ভুয়া ডিবি’র দৌরাত্ম্য: গ্রেপ্তার ৬
র্যাব জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে ভুয়া ডিবির দৌরাত্ম্য বেড়েছে। তারা ঢাকা এবং তার আশপাশের এলাকায় সক্রিয় রয়েছে।

প্রথম নিউজ, ডেস্ক : ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের টাকা তুলে ফিরছেন গ্রাহক তখন মুহূর্তেই ভুয়া ডিবি পার্টি খবর পেয়ে যাচ্ছে। পরে পথে গতিরোধ করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয় দিয়ে তাকে কালো গ্লাসের মাইক্রোবাসে তুলে নেবে। এরপর পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বেঁধে মাইক্রোবাসের সিটের নিচে উপুড় করে চলে তার ওপর নির্যাতন। এ অবস্থায় কিছুক্ষণ ঢাকার আশপাশের এলাকায় মাইক্রোবাস নিয়ে ঘুরে বেড়ায় তারা। পরে টাকা নিয়ে নির্জন কোনো স্থানে চোখ বাঁধা অবস্থায় ওই ব্যক্তিকে ছেড়ে দেয়া হয়। ডিবি পরিচয়ে, ডিবির ব্যবহৃত সরঞ্জাম নিয়ে রাজধানীতে এভাবেই ডাকাতি করছিল তারা। এই চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। র্যাব জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে ভুয়া ডিবির দৌরাত্ম্য বেড়েছে। তারা ঢাকা এবং তার আশপাশের এলাকায় সক্রিয় রয়েছে। গতকাল সকালে রাজধানীর কাওরান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১০ অধিনায়ক পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. ফরিদ উদ্দিন এ তথ্য জানান। তিনি জানান, গত সোমবার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারি, ভুয়া ডিবি পরিচয় দিয়ে একটি চক্র রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার বিভিন্ন ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনকারী ব্যক্তি ও পথচারীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও ভয়ভীতি দেখিয়ে ডাকাতির চেষ্টা করছিল। পরে ভুয়া ডিবি পরিচয়কারী ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তারা হলো: সবুজ খান (৪৬), মিন্টু পাটোয়ারী (৪০), রাসেল মোল্লা (৪৫), ইকবাল মিয়া (৩৯), মনিরুল ইসলাম (৪০) ও খোকন মিয়া (৪৫)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৩টি ভুয়া ডিবি পুলিশের জ্যাকেট, ২টি ওয়াকিটকি সেট, ১টি হাতকড়া, ১টি খেলনা পিস্তল, ১টি হ্যান্ডফ্লাশ লাইট, ১টি পুলিশ মনোগ্রাম সংবলিত স্টিকার, ৭টি মোবাইল ফোন ও ১ হাজার ৯৫০ টাকা জব্দ করা হয়। তিনি আরও জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের সদস্য। তারা ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান, মতিঝিল, বায়তুল মোকাররমসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করতো। তারা মূলত ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের টাকা উত্তোলনকারী ব্যক্তিকে টার্গেট করে ডাকাতি করতো। তিনি আরও জানান, গ্রেপ্তারকৃত সবুজ খান ভুয়া ডিবি পুলিশ চক্রের মূলহোতা। এ কাজের জন্য গ্রেপ্তারকৃত রাসেল ব্যাংক ও জনবহুল এলাকায় অবস্থান করে বিভিন্ন ব্যক্তিকে টার্গেট করতো। তাকে অনুসরণ করতো এবং ব্যক্তির শরীরের গড়ন, পোশাকের বর্ণনা ও অবস্থান সম্পর্কে তাদের সমন্বয়ক মিন্টুকে জানায়। তখন মিন্টু পরিকল্পনা অনুযায়ী অন্য সহযোগীদের নিয়ে ডিবি পুলিশের জ্যাকেট-সদৃশ পোশাক পরা অবস্থায়, হাতে ওয়াকিটকি সেট ও হ্যান্ডকাফ নিয়ে ভাড়া করা মাইক্রোযোগে টার্গেট ব্যক্তিকে ঘিরে ফেলে। তারা ডিবি পুলিশের কর্মকর্তা হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতো।
টার্গেট ব্যক্তি কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাকে মাদক কারবারি বা মামলার আসামিসহ বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে মাইক্রোবাসে তুলে মারধর করতো এবং দ্রুত স্থান ত্যাগ করে চলে যেতো। পরবর্তী সময়ে ভিকটিমের কাছে থাকা টাকা, মোবাইল ও স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে তাকে সুবিধাজনক স্থানে মাইক্রোবাস থেকে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যেতো। তিনি আরও জানান, সবুজ খান ভুয়া ডিবি পুলিশ চক্রের মূলহোতা। সে ডাকাতি করার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি (ডিবি পুলিশের জ্যাকেট, ওয়াকিটকি, হাতকড়া, খেলনা পিস্তল ইত্যাদি) সরবরাহকারী হিসেবে কাজ করতো। তার বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী ও পল্টন থানায় একই অপরাধে ৩টি মামলা রয়েছে। র্যাবের হাতে ধরা পড়া মিন্টু পেশায় ছদ্মবেশী সিএনজি ও অটোরিকশা চালক। এই পেশার আড়ালে সে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে ডাকাতি করার জন্য তথ্য সংগ্রহ করতো। পরে তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সুবিধাজনক সময়ে নির্দিষ্ট বাড়ি, দোকান, ব্যাংক, ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনকারী ব্যক্তিদের পথরোধ করে তাদের সর্বস্ব লুটে নিতো। সংবাদ সম্মেলনে এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের সহকারী পরিচালক মো. আল-আমিন, র্যাব-১০ এর এএসপি (অপারেশন) মো. এনায়েতুর রহমান সোয়েব ও এএসপি (মিডিয়া) মো. ফখরুল ইসলাম প্রমুখ।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews