ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে কুশিয়ারা, প্রবল বেগে ঢল নামছে
৬টি উপজেলার পরিস্থিতি ভয়াবহ। লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি। আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেই। খাবার নেই। হাহাকার বাড়ছে। এখন ত্রাণ পাচ্ছে সীমান্ত এলাকার মানুষ।
প্রথম নিউজ, সিলেট : প্রথম ধাক্কা সুরমায়। সীমান্ত দিয়ে হু হু করে পানি নামে। ভেসে যায় কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও সিলেট সদর। পানি কমছে ওই এলাকায়। কিন্তু ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে কুশিয়ারা। প্রবল বেগে ঢল নামছে। এতে করে দুর্গতি বেড়েছে জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগরে। ওই ৬টি উপজেলার পরিস্থিতি ভয়াবহ। লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি। আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেই। খাবার নেই। হাহাকার বাড়ছে। এখন ত্রাণ পাচ্ছে সীমান্ত এলাকার মানুষ। কিন্তু নতুন করে প্লাবিত এলাকায় এখনো বেসরকারি ত্রাণ পৌঁছায়নি। ফলে বানভাসি মানুষের মধ্যে হাহাকার চলছে। বিদ্যুৎ সংযোগ নেই কয়েকটি উপজেলায়। বিশেষ করে সিলেটের সঙ্গে জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার ও বালাগঞ্জের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পানিতে আটকে থাকা মানুষজনকে উদ্ধার করতে বেগ পেতে হচ্ছে। এ কারণে ওইসব এলাকায় সেনাবাহিনী দিয়ে উদ্ধার তৎপরতা চালানোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। বালাগঞ্জ সদর কুশিয়ারা নদীর তীরের জনপদ। গোটা সদর পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রতিটি দোকানপাটে ঢুকেছে পানি। তাজপুর-বালাগঞ্জ সড়কে কোথাও কোমরপানি।
যানবাহন চলাচল বন্ধ। বিচ্ছিন্ন বালাগঞ্জ। গতকাল দুপুর পর্যন্ত পানি বেড়েই চলেছে। নদীর তীরবর্তী পূর্ব গৌরীপুর, পশ্চিম গৌরীপুর, বালাগঞ্জ সদরসহ কয়েকটি এলাকায় মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। বাজারে পানি উঠে যাওয়ায় খাদ্যসামগ্রী কিনতেও পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারি খাদ্য গুদাম রক্ষায় প্রশাসনের কর্মকর্তারা কাজ করছেন। খাদ্য গুদামের নিচে থাকা চালের বস্তা ভিজে গেছে। ওসমানীনগরের হাওর অঞ্চলের অবস্থা ভয়াবহ। গ্রামে গ্রামে বুক সমান পানি। ৪০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ওই এলাকায়। কিন্তু আশ্রয়কেন্দ্রে পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছেন না। খাদিমপুর এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রের লোকজন জানিয়েছেন, স্থানীয়ভাবে লোকজন একবেলা রান্না করা খাবার দিচ্ছেন। এখনো সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনো ত্রাণ তাদের কাছে পৌঁছেনি। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা সাদিপুর ও পশ্চিম পৈলনপুর ইউনিয়নে। এ দুটি ইউনিয়নের শতভাগ এলাকা পানির নিচে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে গ্রামগুলো। উপজেলা সদরের সঙ্গে সংযোগ প্রায় সব সড়কই পানিতে নিমজ্জিত। সড়কের উপর দিয়ে যাচ্ছে নৌকা। এমন পরিস্থিতি বিগত একশ’ বছরে হয়নি বলে জানিয়েছেন ওসমানীনগরের লোকজন। সিলেটের উজানে ভারতের শিলচর এলাকা। আসামের গণমাধ্যমের খবর শিলচর এলাকা পানির নিচে।
