বড়দিনে প্রার্থনা আর আনন্দে মেতেছেন খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা

বড়দিনে প্রার্থনা আর  আনন্দে মেতেছেন খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা

প্রথম নিউজ, ঢাকা: ধর্মীয় আচার, প্রার্থনা ও আনন্দ-উৎসবের মধ্য দিয়ে শুভ বড়দিন উদযাপন করছেন খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ। রোববার সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের হলি রোজারিও চার্চে গান এবং প্রার্থনার মাধ্যমে বড়দিনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।

আজ রোববার  সকাল সাতটায় শুরু হয় বড়দিনের প্রথম প্রার্থনা। এরপর সকাল ৯টায় হয় খ্রিস্টযোগ (বিশেষ প্রার্থনা)। প্রার্থনায় অংশ নিতে ভোরে চার্চে সমবেত হন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা। এতে যিশুর মহিমাকীর্তন এবং শান্তি ও ন্যায়ের কথা বলা হয়। গির্জার ভেতরে-বাইরে সব জায়গায় খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রার্থনায় মগ্ন থাকতে দেখা যায়। যিশু খ্রিস্টের আদর্শ ও শিক্ষা অনুসরণের আহ্বান জানানো হয় প্রার্থনায়। একই সঙ্গে সবার জন্য শান্তি ও আনন্দের বার্তা দেন তারা।

বাংলাদেশে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রধান আর্চবিশপ বিজয় ডি’ক্রুজ বলেন, সকাল ৯টায় দিনের প্রার্থনা করলাম। আমরা বেদি মঞ্চে গিয়েছি, নবজাতক শিশু যিশু খ্রিস্টের প্রতিকৃতিতে ধূপআরতি দিয়েছি। তারপর প্রার্থনা করি। ঈশ্বরের বাণী শুনেছি ও উপদেশ বাণী রাখা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, যিশু আমাদের মুক্তিদাতা, শান্তিদাতা। তিনি বিশ্বের শান্তি, মুক্তি ও আনন্দ আর মিলন ঘটাতে পৃথিবীতে এসেছেন। তবে আমরা দেখছি ইউক্রেনসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অশান্তি-মারামারি, এতে আমরা দুঃখ প্রকাশ করি। আমরা ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করি। ইশ্বরের পক্ষে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। আমরা প্রার্থনা জানাচ্ছি। ঈশ্বর পুত্র যিশু খ্রিস্ট জন্মগ্রহণ করেছেন এই পৃথিবীতে, এর মধ্য দিয়ে শান্তি নেমে আসুক। মানুষে মানুষে মিলন ঘটুক। মানুষ মুক্তি, আনন্দ ও স্বাধীনতা লাভ করুক।

বিশেষ এই দিনটি উপলক্ষে হলি রোজারিও গির্জার ভেতরে ও বাইরে সাজানো হয়েছে। বাহারি রঙের বেলুন, ফুল ছাড়াও আলোকসজ্জায় বর্ণিল একাধিক ক্রিসমাস ট্রি। গোয়ালঘরে রাখা হয়েছে শিশু যিশু খ্রিস্ট, মা মেরির প্রতিকৃতি। গির্জার প্রবেশ মুখে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। নিরাপত্তা তল্লাশি থেকে গির্জায় প্রবেশ করতে হচ্ছে সবাইকে। বেলা ১১টার দিকে খ্রিস্টযোগ শেষ হয়। এরপর উৎসবরে আমেজে গির্জায় ছবি তোলা ও কুশলাদি বিনিময়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন সবাই।

যিশুভক্ত ক্রেইজা বলেন, ছোট-বড় সবাইকে নিয়ে এই দিনটা উদযাপন করছি। যিশু খ্রিস্ট সমাজে শান্তি ও ক্ষমা প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই জিনিসটা যেন আমরা নিজেদের মধ্যে ধারণ করতে পারি। একজনের আরেকজনের প্রতি ক্ষমাশীল হতে পারি।

তিনি বলেন, করোনা মহামারি কাটিয়ে সবাই যে একত্রিত হতে পেরেছি এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় পাওয়া। ত্রাণকর্তা যেন আমাদের পাপ থেকে মুক্তি দিতে পারেন এটাই আজকে আমাদের চাওয়া।

খাগড়াছড়ি : খাগড়াছড়িতে বিভিন্ন পাড়ায় বড়দিনের আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠেছেন খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা। সকাল থেকে প্রার্থনা ও ধর্মীয় গানের মধ্যে দিয়ে খ্রিষ্টানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বড়দিন পালিত হচ্ছে। রোববার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে জেলার বিভিন্ন গির্জা ও চার্চে  প্রার্থনার মধ্য দিয়ে বড়দিন উদযাপন করছেন তারা।

এর আগে ২৪ ডিসেম্বর রাতে সকল গির্জায় বড়দিন উপলক্ষে রাত ১২টা ১ মিনিটে কেক কাটা হয়। খাগড়াছড়িতে ৬১টি গির্জা ও চার্চ ছাড়াও বিভিন্ন খ্রিষ্টান পল্লীতে উৎসবের আমেজ চলছে। 

পুষ্পিতা ত্রিপুরা জানান, সারা পৃথিবীতে আমরা একযুগে বড়দিন পালন করছি। এই দিনে প্রভু যিশু খ্রিষ্ট জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাই আমরা খ্রিষ্টান ভাই-বোনেরা এই দিনটিতে এক হয়ে উৎসবের মাধ্যেমে পালন করে থাকি।  বিনা ত্রিপুরা বলেন, আমরা বড়দিন উপলক্ষে সকাল থেকে খাগড়াপুর চার্চে এসেছি। আমরা এখানে গান বাজনা শেষে কেক কেটে আনন্দ উল্লাস করছি। সারাদিন আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে বেড়াব। অনেক খাওয়া দাওয়া হবে। অনেক মজা করব সবাই মিলে।

জয়া ত্রিপুরা জানান, আমাদের জন্য এটি অনেক বড় উৎসব। সবাই মিলে আনন্দে মেতে উঠেছি সকাল থেকে। আজ সারাদিন বন্ধুদের নিয়ে ঘুরব। সবার বাড়িতে গিয়ে গান করব। আনন্দ উল্লাসে দিন কাটাব। দুপুর বেলায় প্রতিটি চার্চে মধ্যাহ্নভোজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নির্বিঘ্নে বড়দিন উদযাপনে জেলা উপজেলার সব চার্চ ও গির্জায় আনন্দ উল্লাস করবে সবাই। 

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom