর্মীদের ওপরও নজর রাখা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ব্যক্তির নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর ধরে কাজ করছেন তারা। তবে অনেকেই ইতোমধ্যে বাসা পরিবর্তন করেছেন। ঢাকা ছেড়ে আশপাশের এলাকায় অবস্থান নিয়েছেন কেউ কেউ। নিয়মিত মোবাইল নম্বর বন্ধ করে পকেট রাউটারের মাধ্যমে অনলাইনে সক্রিয় থাকছেন অনেকে। এজন্য সহজেই তাদের শনাক্ত করা যাচ্ছে না। এছাড়া এই দিনটিকে ঘিরে জামায়াত-শিবিরের ভূমিকাও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। শনিবার ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান ঘোষণা করেছেন, ২৮ অক্টোবর কর্মসূচির আড়ালে কেউ সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করলে তা কঠোর হস্তে দমন করা হবে।
এদিকে ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশ ঘিরে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না বলে আশা প্রকাশ করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। রোববার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, দিনটিকে ঘিরে নাশকতার আশঙ্কা নেই। তবে আশঙ্কাকে ঘিরেই আমরা নিরাপত্তা পরিকল্পনা করে থাকি। এজন্য ২৮ অক্টোবর সব দল যেন নির্বিঘ্নে কর্মসূচি পালন করতে পারে, আমাদের সেই পরিকল্পনা থাকবে। তিনি বলেন, ঢাকা শহরে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। যে কোনো অপরাধী, ওয়ারেন্ট ও মামলার আসামিদের ধরার জন্য আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। রুটিন চেকপোস্ট ও টহল চলবে।
মহাসমাবেশ ঘিরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও রাজধানীর প্রবেশপথ ও থানা-ওয়ার্ডে সতর্ক পাহারা শুরু করেছেন। এক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে যেন বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘাতপূর্ণ অবস্থা সৃষ্টি না হয়, সেদিকেও নজর রাখছে পুলিশ। সমাবেশ ঘিরে রাজধানীর হোটেলগুলোয়ও পুলিশের বিশেষ নজরদারি রয়েছে। সারা দেশ থেকে আসা নেতাকর্মীদের অনেকেই আগেভাগে এসব হোটেলে অবস্থান নিয়েছেন-এমন তথ্য রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। পল্টন ও মতিঝিল এলাকার অন্তত ৮০টি হোটেলের কার্যক্রমে পুলিশ নজরদারি রাখছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
এ অবস্থায় রোববার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আমরা নিশ্চয়তা দিতে চাই, ২৮ অক্টোবরে আমাদের সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে সমাপ্ত হবে। এর নিরাপত্তার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে নিজস্ব সিকিউরিটি ব্যবস্থা যেটা প্রয়োজন, সেগুলো আমরা নিয়েছি। সরকার ও পুলিশ কোনো ধরনের বাধা দেবে না আশা করে তিনি বলেন, আপনারা কোথাও অহেতুক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবেন না, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করবেন না। সারা দেশ থেকে আমাদের শান্তিপ্রিয় মানুষ আসবেন। আমাদের অনুরোধ থাকবে তাদের সহযোগিতা করবেন। এখন পর্যন্ত কোথাও আমাদের দ্বারা অশান্তি সৃষ্টি হয়নি, যা কিছু করছে এই সরকার, তার পেটুয়া বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।