যমুনার চর কেটে বিক্রি, হুমকিতে আঞ্চলিক মহাসড়ক ও বাঁধ
স্থানীয়রা অবৈধ এসব বালুর ঘাট বন্ধে উপজেলা প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ দিলেও অজ্ঞাত কারণে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না বলে জানান তারা।

প্রথম নিউজ, টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনায় জেগে ওঠা চর অপরিকল্পিতভাবে কেটে বিক্রি করায় হুমকির মুখে পড়েছে আঞ্চলিক মহাসড়ক ও নির্মিত গাইড বাঁধ। স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাকর্মীরা ভূঞাপুর-তারাকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়ক-সংলগ্ন উপজেলার অর্জুনা ইউনিয়নের জগৎপুরা এলাকায় পাঁচটি বালুর ঘাট তৈরি করে ট্রাকে করে বিক্রি করছেন। স্থানীয়রা অবৈধ এসব বালুর ঘাট বন্ধে উপজেলা প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ দিলেও অজ্ঞাত কারণে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না বলে জানান তারা।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি জগৎপুরার মানিক হোসেন নামের এক ব্যক্তি অবৈধ এসব বালুর ঘাট বন্ধে উপজেলা প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। লিখিত অভিযোগে বলা হয়, জগৎপুরা এলাকায় রাতের আঁধারে বেআইনিভাবে বালু মাটি কাটা হচ্ছে। এতে হুমকির মুখে রয়েছে ভূঞাপুর-তারাকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়ক। এ সময় বালু মাটি কাটা বন্ধ করার কথা বলায় প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভূঞাপুর-তারাকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়ক-সংলগ্ন উপজেলার অর্জুনা ইউনিয়নের কুঠিবয়ড়া থেকে নলীন বাজার পর্যন্ত সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ড কয়েক শ কোটি টাকা ব্যয়ে গাইড বাঁধ নির্মাণ করেছে। কিন্তু সেই গাইড বাঁধের কাছ থেকে অপরিকল্পিতভাবে ভেকু (খননযন্ত্র) দিয়ে বালু মাটি কাটা হচ্ছে। এতে জগৎপুরা এলাকার ৫০০ মিটারের মধ্যে ৫টি বালুর ঘাট তৈরি করে ট্রাকযোগে বালু মাটি বিক্রি করা হচ্ছে। অবৈধভাবে বালু মাটি কাটার ফলে বন্যার সময় নির্মিত বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই চলছে অবৈধ এসব বালুর ঘাট।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগী কয়েকজন জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক তাহেরুল ইসলাম তোতার নেতৃত্বে দলের কতিপয় নেতাকর্মী ৫টি বালুর ঘাট তৈরি করেছেন। জেগে ওঠা এসব চর স্থানীয়রা মালিকানা দাবি করে বালু ব্যবসায়ীদের কাছে ইজারা দিয়েছেন। পরে বালু ব্যবসায়ীরা ভূঞাপুর-তারাকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়কের প্যালাসাইডিং ভেঙে রাস্তা তৈরি করে প্রতিনিয়ত ট্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছে। জগৎপুরা গ্রামের রায়হান নামের একজনকে জিজ্ঞেস করলে বলেন, আন্নেরা লিখে কী করবেন? প্রশাসনের লোকজন আসে, বেশি টাকা পায়, চলে যায়। বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেই প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। নিজের খেয়ে কার দায় পড়েছে কিছু বলতে?
ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত রহিজ উদ্দিন বলেন, যমুনায় বাঁধের কাজ শেষ হয়েছে কয়েক মাস। এর মধ্যে প্রভাবশালীরা বাঁধের কাছ থেকে ভেকু দিয়ে বালু মাটি কেটে ট্রাকযোগে বিক্রি করছে। কিছু বলতে গেলে মারধর করতে আসে। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে জানালেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। দুই মাস ধরে জেগে ওঠা চর কেটে বিক্রি করছে তারা। অপরিকল্পিতভাবে এভাবে বালু মাটি কেটে ফেলা হলে বন্যার সময় বাঁধ ভেঙে যাবে বলে জানান তিনি। রাজন হোসেন বলেন, যমুনা নদীতে যে গভীরতায় বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে, তার থেকে বেশি গভীর করে বালু মাটি ভেকু দিয়ে কাটা হচ্ছে। এতে বন্যা হলেই ভেঙে পড়বে বাঁধ। ফলে সরকারের কোটি কোটি টাকা ক্ষতি হবে। এ ছাড়া বালু মাটি উত্তোলনের ফলে হুমকিতে রয়েছে ভূঞাপুর-তারাকান্দি সড়ক।
ক্ষতিগ্রস্ত মানিক হোসেন বলেন, বাপ-দাদার জমিতে চর জেগে উঠেছে। সেই চর জোর করে কেটে ফেলা হচ্ছে। বাধা দিতে গেলে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। লিখিতভাবে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইশরাত জাহান বলেন, বালুর ঘাটে অভিযান পরিচালনা করা হয়। কিন্তু পরে রাতের আঁধারে আবার তারা বালুর ঘাট চালু করে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবৈধভাবে এসব বালুর ঘাট বন্ধে আবারও অভিযান পরিচালনা করা হবে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, যমুনা নদীর বাঁধের পাশে যারা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি বলেন, উপজেলার জগৎপুরা এলাকায় গাইড বাঁধের কাছ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করা হবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: