বাংলাদেশে হস্তক্ষেপ করছে যুক্তরাষ্ট্র : প্রেস টিভি

বাংলাদেশে হস্তক্ষেপ করছে যুক্তরাষ্ট্র : প্রেস টিভি

প্রথম  নিউজ, ডেস্ক : বাংলাদেশের আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন দেশে আলোচনা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানেও। চীন-রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র বলে পরিচিত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম প্রেস টিভির এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের নির্বাচন এবং যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে।


শুক্রবার (০৭ জুলাই) প্রেস টিভিতে প্রচারিত একটি অনুষ্ঠানের শিরোনাম ছিল ‌‌‘বাংলাদেশে হস্তক্ষেপ করছে যুক্তরাষ্ট্র’। অনুষ্ঠানের শুরুতেই যুক্তরাষ্ট্রকে তীব্র আক্রমণ করেন অনুষ্ঠানটির উপস্থাপক। সে সময় তিনি বলেন, বিশ্বজুড়ে তথাকথিত গণতন্ত্রের নামে নিজ দেশের স্বার্থে অন্য দেশের সরকার পরিবর্তনের ইতিহাস রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিষয়টি সংসদে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, তারা (যুক্তরাষ্ট্র) গণতন্ত্র হরণের চেষ্টা করছে। তারা এমন একটি সরকার আনতে চাইছে যাদের গণতান্ত্রিক ভিত্তি নেই। এমনটি করা হলে তা অগণতান্ত্রিক হবে।

কিউবা, হাওয়াই সহ বেশকিছু ক্যারিবিয়ান দেশের সরকারকে হটানোর ইতিহাস রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। এক্ষেত্রে দেশটি তার গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র সহায়তা নেয় উল্লেখ করে বলা হয়, অন্য দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের এসব হস্তক্ষেপের নেপথ্যে বিভিন্ন বিষয় কাজ করে। দেশটি বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং মানবাধিকার রক্ষার নামে এসব করে থাকে।


বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ রয়েছে দাবি করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ওয়াশিংটন নিজ স্বার্থে দেশটির গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত এবং এগুলোর ওপর হস্তক্ষেপ করার মাধ্যমে মূল্যবান সম্পদ, বাণিজ্য রুট, কৌশলগত অবস্থানকে ব্যবহার করতে চায়।

এর আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন সম্প্রতি ঘোষণা দেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কেউ বাধা হয়ে দাঁড়ালে তাকে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হতে হবে। বাইডেন-হ্যারিস প্রশাসনের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু নিজেও ‘বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের প্রচারণার’ বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেন।

এ বিষয়টিকে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রসহ চার দেশের কূটনীতিকের ওপর থেকে অতিরিক্ত নিরাপত্তা তুলে নেওয়ার প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে বলেছিলেন, দেশটি (যুক্তরাষ্ট্র) তাকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। বাংলাদেশ ছাড়াও এর আগে বিভিন্ন দেশের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে নাক গলাতে দেখা যায়।


ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়া ট্যুডের এক বিশ্লেষণেও বলা হয় যে, ঐতিহাসিকভাবেই বিভিন্ন দেশের সরকার পরিবর্তনে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টতার নজির রয়েছে। আগে তারা এ ধরনের কাজে সরাসরি যুক্ত ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এবং ১৯৪৭ সালে সিআইএ প্রতিষ্ঠার পর এ ধরনের কাজ বেশ গোপনীয়তার মধ্যেই হচ্ছে। ১৯৫৩ সালে ইরানে, ১৯৫৪ সালে গুয়েতেমালায় এবং ১৯৬৩ সালে ভিয়েতনামে একই ধরনের চিত্র দেখা যায়।

তবে একটি মাত্র কারণের ওপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্রকে কোনো দেশে হস্তক্ষেপ করতে দেখা যায়নি। যদিও আপাতদৃষ্টিতে মানবাধিকার লঙ্ঘন বা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বিষয়গুলো বলা হচ্ছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে অন্তর্নিহিত কারণ আসলে মার্কিন স্বার্থ। অতীতেও প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশে যুক্তরাষ্ট্রকে জটিল ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে।

স্নায়ুযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন আধিপত্য বিস্তারের জন্য তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জড়িয়ে পড়ে। সে সময় সোভিয়েত জোট ভারতকে মোকাবিলা করতে পাকিস্তানের মতো দেশগুলোকে সমর্থন করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।

এদিকে নির্বাচনের দিকে নজর রেখে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কর্মকর্তারা ঘনঘন বাংলাদেশে আসছেন। বৈশ্বিক আর্থিক ঝুঁকি বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক মূলত চীনকে কাউন্টার করতে দেশটির ইচ্ছারই প্রতিফলন। বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন ‘পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ’ এবং ‘রিজিওনাল ডায়নামিক’ নির্ধারণ করবে।