রাজনীতি আমার পথ নয়, আমি শুধু অভিনয়টা বুঝি,আরিফিন শুভ

রাজনীতি আমার পথ নয়, আমি শুধু অভিনয়টা বুঝি,আরিফিন শুভ

প্রথম নিউজ, অনলাইন:   ঢালিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা আরিফিন শুভ। শেখ মুজিবুর রহমানের বায়োপিক ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’-এ অভিনয় করে ব্যাপক আলোচনায় ওঠে এসেছিলেন এ নায়ক। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে পর্দার বাইরে তিনি। তাকে আর অভিনয়ে দেখা যায়নি।
আড়ালেই চলে যান এ নায়ক। তবে সম্প্রতি আড়াল ভেঙে সামনে এসেছেন শুভ। কোরবানির ঈদে ‘নীলচক্র’ দিয়ে পর্দায় ফিরছেন তিনি। এর সূত্র ধরেই অভিনেতার সঙ্গে কথা বলেছেন ইমরুল নূর।

অনেক দিন ধরে আপনাকে পাওয়া যাচ্ছে না...

সনি লিভের ‘জ্যাজ সিটি’র শুটিংয়ে দেশের বাইরে ছিলাম। এটি আমার প্রথম বলিউড ওয়েব প্রজেক্ট। কাজের ধরন, প্রস্তুতি—সব কিছুতেই বাড়তি সময় দিতে হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, চরিত্রের গভীরে যেতে হলে মাঝেমধ্যে নিভৃতে থাকা দরকার, এটাও একজন শিল্পীর পেশাদার আচরণ।
 আগের সব কাজেও সেটাই করেছি। আর এই তো আপনি আমাকে পেয়ে গেলেন!

আরিফিন শুভ

ঈদে ‘নীলচক্র’ মুক্তি পাবে। দেশের সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে দর্শক আপনার ছবিটি কতটা গ্রহণ করবে বলে মনে হয় আপনার?

‘নীলচক্র’ শুধু একটি সাসপেন্স থ্রিলার নয়, এটি এই সময়ের এক সতর্কবার্তা। সব ইন্টারনেট ব্যবহারকারী, বিশেষ করে অভিভাবকদের ছবিটি দেখা জরুরি। একটা অপ্রস্তুত মুহূর্ত কিভাবে একটি পরিবারকে ভেঙে দিতে পারে, সেই গল্পই বলা হয়েছে এতে।
এমন ঘটনা আমাদের চারপাশেই ঘটে চলেছে। প্লটটা সাহসী এবং প্রয়োজনীয় বলেই আমি ছবিটা করেছি। এই গল্প দর্শক গ্রহণ করবে কি না, সে সিদ্ধান্ত তাদেরই।

আগের প্রশ্নটা করার কারণ, ‘মুজিব—একটি জাতির রূপকার’ ছবিতে অভিনয়ের কারণে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আপনাকে ঘিরে সমালোচনা হয়েছে। যেমন, ছবিটিতে অভিনয়ের জন্য আপনি এক টাকা পারিশ্রমিক নিয়েছেন...

এ সমালোচনাটা বড় একতরফা। শ্রমের মূল্য একজন মানুষ নিজেই নির্ধারণ করেন। এটাই কি স্বাভাবিক নয়? আপনি কি আপনার বেতন নিজে ঠিক করেন না? বলেন তো, এত টাকার কম হলে আমি এখানে জয়েন করব না; সেটা কি অপরাধ? আমি যদি ১০০ টাকায় সিনেমা করি, আর ‘মুজিব’ করতে ১০ হাজার টাকা নিই—তাহলে সমালোচনার জায়গা ছিল। তখনই সমালোচনা করতে পারতেন। কিন্তু আমি তো উল্টোটা করেছি। পারিশ্রমিক নিইনি। টাকা না নিয়ে চুরি-ডাকাতি করিনি, দেশের ক্ষতি করিনি। আর হ্যাঁ, এটা প্রথম না। কাজের ক্ষেত্রে টাকাকে আমি কখনো সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিইনি। আমার কাছে গুরুত্ব পায় টিম, গল্প এসবই। সবশেষ ‘উনিশ ২০’র কথাই ধরুন, যে অঙ্কে চুক্তি হয়েছিল, পুরোটা নিইনি। কেন নিইনি, সেটা চাইলে প্রযোজকের কাছে জিজ্ঞেস করে জেনে নিতে পারেন।

গুঞ্জন আছে, এক টাকা পারিশ্রমিকের বিপরীতে আপনি পূর্বাচলে রাজউকের জমিও পেয়েছেন...

দেখুন, এক টাকার পারিশ্রমিক আর পূর্বাচলের জমি এই দুটোকে এক সুতায় গেঁথে যে গল্পটা ছড়ানো হয়েছে, সেটা যতটা মুখরোচক, বাস্তবতা থেকে তা ঠিক ততটাই দূরে। ফেসবুকে তো যেকোনো কিছু বলা যায়, সেখানে প্রমাণ লাগে না, দায় নিতে হয় না। কিন্তু বাস্তবে তো জবাবদিহিতা আছে। আমি কি প্রথম শিল্পী, যে রাজউকের জমি পেয়েছি? ‘শিল্পী’ কোটায় আগেও ১৫১ জন প্লট পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে তো কেউ ‘মুজিব’-এ ছিলেন না, কেউ এক টাকা পারিশ্রমিক নেননি। তাহলে তাঁরা কিভাবে পেলেন? আমি যেভাবে নিয়ম মেনে আবেদন করেছি, সরকার নির্ধারিত অর্থ জমা দিয়েছি, বাকিরাও ঠিক একইভাবে পেয়েছেন। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে গল্পটা আলাদা করে বলা হচ্ছে, যেন এই দুটি ঘটনা [সিনেমা আর জমি] একে অন্যের বিনিময়। আসলে যারা এ ধরনের গুজব ছড়াচ্ছে, তাদের উদ্দেশ্য তথ্যভিত্তিক প্রশ্ন তোলা নয়, জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করা। আর আমরা জানি, বিভ্রান্তি তৈরির জন্য সত্যের চেয়ে মুখরোচক গল্পই বেশি কাজে দেয়।

অনেকের ধারণা, ফেরদৌস-রিয়াজদের মতো আপনিও নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন...

নির্বাচনে যেতে চাইলে তো মনোনয়নপত্র কিনতে হতো। আমি কি সেটা করেছি? নির্বাচনে দাঁড়াতে হলে তো রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশ নিতে হয়। আপনি আমাকে কখনো দেখেছেন তেমন কিছু করতে? যখনই ‘মুজিব’ করলাম, তখন থেকেই নানা গুঞ্জন আমি নাকি এমপি হচ্ছি, এক টাকা পারিশ্রমিক নিয়েছি সুবিধা পাওয়ার জন্য। অথচ বাস্তবে এমন কিছু ঘটেছে কি? ‘মুজিব’ করে আমি যদি কোনো বিশেষ সুবিধা নিয়ে থাকি, আপনি অনুসন্ধান করে প্রমাণসহ সবাইকে জানান। আর এই ছবি করার অনেক আগেই স্পষ্ট করে বলেছি, আমি কখনো রাজনীতিতে জড়াব না। এটি আমার সচেতন এবং ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। কেউ চাইলে সেই বক্তব্যের রেকর্ডও খুঁজে পাবেন। রাজনীতি আমার পথ নয়, আমি শুধু অভিনয়টা বুঝি, আর সেটা নিয়েই থাকতে চাই।

তাহলে আপনার রাজনৈতিক অবস্থান কী?

আচ্ছা, বেন কিংসলে মহাত্মা গান্ধীর চরিত্র করেছেন, মরগান ফ্রিম্যান আর ইদ্রিস এলবা নেলসন ম্যান্ডেলার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। তার মানে কি তাঁরা ওই গোষ্ঠীর প্রতিনিধি হয়ে গেছেন? তাহলে আমার ক্ষেত্রে এ প্রশ্নটাই বা আসে কেন? আশা করি উত্তর পেয়েছেন।

আগামীতে যদি আপনাকে জিয়াউর রহমানের বায়োপিকে অভিনয় করতে বলা হয়, করবেন?

আবারও বলছি আমি একজন অভিনেতা। আমার কাজ চরিত্রে ঢুকে সেই চরিত্রকে সত্য করে তোলা। আমাকে যেকোনো চরিত্রে পরিচালক যোগ্য মনে করলে, আমি বরাবরই প্রস্তুত।

কয়েক দফা মুক্তির তারিখ দিয়েও ‘নূর’ মুক্তি পায়নি। শোনা গেছে, নায়ক-পরিচালক দ্বন্দ্বে ছবিটি আটকে রয়েছে। মুক্তির বিষয়ে নতুন কোনো খবর আছে?

কই! রাফীর [‘নূর’ নির্মাতা রায়হান রাফী] সঙ্গে তো এ সপ্তাহেও কথা হলো। আমি যত দূর জানি, ছবিটি মুক্তির প্রক্রিয়া চলমান। কবে আসবে সেটা নির্দিষ্ট করে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান বলতে পারবে। শুনেছি, দ্রুতই মুক্তি দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

নতুন আর কী করছেন?

দেশে এবং দেশের বাইরে কিছু কাজের কথা চলছে। দ্রুতই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে।