ভারতে খবরের সত্যতা যাচাই করবে সরকার
ভারতে খবরের সত্যতা যাচাই করবে সরকার
প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: ভারতে এখন থেকে সংবাদের সত্যতা যাচাই করবে সরকার। এ সংক্রান্ত এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার বলেছে, সরকার-সংক্রান্ত খবরের সত্যতা যাচাইয়ের ভার থাকবে প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোর (পিআইবির) হাতেই। কোনো খবর বা তথ্যকে পিআইবি ‘অসত্য’ বা ‘ফেক নিউজ’ জানিয়ে দিলে তা প্রচার করা যাবে না। শুধু তাই নয়, পিআইবি চিহ্নিত ‘ফেক নিউজ’ বা অসত্য খবর গুগল, ফেসবুক, টুইটার বা সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকেও সরিয়ে দিতে হবে। গত বৃহস্পতিবার ভারতের কেন্দ্রীয় বৈদ্যুতিক ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে ২০২১ সালের তথ্যপ্রযুক্তি আইনের এ সংশোধনী প্রকাশ করে। এদিকে সরকারের এ ধরনের পদক্ষেপের প্রতিবাদ জানিয়েছে এডিটর্স গিল্ড অব ইন্ডিয়া, দিল্লি ইউনিয়ন অব জার্নালিস্টসহ (ডিইউজে) দেশটির বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন। তারা এ বিজ্ঞপ্তিকে সাংবাদিকতার পরিপন্থি বলে উল্লেখ করেছে। খবর হিন্দুস্তান টাইমসের।
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট গত বুধবার বলেন, সরকারের সমালোচনার অর্থ দেশের বিরোধিতা নয়। গণমাধ্যমের সবকিছুই নিজেদের পক্ষে যাবে—এমনটাও মনে করা উচিত নয় সরকারের। আর সুপ্রিম কোর্টের ওই মন্তব্যের এক দিন পরই এ বিজ্ঞপ্তি জারি করে সরকার। এ নির্দেশের ফলে সরকার-সংক্রান্ত খবর ছাপানো বা সম্প্রচারের পুরো দায় বর্তাবে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের ওপর। সংবাদের সত্যাসত্যের প্রমাণ তাদেরই আদালতে দিতে হবে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর বলেন, সরকারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত তথ্য যাচাই করা বাইরের কারও পক্ষে কঠিন। গণতন্ত্রকে কমজোরি করতে শত্রু দেশ থেকে অনেক প্রচার চালানো হয়। তা রুখতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সরকার একটা ভারসাম্য রক্ষা করতে চায়। এতে কারও মৌলিক অধিকার খর্ব হবে না। বাকস্বাধীনতাও হরণ করা হবে না।
এডিটর্স গিল্ড অব ইন্ডিয়াসহ সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন ২০২১ সাল থেকেই নরেন্দ্র মোদির সরকারের এই উদ্যোগের বিরোধিতা করে আসছিল। সব আপত্তি ও সমালোচনা উপেক্ষা করে সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার পর এডিটর্স গিল্ড অব ইন্ডিয়া শুক্রবার বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, এই সিদ্ধান্ত দমনমূলক ও সেন্সরশিপের সমতুল্য। অবশ্য কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর শুক্রবার এক সাক্ষাৎকারে বলেন, এই পদক্ষেপ বাকস্বাধীনতা বা মৌলিক অধিকার খর্ব করবে না। কেরালার নিউজ চ্যানেল ‘মিডিয়া ওয়ান’-এর ওপর জারি হওয়া সরকারি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়ে গত বুধবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় বলেছিলেন, সরকারের সমালোচনার অর্থ দেশের সমালোচনা নয়, দেশ বিরোধিতাও নয়। সরকার ও রাষ্ট্র আলাদা। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার যুক্তিতে সংবাদমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া যায় না। তুচ্ছ কারণে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাকে জাহির করাও যায় না।
সুপ্রিম কোর্টের ওই রায়ের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় বৈদ্যুতিক ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে ২০২১ সালের তথ্যপ্রযুক্তি আইনের সংশোধনী প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, সরকার-সংক্রান্ত জাল, অসত্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ, প্রচার অথবা সংগ্রহ করে রাখা যাবে না। খবরের সত্যাসত্য যাচাইয়ের ভার থাকবে পিআইবির হাতে। পিআইবি কোনো খবরকে ‘অসত্য’ বা ‘ফেক নিউজ’ বলে চিহ্নিত করলে তা প্রত্যাহার তো করতেই হবে, পাশাপাশি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানাতে হবে খবরটি ভুল বা অসত্য ছিল। পিআইবির অধীন তথ্য যাচাই ইউনিটের পরিচালন পদ্ধতি কী হবে, সত্য-মিথ্যা নির্ধারণ ও নিরূপণের ক্ষেত্রে তাদের ক্ষমতা একচেটিয়া হবে কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছে এডিটর্স গিল্ড। সেইসঙ্গে এ বিজ্ঞপ্তি বাতিলের আহ্বানও জানিয়েছে সংগঠনটি। দিল্লি ইউনিয়ন অব জার্নালিস্ট (ডিইউজে) এ বিজ্ঞপ্তির প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছে, এর মাধ্যমে পিআইবিকে পুলিশের মতো ক্ষমতা দেওয়া হলো যা সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করবে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও সাংবাদিকদের সংগঠনও এই বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে সরকারকে স্মারকলিপি দিয়েছে।