মুন্সিগঞ্জে বাড়ছে মশা ও ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা
সব শেষ গতকাল পর্যন্ত হাসপাতালে ডেঙ্গু কর্নারে ভর্তি ছিল ১৭ জন।
প্রথম নিউজ, মুন্সিগঞ্জ: উদ্বেগজনক হারে মুন্সিগঞ্জে বেড়ে চলেছে মশার উপদ্রব ও ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। স্থানীয়দের অভিযোগ, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় বাড়ছে মশাবাহিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের দেয়া তথ্যানুযায়ী, বিগত কয়েকদিনে ফের নতুন করে জেলায় নারী ও শিশুসহ ৩০১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে সদর হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন ১৮৭ জন। সব শেষ গতকাল পর্যন্ত হাসপাতালে ডেঙ্গু কর্নারে ভর্তি ছিল ১৭ জন। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ায় এরই মধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে আলাদা ডেঙ্গু কর্নার।
এদিকে চিকিৎসকদের দেয়া তথ্যানুযায়ী, মশাবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত হাসপাতালে টিকিট কেটে চিকিৎসা নিয়েছে প্রায় কয়েক শতাধিক মানুষ। পাশাপাশি জ্বরে আক্রান্ত অসংখ্য মানুষের মধ্যে ডেঙ্গুর সব ধরনের লক্ষণ থাকলেও প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ডেঙ্গু শনাক্ত না হওয়ার বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে শিগগিরই এডিস মশার নিয়ন্ত্রণে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসক।
শনিবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত সরেজমিনে সদর উপজেলার দুই পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাতে হোক কিংবা দিনে মশার আক্রমণ থেকে নিস্তার মিলছে না। একই সঙ্গে হঠাৎ করে প্রতিদিন বাড়ছে মশার উপদ্রব। বাসাবাড়ি, অফিস কিংবা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থানে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কয়েল কিংবা স্প্রে দিয়েও কমানো যাচ্ছে না মশা। সরেজমিনে আরো দেখা যায়, জেলা সদরের একাধিক স্থানে টানা বৃষ্টিতে তৈরি হয়েছে জলাবদ্ধতা। স্বচ্ছ পানির ময়লার ড্রেন ও বাসাবাড়ির বিভিন্ন স্থানে জমাট বাঁধা পানিসহ বিভিন্ন জলাশয় এখন হয়ে উঠেছে এডিস মশার বংশ বিস্তারের কেন্দ্রবিন্দু।
স্থানীয় ভুক্তভোগীরা জানান, মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে বিগত সময়ে লোকদেখানো মশা নিধন কার্যক্রম চলত মাঝেমধ্যেই। তবে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুতির পর দুর্বৃত্তের দেয়া আগুনে মুন্সিগঞ্জ পৌরসভা সম্পূর্ণ পুড়ে যাওয়ায় বন্ধ রয়েছে সব ধরনের নাগরিক সেবামূলক কার্যক্রম। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের কার্যক্রমও। অন্যদিকে উল্টো চিত্র সদর উপজেলার মিরকাদিম পৌরসভার। পৌর এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডে মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ঘরে ঘরে বৃদ্ধি পেলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কোনো উদ্বেগ নেই কর্তৃপক্ষের।
বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, দিনের বেলাও বাসাবাড়িতে টানিয়ে রেখেছে মশারি। এ সময় মিরকাদিম পৌরসভার কোথাও দেখা যায়নি এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের কোনো কার্যক্রম। এছাড়া মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার উত্তর ইসলামপুর ও দক্ষিণ ইসলামপুরে ঘুরে দেখা গেছে, সার্বক্ষণিক মশার কয়েল জ্বালিয়ে ও মশারি টানিয়ে রাখা হয়েছে বেশির ভাগ বাসাবাড়িতে। বিশেষ করে শিশুদের প্রতি রাখা হচ্ছে বাড়তি নজরদারি।
অন্যদিকে জেলা সদর হাসপাতালে ঘুরে দেখা গেছে জ্বরসহ মশাবাহিত রোগে সেখানে চিকিৎসা নিচ্ছে শিশু থেকে বৃদ্ধসহ নানা বয়সের মানুষ। সকাল হলে হাসপাতালে টিকিট কেটে চিকিৎসা নিতে দীর্ঘ লাইন তৈরি হয় সাধারণ মানুষের, যাদের মধ্যে অধিকাংশই জ্বরে আক্রান্ত।
এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. সাইদুর রহমান হিমেল বলেন, ‘নিয়ন্ত্রণহীনভাবে জেলাজুড়ে বেড়ে চলেছে মশার উপদ্রব, বাসাবাড়িসহ একাধিক স্থানে ও জমাট বাঁধা পানি নিষ্কাশনে পৌর কর্তৃপক্ষের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ঠেকানো যাচ্ছে না মশার বংশবিস্তার। তাই গড়ে প্রতিদিন মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এ জেলার অন্তত ১০ জন মানুষ। তাই মশক নিয়ন্ত্রণে জেলা সদরের স্থানীয় প্রশাসনসহ বিভিন্ন উপজেলার সংশ্লিষ্টদের দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।’
জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবু হেনা শুভ বলেন, ‘জেলাজুড়ে দ্রুত বাড়ছে মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে শিশুসহ নানা বয়সী অন্তত অর্ধশতাধিক মানুষ আসছে মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা নিতে। এদের মধ্যে অধিকাংশ দীর্ঘদিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত।’
নবনিযুক্ত জেলা প্রশাসক ফাতেমা তুল জান্নাত দাবি করেন, মশা নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট তৎপর তিনি। আবর্জনা থেকে যেন কোনোভাবে মশার বংশবিস্তার না হয় এ ব্যাপারেও নজরদারি রাখা হচ্ছে। এছাড়া তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবার থেকে দুটি ফগার মেশিনের মাধ্যমে মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে মশক নিধন স্প্রে করা হচ্ছে। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে শিগগিরই সচেতনতামূলক কার্যক্রমসহ মাইকিং করা হবে। পাশাপাশি আক্রান্তের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পেলে পরিস্থিতি অনুযায়ী দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় মশাবাহিত রোগে নানা বয়সের মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মনজুরুল আলম। তিনি বলেন, ‘মশার বংশবিস্তার ঠেকাতে সংশ্লিষ্টদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও ভূমিকা রাখা উচিত। তা না হলে মশাবাহিত রোগের প্রকোপ আরো বাড়বে।’