মোবাইল কল-ইন্টারনেটে গ্রাহকের খরচ বাড়লো

গতকাল জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে তিনি এই প্রস্তাব করেন।

মোবাইল কল-ইন্টারনেটে গ্রাহকের খরচ বাড়লো

প্রথম নিউজ, অনলাইন: নতুন বাজেটে মোবাইল ফোনে কথা বলা এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর আরও ৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। গতকাল জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে তিনি এই প্রস্তাব করেন। বর্তমানে টকটাইম ও ইন্টারনেট সেবার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা আছে। এর সঙ্গে আরও ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক  কার্যকর হলে মোবাইল ফোনে কথা বলা এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ বাড়বে। বর্তমানে একজন ভোক্তা মোবাইলে ১০০ টাকা রিচার্জ করলে ৭৩ টাকার কথা বলতে পারেন। বাকি ২৭ টাকা ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক হিসেবে কেটে নেয় মোবাইল অপারেটরগুলো।

মোবাইল সেবার ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হলে ভোক্তারা ৬৮ টাকার কথা বলতে পারবেন। কেবল মোবাইল ফোনের টকটাইম বা ইন্টারনেট নয়, ভ্যাট ও আমদানি শুল্ক সম্পর্কিত যত ধরনের হার কমানো বা বাড়ানোর প্রস্তাব থাকে, তা বাজেট ঘোষণার দিন থেকেই কার্যকর হয়। যদিও অর্থবছর শুরু হয় ১লা জুলাই থেকে। বাজেট বক্তৃতার পাশাপাশি একটি অর্থবিলও প্রকাশ করে সরকার। সেখানে শুল্কহার পরিবর্তন সম্পর্কিত বিষয়গুলো উল্লেখ থাকে। 

অর্থবিলের শেষ পৃষ্ঠায় ‘প্রভিশনাল কালেকশন অব ট্যাক্সেস অ্যাক্ট, ১৯৩১’-এর অধীনে নতুন পরিবর্তন ‘অবিলম্বে কার্যকর’ বলে উল্লেখ করা হয়। এর মানে হলো, ভ্যাট ও আমদানি শুল্ক সম্পর্কিত (মূলত পরোক্ষ কর) পরিবর্তনের প্রস্তাব বাজেট ঘোষণার দিন থেকেই কার্যকর হয়। এদিকে মোবাইল অপারেটরদের সিমকার্ড বিক্রির ওপর কর ২০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা হয়েছে। ফলে বাড়তি দামে সিমকার্ড কেনা লাগবে গ্রাহকদের। 

মোবাইল অপারেটররা বলছেন, সম্পূরক শুল্ক পাঁচ শতাংশ বাড়িয়ে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা রাজস্ব মিলবে। অপরদিকে বাজেটে হ্যান্ডসেট উৎপাদনে ৫ শতাংশ ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এতে প্রতিটি হ্যান্ডসেটে দাম বাড়তে পারে ১ হাজার টাকা। বর্তমানে হ্যান্ডসেট উৎপাদনে তিন থেকে সাড়ে সাত শতাংশ পর্যন্ত ভ্যাট দিতে হয় ১৭টি প্রতিষ্ঠানকে। বিক্রয় পর্যায়ে রয়েছে ৫ শতাংশ ভ্যাট। নতুন বাজেটে এ খাতে ভ্যাট আরও ৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এতে ৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব পাবে সরকার।

তবে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা ফোন বিক্রি বন্ধ হলে এ খাত থেকে বছরে রাজস্ব মিলবে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ সালের বাজেটে প্রথমবার মোবাইল ফোন ব্যবহারের ওপর সম্পূরক শুল্ক নিয়ে আসা হয়। প্রথমে ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক দিলেও পরে তা ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা হয় বিভিন্ন পক্ষের দাবির প্রেক্ষিতে। কিন্তু দুই বছর পর আবার এই শুল্ক ৫ শতাংশ করে দেয়া হয়। পরে ২০১৯ সালে তা ১০ শতাংশ এবং ২০২০ সালে ১৫ শতাংশ করা হয়। মাঝে যোগ করা হয়েছে ১ শতাংশ সারচার্জ। বাড়তে বাড়তে এই খাতে কর এখন ৩২ দশমিক ৫ শতাংশে গিয়ে পৌঁছেছে। নতুন বাজেটে শুল্ক আরোপ হলে তা ৩৯ শতাংশে পৌঁছাবে বলে জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

এ ছাড়া, স্থানীয় পর্যায়ে মোবাইল ফোন উৎপাদনে বর্তমানে সবমিলিয়ে ২৬ শতাংশ ও আমদানি করা মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে ৫৭ শতাংশ শুল্ককর দিতে হয়। স্থানীয় ও আমদানি করা মোবাইল ফোনে করের হার বাড়তে পারে। এদিকে টেলিকম খাতের বাজেট নিয়ে দেয়া এক প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে টেলিযোগাযোগ সেবার ক্ষেত্রে নতুন করে ৫ ভাগ কর বৃদ্ধি করার ফলে বর্তমানে গ্রাহকের কাছ থেকে কর আদায় করা হবে ৩৯ শতাংশ। যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। যার ফলে গ্রাহকরা কম পরিমাণ সেবা ভোগ করবে যেখানে অপারেটররা মূল্যবৃদ্ধি না করলেও দিন শেষে খরচ বৃদ্ধি পাবে।

অন্যদিকে দেশের ৪০ শতাংশ নাগরিক যেখানে এখনো টেলিযোগাযোগ সেবার বাইরে সেখানে নতুন করে সিমট্যাক্স বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করা হয়েছে যা পূর্বে ছিল ২০০ টাকা। এখানেও এই অর্থ দিনশেষে সংযুক্তির বাইরে থাকা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে আদায় করা হবে। এ ধরনের বাজেট কেন করা হলো তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। তিনি বলেন, যেখানে সরকারের ২০৪১ সালের মধ্যে শতভাগ মানুষকে টেলিযোগাযোগ ইন্টারনেট সেবার আওতায় আনার পরিকল্পনা সেখানে সিমট্যাক্স ও সেবার ক্ষেত্রে কর বৃদ্ধির কারণে সেবার বাইরে থাকা নাগরিকদের সংযুক্তি থেকে দূরে সরিয়ে রাখবে। সরকারের কাছে আমাদের দাবি থাকবে প্রস্তাবিত বাজেট দ্রুত বাস্তবায়ন না করে অধিকতর আলোচনা ও পরিকল্পনা নিয়ে বাস্তবায়ন করা। আর তা না হলে সেবাবঞ্চিত গ্রাহকদের নিয়ে আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া ছাড়া বিকল্প থাকবে না।