মানুষ টিসিবির লাইনে আর প্রধানমন্ত্রী কোটি কোটি খরচ করে গান শুনছেন : মির্জা ফখরুল

তিনি বলেন, ন্যায্যমূল্যের কার্ডেও দলীয়করণ করা হয়েছে।

মানুষ টিসিবির লাইনে আর প্রধানমন্ত্রী কোটি কোটি খরচ করে গান শুনছেন : মির্জা ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

প্রথম নিউজ, ঢাকা: জনগণের দুরাবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর কনসার্টে গান শুনার সমালোচনা করলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ বুধবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এক অনুষ্ঠানে তিনি এই সমালোচনা করেন। সদ্য কারামুক্ত বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজীকে সংবর্ধনা জানাতেই এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে রুহুল আমিন গাজী মুক্তি পরিষদ। সাংবাদিকদের বিভিন্ন ইউনিয়নের পক্ষ থেকে কারামুক্ত নেতাকে ফুলোর তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। ২০২০ সালের ২১ অক্টোবর নিজের কর্মস্থল দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার অফিস থেকে রুহুল আমিন গাজীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রাষ্ট্রদ্রোহ ও ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে দুইটি মামলা দায়ের করা হয় তার বিরুদ্ধে। ১৭ মাস পর গত ২২ মার্চ উচ্চ আদালতের জামিনে কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। অনুষ্ঠানে অসুস্থ রুহুল আমিন গাজী সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তার মুক্তির জন্য যারা আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে দেখুন না, এমন একটা অবস্থা তৈরি হয়েছে একদিকে মানুষ টিসিবির ট্রাকের পেছনে লাইন দিচ্ছে। কারণ তার নিত্য প্রয়োজনীয় চাল-ডাল-তেল-লবন কেনার জন্য যে অর্থ সেই অর্থ তার নাই এতো দাম বাড়ছে, হু হু করে দাম বেড়ে যাচ্ছে। আর  ওই সময় আমরা কি করছি? আমাদের প্রধানমন্ত্রী ভারত থেকে বিখ্যাত গায়ককে নিয়ে এসে কনসার্টে তিনি গান শুনছেন, নিজে ভিডিও করছেন এবং সেখানে কোটি কোটি খরচ হচ্ছে।আমাদের ব্যুরোক্রেসটরা তারা ঢাকা-টোরেন্টো ফ্লাইটে যাচ্ছেন, সেই ফ্লাইটে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। তার অর্ধেক হচ্ছে সরকারি কর্মকর্তারা তাদের পরিবারসহ। এই হচ্ছে দেশের অবস্থা।

‘ন্যায্যমূল্যের কার্ডেও দলীয়করণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকের পত্রিকায় আছে এই যে, ন্যায্যমূল্যের কার্ড দিয়েছে তারা। খুব জোর গলায় বলা হচ্ছে এক কোটি কার্ড দেয়া হয়েছে গরীব মানুষদেরকে তারা ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে পারবে। আমার ঠাকুরগাঁওয়ে যাকে কার্ড দেয়া হয়েছে সে হচ্ছেন আওয়ামী লীগের মহিলা দলের সভানেত্রী। তার দোতলা বাড়ি আর তার পাশেই একজন দুঃস্থ গরীব মানুষ, তার একটা চালাও ঠিক মতো বাস করার সেও কোনো কার্ড পায়নি। এই অবস্থা দেশের।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এখানে কথা বলার কোনো স্বাধীনতা নেই। দেশে এমন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে যাচ্ছে যে, কথা বললেই শিরচ্ছেদ হতে পারে।

গণমাধ্যম কর্মী আইনের খসড়া বিল জাতীয়  সংসদে উত্থাপনের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন,  এই আইন কারা করবে? সাংবাদিকরা করছে না, আইনটা করছে পার্লামেন্টের সদস্যরা। যারা নির্বাচিত হয়নি, যারা বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে তারা আইন তৈরি করবে সাংবাদিকদের জন্য, গণমাধ্যমের জন্য। সেটার কি অবস্থা দাঁড়াবে আমরা জানি। আরেকটা হচ্ছে উপাত্ত সংরক্ষন আইন। ৩৪ পৃষ্ঠা খসড়া দিয়েছে। এছাড়া বিটিআরসির মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়া কন্ট্রোল করতে পারবে সেই আইনও আনছে তারা। সামগ্রিকভাবে একটা পুরোপুরিভাবে কর্তৃত্ববাদী বললে ভুল হবে, ফ্যাসিবাদী একটা রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে এই বাংলাদেশ। এখানে কথা বলার কোনো স্বাধীনতা তো নেই, কথা বললে শিরোচ্ছেদও হতে পারে এই রকম একটা অবস্থা তৈরি হতে যাচ্ছে।

বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বাংলাদেশে এত খারাপ অবস্থা কখনো দেখিনি। এখানে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, শালীনতা বোধ এবং একজন অন্যজন সম্পর্কে যে সৌজন্যমূলক কথা বলবে, সেটা একেবারে নাই হয়ে গেছে। যারা চাকর, তারা যদি মালিক বনে যান, তখন তো এরকম অবস্থায় দাঁড়াবে। এমন কথা এমন লোক বলছেন, যারা জনগণের টাকায় চলাফেরা করছেন। তাদের বেতন হয় জনগণের টাকায়, তারা মালিক হয়ে বসে আছেন।

সাংবাদিকদের ঐক্য জরুরী বলে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এখানে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সমস্যার কথা আসছে। এগুলো কিন্তু থাকবে। সবসময়ই যুদ্ধ যখন হয়, সংগ্রাম যখন হয় তখন সেখানে দালাল থাকে, তখন সেখানে বিভিন্ন রকমের মানুষ থাকে যারা বিভিন্ন রকমের ফায়দা নিতে চায়। এগুলোকে কাটিয়ে কিন্তু আমাদেরকে এগুতে হবে, এগুলোকে কাটিয়ে আমাদেরকে ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে। সেটা হতে হবে ইস্পাত দৃঢ় ঐক্য। সেই ঐক্যের মধ্য দিয়ে আমরা বাংলাদেশকে মুক্ত করবো, আমরা সাংবাদিকদের লেখার স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করবো। এটা আমাদেরকে করতে হবে, এটা আমাদের দায়িত্ব। আসুন সেই লক্ষ্যে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করি। অবশ্যই আমরা জয়লাভ করবো। সূরযোদয় হবেই, হতেই হবে।অন্যায়কে ন্যায়ের কাছে পরাজিত হতে হবে।

আয়োজক সংগঠনের আহবায়ক মহিউদ্দিন আলমগীরের সভাপতিত্বে এবং সাংবাদিক আবদুল হাই শিকদার ও শহীদুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, জামায়াতের প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আখন্দ, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরী, অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া, অধ্যাপক লুতফুর রহমান, সাংবাদিক  কামাল উদ্দিন সবুজ, এলাহী নেওয়াজ খান, হাসান হাফিজ, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, আমিরুল ইসলাম কাগজী, সর্দার ফরিদ, কাদের গনি চৌধুরী, বাছির জামাল, খোরশেদ আলম, ইলিয়াস হোসেন, রফিকুল ইসলাম, মোরসালিন নোমানী প্রমুখ।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom