মধুখালীতে ২ ভাইকে পিটিয়ে হত্যা
স্কুলের পাশের ওই মন্দিরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর আগুন দেওয়ার অভিযোগ তুলে স্কুলে থাকা নির্মাণ শ্রমিকদের ওপর স্থানীয় কয়েকশ মানুষ লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালান।
প্রথম নিউজ, ফরিদপুর: ফরিদপুরের মধুখালীর ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী গ্রামে কালীমন্দিরে আগুন দেওয়ার অভিযোগ এনে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এসময় হামলায় আহত পাঁচজনকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ (বিএসএমএমসি) হাসপাতাল ও মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনার সৃষ্টি হলে ফরিদপুর, রাজবাড়ী ও মাগুরা জেলার বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন রাখা হয়েছে। হামলায় নিহত দুই ভাই হলেন-আরশাদুল ও আশরাফুল। তারা নির্মাণ শ্রমিক ছিলেন। তাদের বাড়ি নওপাড়া ইউনিয়নের চোপের ঘাট এলাকায়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালি থানার ওসি মো. হাসানুজ্জামান।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সম্প্রসারণ কাজে নিয়োজিত ছিলেন বেশ কয়েকজন শ্রমিক। স্কুলের পাশের ওই মন্দিরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর আগুন দেওয়ার অভিযোগ তুলে স্কুলে থাকা নির্মাণ শ্রমিকদের ওপর স্থানীয় কয়েকশ মানুষ লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালান। এ সময় শ্রমিকরা প্রাণ বাঁচাতে স্কুলের একটি কক্ষে আশ্রয় নেন। বিক্ষুব্ধ লোকজন গ্রিল ও দরজা ভেঙে তাদের ওপর হামলা চালান। খবর পেয়ে প্রথমে মধুখালী থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার চেষ্টা করলে গ্রামবাসী তাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও মাগুরা জেলা পুলিশের কয়েকটি টিম ঘটনাস্থলে গেলে তাদের ওপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করে গ্রামবাসী।
এ সময় পুলিশ কিছু ফাঁকা গুলি ছুড়ে বিক্ষুব্ধদের সরিয়ে দিয়ে স্কুলের ভেতর থেকে মুমূর্ষু অবস্থায় সাত নির্মাণ শ্রমিককে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরশাদুল ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আশরাফুল মারা যান। কালীমন্দিরের মহিলা সেবাইত তপতি মণ্ডল বলেন, সন্ধ্যায় মন্দিরে আলো জ্বালিয়ে বাড়ি যাওয়ার সময় দেখি, স্কুলের শ্রমিকরা চিৎকার-চেঁচামেচি করছেন। পরে শুনতে পাই মন্দিরে আগুন লেগেছে। আমি দ্রুত এসে কালী মায়ের কাপড়ের আগুন নেভাই। কারা আগুন দিয়েছে তা দেখিনি।
নির্মাণ কাজের ঠিকাদার মনজিল শেখ বলেন, সন্ধ্যার পর শ্রমিকরা আমাকে ফোন করে জানান-মন্দিরে কে বা কারা আগুন দিয়েছে। শ্রমিকরা মন্দিরে গিয়ে আগুন নেভানোর কাজ করেন। এরপর উত্তেজিত গ্রামবাসী স্কুল কক্ষে শ্রমিকদের আটকে রাখে। জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চার প্লাটুন বিজিবি ও বিপুল সংখ্যক আর্মড পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনাটি কেউ যাতে ভিন্ন খাতে না নিতে পারে সেজন্য প্রশাসন সতর্ক রয়েছে।