ফলে ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে সিলেটের কুশিয়ারা। বরাক নদীর ৮০ ভাগ পানি টানছে কুশিয়ারা। অমলসীদ দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। অমলসীদের স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গতকাল বিকাল পর্যন্ত প্রবল বেগে উজান থেকে নামছিল পানি। জকিগঞ্জের নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে। সুলতানপুর, বীরশ্রীসহ কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। কয়েকটি বাড়িঘর ভেঙে গেছে। এসব এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই হচ্ছে না মানুষের। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বহু এলাকা। পানিবন্দি মানুষজন মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। অনাহারে অর্ধাহারে তারা দিন কাটাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের উপ বিভাগীয় প্রধান প্রকৌশলী একেএম নিলয়পাশা জানিয়েছেন, নদীর সঙ্গে এখন জনপদ মিশে গেছে। বাঁধের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করেছে। তিনি জানান, পরপর দু’দফা বন্যায় সিলেটের সুরমা-কুশিয়ারা নদীর সাড়ে ৩০০ কিলোমিটার বাঁধের ৪০টি পয়েন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর এখন পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় বাঁধগুলোর মাটিও নরম হয়ে পড়ছে। এজন্য বন্যা পরবর্তী সময়ে সিলেটে বাঁধ মেরামত করাই হবে বড় চ্যালেঞ্জ। সিলেটে আইজিপি: বন্যায় আটকে পড়া প্রায় ৫ হাজার মানুষকে পুলিশ সদস্যরা ঝুঁকি নিয়ে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আইজিপি বেনজির আহমদ।
৫ হাজার প্যাকেট খাবার পাঠালেন রাসিক মেয়র: সিলেট ও সুনামগঞ্জ অঞ্চলের বন্যার্ত মানুষের জন্য ৫ হাজার প্যাকেট খাবার পাঠিয়েছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। গতকাল দুপুরে একটি ট্রাকযোগে এ খাদ্যসামগ্রী নিয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আসেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধি দল। তারা সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) ইয়াসমিন নাহার রুমার কাছে বানভাসিদের জন্য ২১শ’ প্যাকেট খাবার হস্তান্তর করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ১৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. তৌহিদুল হক, ১৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. শহিদুল ইসলাম, ১৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আনোয়ার হোসেন, ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আব্দুল মুমিন, রাজশাহী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ কর্মকর্তা সৈয়দ জুবায়ের হোসেন মুন, সিলেট সিটি করপোরেশনের ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শান্তনু দত্ত সন্তু, ২০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য কবিরুল ইসলাম কবির। বন্যার্তদের জন্য খাদ্যসামগ্রীর মধ্যে ছিল চিড়া ২ কেজি, চিনি ১ কেজি, মুড়ি আধা কেজি, নাপা এক পাতা, ওরস্যালাইন এক বক্স, বিস্কুট ১টি, মোমবাতি ২টি, ম্যাচ ২টি ও ন্যাপকিন এক ব্যাগ। এদিকে, সুনামগঞ্জের জন্য রাসিক মেয়র ২৯শ’ প্যাকেট খাবারসহ মোট ৫ হাজার প্যাকেট খাবার পাঠিয়েছেন বন্যার্ত মানুষের জন্য। ওসমানী এয়ারপোর্ট চালু: ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান ওঠানামা শুরু হয়েছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় ৬ দিন পর গতকাল ভোর থেকে এই বিমানবন্দরে ফ্লাইট ওঠানামা সচল হয়। গতকাল থেকে বিমানবন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম চলছে।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা যায়, গতকাল ওসমানী বিমানবন্দর থেকে সিলেট-লন্ডন রুটে দুটি ফ্লাইট আসা-যাওয়া করেছে। এছাড়া একটি ফ্লাইট ম্যানচেস্টারের উদ্দেশ্যে সিলেট ত্যাগ করেছে। এছাড়া সিলেট-ঢাকা রুটে একাধিক ফ্লাইটও আসা যাওয়া করেছে। এর আগে বন্যায় রানওয়েতে পানি ওঠায় গত ১৭ই জুন বন্দরের ফ্লাইট কার্যক্রম ৩ দিনের জন্য বন্ধের ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। ৩ দিন পর গত ২০শে জুন ওসমানী বিমানবন্দর পরির্দশনে আসেন বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews